Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Surojit Bose

শরীরে বাসা বেঁধেছে ক্যানসার, এমসে ভর্তি আইলিগজয়ী সুরজিৎ বসু

মাহিন্দ্রার আই লিগ জয়ী (২০০৫-’০৬) দলের সদস্য ছিলেন সুরজিৎ। পরের বছর মোহনবাগানের জার্সিতে জিতেছেন ফেডারেশন কাপ।

অচেনা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়ছেন সুরজিৎ। ছবি— সোশ্যাল মিডিয়া।

অচেনা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়ছেন সুরজিৎ। ছবি— সোশ্যাল মিডিয়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২০ ১৭:৪৬
Share: Save:

তাঁর বল রিসিভিং, বিলুপ্তির পথে প্রায় চলে যাওয়া ঠিকানা লেখা ফাইনাল পাসের প্রশংসা এখনও করেন প্রাক্তন সতীর্থরা। ১৪ বছর আগে অধুনা অবলুপ্ত মাহিন্দ্রা ইউনাইটেডের জার্সিতে তিনি ফুল ফুটিয়েছিলেন। ভারতীয় ফুটবলের সেরা দুই বিদেশি হোসে রামিরেজ ব্যারেটো, ইউসুফ ইয়াকুবুর জন্য গোলের গন্ধ মাখা পাস বের হতো তাঁর পা থেকে। সেই সুরজিৎ বসুর শরীরে থাবা বসিয়েছে ক্যানসার। দিল্লির এমসে চিকিৎসা চলছে কলকাতা ময়দানের পরিচিত ‘বাজু’র। আজ, সোমবার থেকে শুরু হয়েছে তাঁর কেমোথেরাপি।

রবিবার রাতে আনন্দবাজার ডিজিটালকে তিনি বললেন, “খেলার সময়ে দু’প্রান্ত থেকে বল ভেসে এলে যেমন হেড করতাম, ভলি মারতাম, সেই একই মানসিকতা নিয়ে আমি যুদ্ধে নেমে পডেছি।” কথা বলার সময়ে শান্ত গলায় উত্তেজনার আঁচ ছড়িয়ে পড়ছিল। সবুজ গাল‌চেতে প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ভাঙা তাঁর কাছে অনেক সহজ, সেই রাস্তাটাও চেনা। কিন্তু ব্লাড ক্যানসারের বিরুদ্ধে এই লড়াইটা যে সম্পূর্ণ অচেনা-অজানা।

এই লড়াইয়ে সুরজিতের পাশে সাক্ষাৎ ঈশ্বর হয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন চিকিৎসক অভিজিৎ কুমার। জাতীয় দলের প্রাক্তন ফুটবলার সুরজিৎ বলছিলেন, ‘‘অভিজিৎ কুমার আমার কাছে ঈশ্বর। আমাকে এমসে ভর্তি করেন অভিজিতই।’’

আরও পড়ুন: ‘কোলে সরফরাজের ছেলে, ওই একটা ছবিই ধোনিকে পাকিস্তানে জনপ্রিয় করে তুলেছিল’

মাহিন্দ্রার আই লিগ জয়ী (২০০৫-’০৬) দলের সদস্য ছিলেন সুরজিৎ। পরের বছর মোহনবাগানের জার্সিতে জিতেছেন ফেডারেশন কাপ। তাঁর প্রাক্তন সতীর্থ তথা জাতীয় দলের প্রাক্তন গোলকিপার সন্দীপ নন্দী বলছিলেন, ‘‘সে বার মাহিন্দ্রায় একসঙ্গে অনেক বাঙালি ফুটবলার ছিল। আমি ছিলাম ওদের মধ্যে সিনিয়র। সুরজিতের খেলা আমার খুব ভাল লাগত। সে বার কোচ ডেরেক পেরেরা উইথড্রয়াল স্ট্রাইকার হিসেবে খেলিয়েছিল সুরজিতকে। সবক’টা ম্যাচ খেলেছিল ও। মাহিন্দ্রা সে বার চ্যাম্পিয়ন হয়। ছেলেটা এখন কষ্ট পাচ্ছে। খুবই খারাপ লাগছে।’’

কর্কট রোগের রেশ ছড়িয়ে পড়েছে সুরজিতের শরীরে। আগের থেকে অনেকটাই শীর্ণ হয়েছে তাঁর শরীর। যে পা একসময়ে বলকে কথা বলাত, সেই পা-ই ফুলে গিয়েছিল। লকডাউনের মধ্যে এক দিন বল পায়ে নেমে পড়েছিলেন। তার পরেই শরীরে অস্বস্তি অনুভব করেন। কল্যাণীর ছেলে বলছিলেন, ‘‘বেশ কয়েক দিন ধরেই জ্বর আসছিল। শরীরে নানা রকম সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা আমাকে কাবু করে দিয়েছিল। একটা কাজে আমাকে দিল্লি আসতে হয়। এখানে আসার পরে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ি। সেই সময়ে অভিজিৎ কুমার আমার কাছে ত্রাতা হিসেবে আসেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে এখন আগের থেকে ভাল আছি। পা ফোলা অনেকটা কমেছে। জ্বরটাও কমেছে।’’

মাহিন্দ্রা, মোহনবাগান, ইউনাইটেড, মহমেডান স্পোর্টিং-সহ একাধিক ক্লাবের জার্সিতে খেলা সুরজিৎ বেশ কয়েক দিন আগেই ফুটবল থেকে সরে গিয়েছেন। ইদানীং কল্যাণী এবং পুণের অ্যাকাডেমিতে কোচিং করাতেন। তিনি বলছিলেন, “যখন খেলতাম তখন রোজগার করেছি। আমি তো চাকরি করি না। কোচিং করাচ্ছিলাম। এর মধ্যেই এই রোগটা ধরা পড়ল। চিকিৎসকরা বলেছেন আপাতত ১০টা কেমো নিতে হবে। দিল্লিতে থেকেই আপাতত চিকিৎসা করতে হবে। প্রচুর টাকার দরকার। আমার অসুস্থতার খবর শুনে এগিয়ে এসেছে দিল্লি মেরিনার্স, প্লেয়ার্স ফর হিউম্যানিটি। সুভাষ ভৌমিক প্রতি দিন আমাকে ফোন করেন। আমি কিন্তু লড়াই থেকে সরে যাওয়ার বান্দা নই।” ফুটবল মাঠে প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কাড়ার সময়ে যে রকম লড়াকু মানসিকতার পরিচয় দিতেন, সেই রকমই দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বললেন তিনি।

ইউনাইটেড স্পোর্টসে সুরজিতের সতীর্থ ছিলেন ডেনসন দেবদাস। প্লেয়ার্স ফর হিউম্যানিটির তরফে ১১ বছর পরে বাংলাকে সন্তোষ ট্রফি এনে দেওয়ার কাণ্ডারী ডেনসন বলছিলেন, “কেমো, ইঞ্জেকশন, ব্লাড ট্রান্সফিউশন মিলিয়ে এক মাসে চিকিৎসার খরচ প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। প্লেয়ার্স ফর হিউম্যানিটি বাজুর পাশে রয়েছে। ওর চিকিৎসার খরচ বহন‌‌ করবে।’’

আরও পড়ুন: ‘ধোনিই ভারতের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক’

অচেনা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য দরকার আরও অর্থ। তার সংস্থান হবে কী করে? ভ্রাতৃসম সুরজিতের জন্য সন্দীপের আহ্বান, ‘‘এই লড়াই বাজুর একার নয়। ওর পাশে আজ সবার থাকা দরকার। আশা রাখি, বাজুর পাশে এসে দাঁড়াবেন সবাই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Surojit Bose Mohun Bagan Mahindra United Cancer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy