জেসন কামিংস। ছবি: টুইটার।
মোহনবাগান তাঁকে সই করাতে পারে, সেই জল্পনা অনেক দিন ধরেই চলছিল। শেষ পর্যন্ত মাস দুয়েক আগে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পরে অনেকেই বিশ্বাস করতে পারেননি যে কাতার বিশ্বকাপে খেলা জেসন কামিংসকে সই করিয়েছে মোহনবাগান। সেই কামিংস এত দিনে দলের হয়ে তিনটি গোল করে ফেলেছেন। এএফসি কাপের পর ডুরান্ডেও গোল হয়ে গিয়েছে। এখন কামিংস সবুজ-মেরুন জনতার হৃদয়ে। তাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন মোহন-জনতা। সেই কামিংস ডুরান্ড সেমিফাইনালের আগে বিশ্বকাপের স্মৃতির ডালি উপুড় করলেন। কথা বললেন মোহনবাগানে সই করা এবং সবুজ-মেরুন সমর্থকদের নিয়েও।
কাতার বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া খেলেছিল আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচে লিয়োনেল মেসির বিরুদ্ধে খেলেছিলেন কামিংস। মেসির খেলা যে মন ছুঁয়ে গিয়েছে, সেটা বলতে ভোলেননি তিনি। আইএসএলের ইউটিউব চ্যানেলের অনুষ্ঠান ‘ইন দ্য স্ট্যান্ডস’-এ বলেছেন, “সেই ম্যাচের পর মেসিকে বলি, ‘ভাল খেলেছ আজ!’ এ ছাড়াও বলি, ‘তুমিই সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়। ফুটবলের জন্য তুমি যা করেছ, তার প্রশংসা করতেই হবে।’ সম্ভবত আরও বলেছিলাম, ওকে আমি খুব ভালবাসি। ওকে আমি এক বার জড়িয়ে ধরি এবং বলি ‘অল দ্য বেস্ট’। আশা প্রকাশ করি যে ও যেন আরও এগোতে পারে এবং বিশ্বকাপ জয় করতে পারে। সেটাই শেষমেশ করে দেখাল। ওর সঙ্গে দেখা হওয়াটা স্বপ্নের মতো।”
রোনাল্ডো না মেসি কে বড় ফুটবলার, সেই বিতর্কে যোগ দিতে রাজি হলেন না কামিংস। নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে তাঁর মন্তব্য, “রোনাল্ডো-মেসি বিতর্ক নিয়ে বলতে পারি, বিশ্বকাপের জন্যেই মেসির দিকে পাল্লা ভারি। এটা আমার ব্যক্তিগত ধারণা। তবে আমার মনে হয়, দু’জনেই বিশ্বসেরা। আমার মতো খেলোয়াড়দের কাজ ওরা খুব কঠিন করে দিয়েছে! ফুটবলের মান এত উঁচুতে নিয়ে চলে গিয়েছে যে বিশ্বের অন্য ফুটবলারদের পক্ষে সেখানে পৌঁছনো খুব কঠিন।”
এর পর কামিংসের মুখে শুধুই মোহনবাগানের কথা। যে দিন বিমানবন্দরে নেমেছিলেন সে দিন ওই রাতেও হাজার হাজার মানুষের ঢল দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। আগে যে সব দেশে খেলেছেন, সেখানে ফুটবলের মান ভারতের চেয়ে ভাল হতে পারে। কিন্তু সমর্থনের ব্যাপারে কলকাতাই যে সেরা এ কথা স্বীকার করতে দ্বিধা করেননি মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের তারকা। তিনি স্বীকার করেছেন, কলকাতার সমর্থকদের মতো এমন আবেগপ্রবণ, প্রাণোচ্ছ্বল ও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থক তিনি দেখেননি।
কামিংসের কথায়, “আমি এখানকার সমর্থকদের দেখে বেশ অবাক হয়েছি। ওদের আবেগ অন্য রকম। আগে অনেক বড় ক্লাবে খেলেছি। সেখানকার সমর্থকদের দেখেছি। কিন্তু মোহনবাগানের মতো এত আবেগপ্রবণ সমর্থক আর কখনও দেখিনি। হোটেল, শপিং মল বা রাস্তায়, ট্যাক্সি ড্রাইভার থেকে শুরু করে সবাই সমর্থক! প্রত্যেকেই ফুটবল নিয়ে আলোচনা করছে। পরের ম্যাচ নিয়ে কথা বলছে।”
বিমানবন্দরের অভ্যর্থনা সম্পর্কে কামিংস বলেন, “আমার তখন জেটল্যাগ ছিল। তবে এতটা আশা করিনি। ভেবেছিলাম দু’-তিনজন আসবেন হয়তো। কিন্তু ভোর তিনটে-চারটের সময় দেখি এক ঝাঁক মানুষ হাজির! সত্যিই আমি দেখে চমকে যাই। আমাকে স্বাগত জানাতে এত লোক! তখনই বুঝতে পেরেছিলাম, এখানকার ফুটবলপ্রেমীরা কতটা আবেগপ্রবণ।”
অস্ট্রেলিয়ার এ-লিগে সেন্ট্রাল কোস্ট মেরিনার্সের হয়ে খেলে ২০২২-২৩ মরশুমে ২৯ ম্যাচে ২১ গোল করেন কামিংস। ছ’টি অ্যাসিস্ট করেন। লিগের চারটি ম্যাচে জোড়া গোল করেন কামিংস। ফাইনালে মেলবোর্ন সিটি-র বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করে দলকে ৬-১ জিতে চ্যাম্পিয়ন হতে সাহায্যও করেন। এই ক্লাবের হয়ে মোট ৫০টি ম্যাচ খেলে ৩১টি গোল করেছেন তিনি। অ্যাসিস্ট ১২টি গোলে। ক্লাব ফুটবলে এ পর্যন্ত সাড়ে তিনশোরও বেশি ম্যাচ খেলে ১৪৫টি গোল ও ৪৮টি অ্যাসিস্ট রয়েছে তাঁর। যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন, নিজের জাত চিনিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
মোহনবাগানের হয়ে কামিংসের প্রথম গোল করেন এএফসি কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের প্লে-অফে, নেপালের মাচিন্দ্রা এফসি-র বিরুদ্ধে। সেই অনুভূতি সম্পর্কে বলেছেন, “প্রথম গোল পাওয়ার মুহূর্তটা অবশ্যই বিশেষ। বুকের ওপর থেকে একটা পাথর নেমে গিয়েছিল। প্রথম গোলের পরেই মনে হল, এ বার আরও গোল পাব। আসলে নিজের সেরাটা বার করে আনতে সময় লাগে। একটা নতুন দেশে এসে সেখানকার স্টাইলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। নতুন কোচ, নতুন সতীর্থ খেলোয়াড়, এখানকার আর্দ্রতা, মাঠের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় লাগে।”
মোহনবাগানে সতীর্থদের সঙ্গেও বেশ ভাল সম্পর্ক ও বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে বলে জানালেন কামিংস। তিনি বলেন, “এক দল ভাল ছেলের মাঝে এসে পড়লে ওদের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা সহজ হয়। দলে অনেক বিদেশি আছে। দু’জন অস্ট্রেলিয়ান দিমি আর ব্রেন্ডন যেখানে রয়েছে, সেখানে মানিয়ে নেওয়া আরও সোজা। তা ছাড়া হুগো বুমোসও আছে। ও ফরাসি। আর আমিও একটু-আধটু ফরাসি বলতে পারি। ওর সঙ্গে আমি অল্প ফরাসিতে কথা বলার চেষ্টা করি। একসঙ্গে গলফও খেলি।”
দলের ভারতীয় ফুটবলারদের সম্পর্কেও উচ্ছ্বসিত কামিংস। বলেন, “আমি ওদের খেলায় অভিভূত। ভারতীয় খেলোয়াড়দের অনেক গুণ আছে। ওদের দক্ষতা আছে, খেলার মানও ভাল। মোহনবাগানে লিগের সেরা খেলোয়াড়দের আমরা পেয়েছি। ভারতের সেরা খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলার সুযোগ পাচ্ছি। এই মরশুমে আমরা অনেকটা এগিয়েই থাকব মনে হচ্ছে।”
আনোয়ার আলির কথা আলাদা ভাবে উল্লেখ করেছেন কামিংস। বলেন, “সে দিন (মাচিন্দ্রা এফসি-র বিরুদ্ধে) ও একাই দু’টো গোল করল! আনোয়ারের খেলা দেখে আমি মুগ্ধ। ওর আসল গুণ সব সময় বলের সঙ্গে সঙ্গে থাকা। তার পর একেবারে স্ট্রাইকারের পায়ে বল তুলে দেওয়া। ওকে দেখলে আমার সের্খিয়ো র্যামোসের কথা মনে পড়ে যায়। আমি ওকে বলেওছি, ‘তুমি ভারতের র্যামোস।’ লিস্টনের (কোলাসো) মধ্যেও অনেক গুণ আছে। অনুশীলনে ৩০-৪০ গজ দূর থেকে গোল করে! গ্ল্যান মার্টিন্স, অনিরুদ্ধ থাপা, সাহাল, শুভাশিস প্রত্যেকেই খুব ভাল ফুটবলার।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy