চর্চায়: ডেভিড ওয়ার্নার ও বিরাট কোহালির এই ছবি কি দেখা যাবে আইপিএলে? অস্ট্রেলিয়া থেকে উঠছে অন্য সুর।
আচমকাই অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন তারকাদের রোষের মুখে পড়ল আইপিএল। অ্যালান বর্ডার থেকে ইয়ান চ্যাপেল, হঠাৎই সরব এই প্রশ্ন নিয়ে যে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাতিল করে কোনও ভাবেই যেন আইপিএল আয়োজনকে গুরুত্ব না দেওয়া হয়। এবং দেওয়া হলেও অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারেরা যেন সেই উস্কানিতে প্রভাবিত না হন।
এ বারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হওয়ার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়াতেই। তাই বিশ্বকাপ বাতিল হয়ে আইপিএল হওয়া মানে অস্ট্রেলিয়ার ক্ষতি, ভারতের লাভ। ইডেনে সাতাশি বিশ্বকাপজয়ী বর্ডার তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে বলেছেন, ‘‘আইপিএলে টাকার প্রলোভন ছাড়া কিছুই নেই। কোনও ভাবেই যেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে উপেক্ষা করে আইপিএলের জন্য দরজা খোলা না হয়।’’ বর্ডারের এমন প্রতিক্রিয়ার কারণ, কয়েক দিন ধরেই জল্পনা শুরু হয়েছে, করোনাভাইররাস এবং লকডাউনের জেরে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে অস্ট্রেলিয়ায় কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপ বাতিল হয়ে যেতে পারে। আর তা হলে নভেম্বরের দিকে আইপিএল করার দরজা খুলে যেতে পারে ভারতীয় বোর্ডের সামনে। যদিও ভারতীয় বোর্ডের পক্ষ থেকে কেউ এমন ইঙ্গিত এখনও পর্যন্ত দেননি।
বর্ডার এই প্রস্তাব নিয়ে উত্তেজিত ভাবে বলে দিচ্ছেন, ‘‘আমি একেবারেই এর পক্ষে নই। যদি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ না হতে পারে তা হলে আইপিএল কেন হবে? কী ভাবে হবে? বিশ্বকাপ অনেক বড় ব্যাপার। প্রত্যেক দেশের বোর্ডের উচিত, তাদের ক্রিকেটারেরা বিশ্বকাপ বন্ধ করার পক্ষে সায় দিয়ে যেন আইপিএল খেলতে না ছোটে। যদি তেমন হয়, এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত বোর্ডগুলির।’’
বিরোধী: আইপিএল নিয়ে প্রশ্ন বর্ডার (বাঁ দিকে) ও চ্যাপেলের।
বর্ডারের মতোই আইপিএলের বিরোধী স্লোগান তুলেছেন আর এক প্রাক্তন তারকা অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেল। তিনি বলেছেন, এই মুহূর্তে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের উচিত আইপিএলের চেয়ে নিজেদের দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটকে প্রাধান্য দেওয়া। অক্টোবর-নভেম্বরে আইপিএল হওয়া মানে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে শেফিল্ড শিল্ড এবং ওয়ান ডে কাপের সঙ্গেও দিনক্ষণ নিয়ে সঙ্ঘাত হবে। ১৩ জন তারকা অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার খেলেন আইপিএলে। এ বারের নিলামে সব চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া ক্রিকেটারও অস্ট্রেলীয়। প্যাট কামিন্সকে আকাশছোঁয়া ১৫.৫ কোটি টাকায় কেনে কলকাতা নাইট রাইডার্স। কামিন্সরা নভেম্বরে আইপিএলে এলে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস অতিমারির সময়ে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ড আরও বেশি ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।
ইয়ান চ্যাপেলের স্পষ্ট কথা, ‘‘অস্ট্রেলিয়ার প্রধান ক্রিকেটারদের আর্থিক দিক থেকে খুবই যত্ন নিচ্ছে আমাদের দেশের বোর্ড। তা হলে ওদেরও তো কিছু দায়বদ্ধতা থাকবে নিজের দেশের বোর্ডের প্রতি।’’ নিজে খেলার সময়ে ক্রিকেটারদের দাবিদাওয়া নিয়ে সরব থাকা ইয়ান যোগ করছেন, ‘‘অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ড থেকে কম টাকা আয় করে এমন কেউ যদি নিজেদের দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট ছেড়ে আইপিএল খেলতে যায়, তার প্রতি আমার সহানুভূতি থাকবে। তার কারণ, আইপিএলের টাকাতেই হয়তো তার চলছে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার প্রধান ক্রিকেটারদের তো বেশ ভাল পরিমাণ অর্থ দিচ্ছে অস্ট্রেলীয় বোর্ড। তাই ওদের আনুগত্য সব সময় অস্ট্রেলিয়ার প্রতি থাকা উচিত।’’
করোনাভাইরাস-উত্তর ক্রিকেটে ভারতীয় বোর্ডের পেশিশক্তি যে আরও বেড়ে যেতে পারে, তা অনেকেই বলছেন। ইতিমধ্যেই অনেক দেশের বোর্ড চাইছে বিরাট কোহালিরা এসে তাঁদের দেশে খেলুন, কারণ ভারত খেলা মানেই সেই সিরিজ থেকে কোষাগার ভরার সম্ভাবনা প্রবল। দক্ষিণ আফ্রিকা সেই ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। বর্ডার যদিও মনে করছেন, বিশ্বকাপের চেয়ে যদি আইপিএল প্রাধান্য পায়, তা ক্রিকেটের পক্ষে মঙ্গলজনক হবে না। যদিও অস্ট্রেলিয়ায় যে বিশ্বকাপ এ বছর হওয়ার কথা ছিল, তা আইপিএলের মতোই কুড়ি ওভারের। ‘‘বিশ্বকাপ বন্ধ করে যদি আইপিএলকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, তার অর্থ হবে অন্যদের জন্য দরজা বন্ধ করে দিয়ে ভারতের শাসনকেই শুধু গুরুত্ব দেওয়া।’’ সঙ্গে যোগ করতে ভুলছেন না, ‘‘তবে এটাও ঠিক যে, এই মুহূর্তে ক্রিকেটে আশি শতাংশ টাকা আনে ভারত। আইসিসি-র লভ্যাংশের সিংহ ভাগ আসে ওদের থেকেই। তাই ওদের বক্তব্য সব চেয়ে শক্তিশালী হলে অবাক হওয়ারও নেই।’’ বর্ডার এর পরেও মনে করিয়ে দিতে চান, বিশ্বকাপ বন্ধ হয়ে আইপিএল আয়োজন করার চেষ্টা হলে, তা ক্রিকেটের পক্ষে মঙ্গলজনক বার্তা বহন করবে না। ‘‘বিশ্বকাপ একটা আন্তর্জাতিক সূচি। সেটা বন্ধ করে একটি দেশের টুর্নামেন্টকে গুরুত্ব দিলে ঠিক সিদ্ধান্ত হবে না,’’ বলছেন তিনি।
বল পালিশের ক্ষেত্রে অনিল কুম্বলের নেতৃত্বে আইসিসি ক্রিকেট কমিটি থুতু বা লালার ব্যবহার বন্ধের সুপারিশ করেছে। বর্ডার মনে করেন, কৃত্রিম পদার্থ দিয়ে বল পালিশ করার নিয়মকে আইনসিদ্ধ করা উচিত। ‘‘ঘাম এবং থুতু ছাড়াও অন্য কিছু দিয়ে বল পালিশ করার প্রক্রিয়াকে স্বীকৃতি দিতেই হবে।’’ এখনকার নিয়ম অনুযায়ী, বাইরের কোনও কৃত্রিম পদার্থ দিয়ে বল পালিশ করার প্রয়াস বল-বিকৃতির আওতায় পড়ে। বলে ভেজলিন বা জেলি লাগিয়ে চকচকে রাখা, ছিপি বা নখ দিয়ে সেলাই তুলতে গেলে বল-বিকৃতির দায়ে শাস্তি পেতে হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy