সুনীল ছেত্রী। — ফাইল চিত্র।
১৯ বছর ধরে জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন সুনীল ছেত্রী। ১৫০ বার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়ে মাঠে নেমেছেন। সেই যাত্রাপথ যুবভারতীতে শেষ হতে চলেছে ৬ জুন। কুয়েতের বিরুদ্ধে শেষ বার দেশের জার্সিতে মাঠে নামবেন। তার আগে ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে হাজির হয়ে জানালেন, একা একা সুনীল ছেত্রী হয়ে ওঠেননি তিনি। সুনীল ছেত্রী হিসাবে পরিচয় পাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে অনেক মানুষের অবদান।
গত দু’দিন ধরে প্রবল ব্যস্ত তিনি। অবসরের কথা ঘোষণা করার পর থেকেই ফোন থামছে না। নিজেই বললেন, গত কয়েক ঘণ্টায় ৬৮৮টা মিস্ড কল রয়েছে। বিরক্ত হয়ে ফোন বন্ধ করে দিয়েছেন। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত হয়ে নানা মুডে ধরা দিলেন সুনীল। কখনও কৃতজ্ঞতা জানালেন পরিবারকে, কখনও সতীর্থদের কথা তুলে ধরলেন, কখনও ১০০ গোল না পাওয়া নিয়ে কথা বললেন। তবে এক বারও সুনীলের গলা ধরে আসেনি। এক ঘণ্টার উপর কথা বললেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। প্রতিটি মুহূর্তেই তাঁর গলায় প্রত্যয়।
আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, কী করে সুনীল ছেত্রী হয়ে ওঠা যায়? আগামী দিনে কোনও খুদে যদি সুনীল ছেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখে তা হলে কী করবে? সেই প্রশ্নের উত্তরেই সুনীল তুলে আনলেন নিজের পরিবার, স্ত্রী, কোচ, সতীর্থদের কথা। জানালেন, একা একা যেমন সুনীল ছেত্রী হওয়া যায় না, তেমনই কঠোর পরিশ্রমও দরকার।
সুনীলের কথায়, “আমার জীবনটা হয়তো ১০ ঘণ্টার একটা সিনেমা। অনেক চরিত্র। দারুণ পরিবার, দারুণ পরিবেশ, অসাধারণ স্ত্রী, দুর্দান্ত কয়েক জন বন্ধু, চমৎকার কিছু দল যাদের বিরুদ্ধে খেলেছি, অসাধারণ কয়েক জন কোচ যাঁদের অধীনে খেলেছি। আজ পর্যন্ত যা যা অর্জন করেছি তার নেপথ্যে প্রচুর মানুষ অনেক পরিশ্রম করেছেন।”
সুনীলের সংযোজন, “আমি কোনও বিদায়ী ভাষণ দিচ্ছি না বা কাউকে খুশি করার জন্য কথাগুলো বলছি না। এটাই সত্যি। আজ আমি যা, তার জন্য পর্দার আড়ালে প্রচুর মানুষ অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। যদি আমার সাফল্যের কারণ জানতে চান তা হলে বলব, কঠোর পরিশ্রম, শরীরে কেবি ছেত্রী এবং সুশীলা ছেত্রীর (সুনীলের বাবা-মা) জিন থাকা সাহায্য করেছে। সেই সঙ্গে অসাধারণ দল, সতীর্থ সবাই আপ্রাণ সাহায্য করেছে।”
এই মুহূর্তে সুনীল দাঁড়িয়ে ৯৪ গোলে। বিশ্বের সক্রিয় ফুটবলারদের মধ্যে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় তৃতীয় স্থানে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এবং লিয়োনেল মেসির পরেই। কিন্তু পরের ম্যাচে অবসর নেওয়ায় হয়তো গোলের ‘সেঞ্চুরি’ সম্ভব নয়। সুনীল বললেন, “১০০ গোল না করার জন্য কোনও আক্ষেপ নেই। আমি তো কোনও দিন ভাবিনি এত গোল করতে পারব। দেশের হয়ে ১৯ বছরে ১৫০টা ম্যাচ খেলতে পেরে কৃতজ্ঞ। ৯৪টা গোল করাও কম কথা নয়। তাই ১০০ ছুঁতে না পেরে কোনও দুঃখ নেই।” সুনীল জানালেন, কিরঘিজস্তানের বিরুদ্ধে গোলটি তাঁর কাছে এখনও পর্যন্ত সেরা। তবে ১০ দিন পরেই হয়তো অন্য কোনও গোলের কথা বলতে পারেন।
অবসরের পর এখনই কোচিংয়ে আসার কোনও ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন সুনীল। ৭ জুন থেকে দিনটা কেমন যেতে চলেছে তাঁর কাছে? হাসতে হাসতে সুনীলের উত্তর, “আগের দিন ম্যাচ খেলার পর ওই দিন রিকভারি। হয়তো সে দিন খুব কাঁদব। তার পরের দিন থেকে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে চাই। জুলাই থেকে বেঙ্গালুরুর সঙ্গে প্রাক্-মরসুম প্রস্তুতি শুরু হবে।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বললেন, “বেঙ্গালুরুর হয়ে আরও এক বছর খেলব। তার পর কী হবে জানি না। যতটা পারব পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাব। ওরা যত দিন আমায় সহ্য করতে পারবে তত দিন আছি। তার পরে ফুটবলের জন্য কিছু করা যায় কি না ভাবব। এখনই কোচ হওয়া বা ফুটবল সংক্রান্ত কোনও কাজের ইচ্ছা নেই। কোচের কাজ ফুটবলারের থেকে ১০ গুণ বেশি।”
ভারতের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলার স্মৃতি এখনও সুনীলের কাছে উজ্জ্বল। অনেক ভাল স্মৃতি যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে খারাপ স্মৃতিও। সে রকমই একটি প্রসঙ্গে সুনীল বললেন, “এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন করতে না পারা এখনও তাড়া করে বেড়ায় আমাকে। মায়ানমারের বিরুদ্ধে আমি এবং গোটা দল খুব খারাপ খেলেছিলাম। এখন যখন এই কথাটা বলছি তখনও নিজের উপরে খুব রাগ হচ্ছে।”
অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যে অনেক মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে সেটাও জানিয়েছেন সুনীল। তাঁর কথায়, “নিজের মধ্যেই একটা লড়াই চলছিল। সব বিচার করে দেখেছি। উদার মনে ভাবার চেষ্টা করছিলাম। তবে মনের ভেতরে যখন অবসরের ভাবনা চলে এল তখন আর অন্য কিছু ভাবিনি। সেই সময় শুধু নিজের কথা ভাবছিলাম। অনেকে স্বার্থপর ভাবতে পারেন। কিন্তু সময় নিয়ে ভাবার পর বুঝেছিলাম আমি ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
অবসরের বিষয়টি নিজের পরিবার বাদে আরও এক জনকে জানিয়েছিলেন সুনীল। তিনি বিরাট কোহলি। সে প্রসঙ্গে সুনীল বলেছেন, “বিরাটের সঙ্গে কথা হয়েছিল। এখন আমরা একে অপরের ঘনিষ্ঠ। আমি ঠিক কাজ করতে চলেছি কি না সেটা বোঝার জন্য ও সঠিক মানুষ। খেলার মধ্যে যে উত্থান-পতন রয়েছে, সেটা আমরা দু’জনেই একই ভাবে বুঝতে পারি।”
অবসর নিলে অনেক কিছু মিস্ করবেন সুনীল। নিজেই জানিয়েছেন, জাতীয় দলের প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত যা যা করেছেন, তার অনেক কিছুই মনে আছে। জাতীয় সঙ্গীত, ম্যাচের আগে মাঠের পরিবেশ, সতীর্থদের সঙ্গে কথা, এমনকি প্রাতরাশ থেকে আইস বাথ পর্যন্ত সব কিছুই বার বার মনে পড়বে তাঁর।
একদম শেষে সুনীল অনুরোধ করেছেন, শেষ ম্যাচে তাঁর দলকে সমর্থন করার জন্য। বলেছেন, “অবসর নেওয়ার জন্য কলকাতার থেকে ভাল জায়গা হয় না। তবে কলকাতায় খেলে অবসর নেব এটা কখনও ভাবিনি। এটা স্রেফ কাকতালীয়। যুবভারতী একটা অসাধারণ স্টেডিয়াম। সমর্থকদের কথা নতুন করে কী-ই বা বলব! ৬ জুন দিনটা খুব স্মরণীয় হতে চলেছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy