ইউরো জিতে ট্রফি হাতে উল্লাস স্পেনের ফুটবলারদের। ছবি: রয়টার্স।
রবিবার সন্ধ্যায় উইম্বলডনের ফাইনালে নোভাক জোকোভিচকে স্ট্রেট সেটে হারিয়ে কার্লোস আলকারাজ় জানিয়েছিলেন, নিজের কাজ করেছেন তিনি। এ বার দায়িত্ব স্পেনের ফুটবল দলের। আলকারাজ়ের কথা রাখলেন নিকো উইলিয়ামস, লেমিনে ইয়ামালেরা। লন্ডন থেকে ১১০০ কিলোমিটার দূরে জার্মানির বার্লিনে ইংল্যান্ডকে হারিয়েই ইউরো চ্যাম্পিয়ন হল স্পেন। ১২ বছর পরে আবার ইউরোপের সেরা দেশ হল তারা। চার বার ইউরো জিতল স্পেন। আরও এক বার ফাইনালে উঠে হারল ইংল্যান্ড। গত বার ঘরের মাঠে হারতে হয়েছিল ইটালির কাছে। এ বার স্পেন স্বপ্নভঙ্গ করল হ্যারি কেনদের। এখনও প্রথম ইউরোর জন্য অপেক্ষা করতে হবে তাঁদের।
ইউরো ফাইনালে ৪-২-৩-১ ছকে খেলতে নেমেছিল স্পেন। তাদের পরিচিত ছক। স্পেনের বিরুদ্ধে ৩-৪-২-১ ছকে নেমেছিল ইংল্যান্ড। তিন জন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারে শুরু করলও কয়েক মিনিটের মধ্যে বদলে যায় ইংল্যান্ডের ছক। স্পেনের লাগাতার আক্রমণের চাপে ৪-৪-২ ছকে চলে যায় ইংল্যান্ড। অর্থাৎ, গোলরক্ষকের সামনে চার জন। তাদের সামনে আরও চার জন। স্পেন যখন আক্রমণে উঠছিল, তখন ইংল্যান্ডের আট জন রক্ষণে নেমে যাচ্ছিলেন। শুধুমাত্র হ্যারি কেন ও জুড বেলিংহ্যাম সামনে ছিলেন।
শুরু থেকেই স্পেনের পায়ে ছিল বল। নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাস খেলে দুই প্রান্ত ধরে আক্রমণে উঠছিল তারা। বাঁ প্রান্তে উইলিয়ামস ও কুকুরেয়া এবং ডান প্রান্তে ড্যানি কার্ভাহাল ও ইয়ামাল আক্রমণ তুলে আনার দায়িত্বে ছিলেন। প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যে উইলিয়ামস দু’বার ইংল্যান্ডের বক্সে ঢুকে পড়েন। কিন্তু গোল করতে পারেননি। সেই সময় পুরো রক্ষণাত্মক হয়ে পড়েছিল ইংল্যান্ড। বেশির ভাগ সময়টাই খেলা হচ্ছিল ইংল্যান্ডের অর্ধে। স্পেনের সব আক্রমণ শুরু হচ্ছিল রদ্রি ও ফাবিয়ান রুইজ়ের পা থেকে।
১৫ মিনিটে প্রথম আক্রমণ তুলে আনে ইংল্যান্ড। ডান প্রান্ত ধরে ওঠেন কাইল ওয়াকার। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। তবে কিছুটা হলেও খেলায় ফেরে ইংল্যান্ড। বেশি বল পেতে শুরু করেন বেলিংহ্যামেরা। বেশি ক্ষণ অবশ্য সেই পরিস্থিতি থাকেনি। আবার আক্রমণ শুরু করে স্পেন। ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারেথ সাউথগেট রক্ষণাত্মক পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছিলেন। স্পেনের ফুটবলারদের পায়ে বল থাকলেও ডিফেন্স চেরা পাস দেওয়ার জায়গা দিচ্ছিল না ইংল্যান্ড। গোলের সামনে ফুটবলার বাড়িয়ে স্পেনকে আটকে রেখেছিল তারা। প্রথমার্ধে সেই পরিকল্পনা কাজেও লেগে যায়। ৪৫ মিনিটের মাথায় ভাল সুযোগ পায় ইংল্যান্ড। ডান প্রান্ত ধরে ডেকলান রাইসের ফ্রিকিক ধরে শট মারেন ফিল ফোডেন। প্রথম পোস্টে ঠিক জায়গায় ছিলেন স্পেনের গোলরক্ষক উনাই সিমোন। বল ধরে নেন তিনি। গোলশূন্য অবস্থায় বিরতিতে যায় দু’দল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে একটি বদল করেন স্পেনের কোচ লুই দে লা ফুয়েন্তে। রদ্রিকে তুলে নিয়ে মার্টিন জুবিমেন্ডিকে নামান তিনি। সেই পরিবর্তনে কিছুটা হলেও পরিকল্পনা গুলিয়ে যায় ইংল্যান্ডের। তার ফল পায় স্পেন। দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর ১ মিনিট ১১ সেকেন্ডের মাথায় গোল করে স্পেনকে এগিয়ে দেন উইলিয়ামস। কার্ভাহাল বুটের ডগা দিয়ে বল বাড়ান ইয়ামালকে। ডান প্রান্তে বল ধরে ভিতরে ঢোকেন ইয়ামাল। তিনি বল বাড়ান অরক্ষিত অবস্থায় থাকা উইলিয়ামসকে। তাঁর বাঁ পায়ের শটে পরাস্ত হন ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক জর্ডন পিকফোর্ড। দুই তরুণ ফুটবলারেরা পায়ে ইউরোর ফাইনালে এগিয়ে যায় স্পেন। এই গোলের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের রক্ষণেরও দোষ ছিল। উইলিয়ামসকে কেউ লক্ষ্যই করেননি। ফাঁকায় বল পেয়ে গোল করেন তিনি।
পরের কয়েক মিনিট স্পেনের আক্রমণের গতি আরও বাড়ে। পর পর সুযোগ তৈরি করতে থাকে তারা। ৫০ মিনিটের মাথায় ড্যানি অলমোর শট পোস্টের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। ৫৫ মিনিটে গোল করার সহজ সুযোগ ফস্কান স্পেনের অধিনায়ক আলভারো মোরাতা। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করে ইংল্যান্ড। ৬০ মিনিটের মাথায় কেনকে তুলে নেন সাউথগেট। যত ক্ষণ মাঠে ছিলেন দেখাই যায়নি কেনকে। তাই তাঁর বদলে সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের নায়ক অলি ওয়াটকিন্সকে নামান তিনি। ৬৩ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে ভাল শট মারেন বেলিংহ্যাম। কিন্তু বল গোলে রাখতে পারেননি তিনি।
এগিয়ে গেলেও আক্রমণের ধার কমায়নি স্পেন। তারা জানত, বেশি রক্ষণাত্মক হয়ে পড়লে দল চাপে পড়ে যেতে পারে। ৬৭ মিনিটের মাথায় অলমোর পাস ধরে বক্সে ঢুকে দ্বিতীয় পোস্টে বল রাখার চেষ্টা করেন ইয়ামাল। ঝাঁপিয়ে বল বার করেন পিকফোর্ড। নইলে সেমিফাইনালের পরে ফাইনালেও গোল করে ফেলতেন ইয়ামাল।
দু’দলই গোল করার চেষ্টা করছিল। ইংল্যান্ডের লক্ষ্য ছিল সমতা ফেরানোর। স্পেন চেষ্টা করছিল ব্যবধান বাড়াতে। ফলে কিছুটা হলেও ওপেন হয়ে যায় খেলা। অনেক বেশি সুযোগ তৈরি হতে থাকে। ৭৩ মিনিটের মাথায় সমতা ফেরায় ইংল্যান্ড। আরও এক জন পরিবর্ত ফুটবলার হাসি ফোটান সমর্থকদের মুখে। ৭০ মিনিটের মাথায় নেমেছিলেন কোল পামার। বুকায়ো সাকা ও বেলিংহ্যামের পা হয়ে বল আসে তাঁর কাছে। বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের মাটি ঘেঁষা শটে সিমোনকে পরাস্ত করেন পামার। গোল খেয়ে কিছুটা হলেও চাপে পড়ে স্পেন। তার সুযোগ তোলার চেষ্টা করে ইংল্যান্ড। প্রথমার্ধের রক্ষণাত্মক ফুটবল ছেড়ে পুরোপুরি আক্রমণে ওঠে তারা। পরিবর্ত ফুটবলারেরা নজর কাড়ছিলেন।
৮১ মিনিটের মাথায় আবার ইংল্যান্ডকে বাঁচান পিকফোর্ড। বক্সের মধ্যে থেকে শট মেরেছিলেন ইয়ামাল। কিন্তু পিকফোর্ডকে পরাস্ত করতে পারেননি তিনি। দু’দলই জানত, এই সময় গোল খেলে ফিরে আসা কঠিন হবে। তাই আক্রমণ করলেও রক্ষণ সামলে রেখেছিল তারা। খেলা ধীরে ধীরে অতিরিক্ত সময়ের দিকে এগোচ্ছিল।
৮৬ মিনিটের মাথায় স্পেনকে এগিয়ে দেন পরিবর্ত হিসাবে নামা মিকেল ওয়্যারজ়াবাল। বাঁ প্রান্ত ধরে ওঠেন কুকুরেয়া। তিনি বল বাড়ান বক্সে। ডিফেন্ডারের আগে বলে পা লাগান ওয়্য়ারজ়াবাল। পিকফোর্ডকে পরাস্ত করে গোল করেন তিনি। গোল শোধ করার অনেক চেষ্টা করে ইংল্যান্ড। শেষ দিকে গোললাইন সেভ করেন অলমো। আর ফিরতে পারেনি ইংল্যান্ড। আরও এক বার হেরে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy