যুযুধান: পর্তুগালের ভরসা রোনাল্ডো। ফ্রান্সের তুরুপের তাস এমবাপে। ফাইল চিত্র Sourced by the ABP
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো বনাম কিলিয়ান এমবাপে— ফুটবলের মঞ্চে তাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু মাঠের বাইরে সি আর সেভেনের ভক্ত ফরাসি তারকা। দুই মহাতারকার জীবনেও আশ্চর্য মিল।
রোনাল্ডোকে পৃথিবীর আলো দেখাতেই চাননি মা মারিয়া স্যান্টোস ডলোরেস। প্রবল আর্থিক সঙ্কটে চেয়েছিলেন গর্ভপাত করাতে। সংসার চালাতেন পরিচারিকার কাজ করে। প্যারিস কুখ্যাত অঞ্চল বন্ডিতে জন্ম এমবাপের। সেখানে শিশুদের হাতে বইয়ের বদলে থাকে আগ্নেয়াস্ত্র। আঁধার থেকে আলোয় ফিরতে এনগোলো কান্তে, পল পোগবাদের মতো এমবাপেও হাতিয়ার
করেছিলেন ফুটবলকে।
রোনাল্ডো ও এমবাপের ফুটবলার হয়ে ওঠার কাহিনি জীবনযুদ্ধের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। আট বছর আগে ফ্রান্সকে হারিয়ে পর্তুগালকে প্রথমবার ইউরোপ সেরা করার পরেও তাঁকে শুনতে হয়েছিল, ‘‘রোনাল্ডো দুর্দান্ত। কিন্তু সেরার সেরা লিয়োনেল মেসি-ই।’’ বারবার আঘাত সত্ত্বেও তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, নিজেকে প্রমাণ করেছেন, এগিয়ে চলার স্বপ্ন দেখেন ও দেখান। আঁধার থেকে ফিরে আসেন আলোয়।
স্লোভেনিয়ার বিরুদ্ধে শেষ ষোলোর ম্যাচে ১০৫ মিনিটে পেনাল্টি নষ্ট করে আন্ধকারে ডুবে যাওয়া রোনাল্ডো কান্নায় ভেঙে পড়তেই বিদ্ধ হলেন সমালোচনা ও বিদ্রুপের তিরে। ইংল্যান্ডের একটি সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম ছিল আরও মারাত্মক— ‘মিস্টিয়ানো পেনাল্ডো’। হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হলেও রোনাল্ডো লক্ষ্যে স্থির ছিলেন। টাইব্রেকারে প্রথম শট নিতে এগিয়ে গেলেন, গোল করলেন এবং তার পরেই ক্ষমা চাইলেন ভক্তদের কাছে। ৩৯ বছর বয়সি পর্তুগিজ অধিনায়ক অকপটে বলেছিলেন, ‘‘ফুটবল আমাকে শিক্ষা দিয়েছে যারা ব্যর্থ হয়, তারাই উঠে দাঁড়িয়ে চেষ্টা করে ঘুরে দাঁড়ানোর।’’
প্রত্যাবর্তন কি এখনও সম্পূর্ণ হয়েছে রোনাল্ডোর? স্পোর্টিং লিসবনের স্পোর্টিং ডিরেক্টর থাকার সময় কিশোর সি আর সেভেনকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের কোচ লুইস নর্টন দে মাতোস। লিসবন থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে তিনি বললেন, ‘‘রোনাল্ডোকে আমি খুব ভাল করে চিনি। ইউরো চ্যাম্পিয়ন না হওয়া পর্যন্ত ওর প্রত্যাবর্তন সম্পূর্ণ হবে না।’’ চলতি ইউরোয় এখনও পর্যন্ত একটিও গোল করতে না পারা রোনাল্ডো কি পারবেন শক্তিশালী ফ্রান্সকে হারিয়ে পর্তুগালকে শেষ চারে তুলতে? গ্রুপ পর্বে চেক প্রজাতন্ত্র ও তুরস্কের বিরুদ্ধে জিতলেও জর্জিয়ার কাছে হেরে গিয়েছিল ২০১৬ সালের চ্যাম্পিয়নরা। স্লোভেনিয়াকে টাইব্রেকারে হারিয়ে শেষ আটে উঠলেও পর্তুগালকে নিয়ে খুব একটা আশাবাদী নন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা। রোনাল্ডো-দের প্রতিপক্ষ যে এমবাপের ফ্রান্স।
২০১৬ সালে প্যারিসে ফ্রান্সকে হারিয়ে রোনাল্ডো যখন পর্তুগালকে ইউরোপ সেরা করছেন, এমবাপের বয়স ছিল ১৮। তাঁর শয়নকক্ষের দেওয়ালে শোভা পেত সি আর সেভেনের পোস্টার। রোনাল্ডোকে আদর্শ করে বড় হয়ে ওঠা এমবাপেকে নিয়েই যত উদ্বেগ পর্তুগালের। চলতি ইউরোয় এখনও পর্যন্ত মাত্র একটি গোল করলেও যে কোনও মুহূর্তে ম্যাচের রং বদলে দিতে পারেন এমবাপে। শেষ আটের দ্বৈরথের আগে ফরাসি তারকা বলেছেন, ‘‘আমরা ক্ষুধার্ত হয়ে রয়েছি সেমিফাইনালে ওঠার জন্য। পর্তুগাল দারুণ শক্তিশালী। ওরা যে ইউরোপের অন্যতম সেরা দল তা শেষ আটে উঠেই প্রমাণ করেছে। আমার মনে হয়, দারুণ আক্রমণাত্মক খেলা হবে।’’
ফুটবলের ময়দানে রোনাল্ডো-এমবাপে দ্বৈরথ অবশ্য নতুন নয়। ২০১৭-’১৮ মরসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোয় প্রথমবার মুখোমুখি হয়েছিলেন দুই তারকা। রোনাল্ডো তখন রিয়াল মাদ্রিদে। প্যারিস সঁ জরমঁ-এ খেলতেন এমবাপে। দুই পর্ব মিলিয়ে ৫-২ জিতেছিল স্পেনের ক্লাব। সেই সময় এমবাপের
বয়স ছিল মাত্র ১৯। মোনাকো থেকে লোনে যোগ দিয়েছিলেন পিএসজি-তে। সেই সময় এমবাপের পরিচিত ছিল প্রতিশ্রুতিবান ফুটবলার হিসেবে। এখন তিনি বিশ্বফুটবলের মহাতারকা। রোনাল্ডোর পথে হেঁটেই যোগ দিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদে। এক জন স্পেনের ক্লাবের অতীত। আর এক জন ভবিষ্যৎ। শুক্রবারের দ্বৈরথ যত না ফ্রান্স বনাম পর্তুগাল, তার চেয়েও বেশি আদর্শ রোনাল্ডোর সঙ্গে ভক্ত এমবাপের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy