মোহনবাগানের সঙ্গে তৃণমূল যোগ ওড়ালেন কুণাল ফাইল ছবি
সম্প্রতি হয়ে গিয়েছে মোহনবাগান ক্লাবের নির্বাচন। সেখানে এমন কয়েক জন মোহনবাগানের কমিটিতে এসেছেন, যাঁরা রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে যুক্ত। বলা হচ্ছে, মোহনবাগান ক্লাব চালাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসই। নবনিযুক্ত সহ-সভাপতি কুণাল ঘোষ তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক এবং মুখপাত্র। অন্য দুই সহ-সভাপতি মলয় ঘটক এবং অরূপ রায় রাজ্যের মন্ত্রী। ফুটবল-সচিব স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর ভাই। এ সব দেখে অনেক সমর্থকই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সহ-সভাপতি হওয়ার পর প্রথম বার ক্লাবে এসে কর্তাদের তৃণমূল সংশ্রবের প্রসঙ্গ উড়িয়ে দিলেন কুণাল। পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, ক্লাবের সাহায্য করতে যদি অন্য কোনও দলের সমর্থকরাও এগিয়ে আসেন, তাঁরা স্বাগত।
শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের ক্লাবের কমিটিতে স্থান পাওয়া প্রসঙ্গে কুণাল বলেছেন, “মোহনবাগান ক্লাব শুধু দিদিকে দেখে, হাওয়ায় জ্ঞান দিয়ে চলবে না। মোহনবাগান ক্লাবটা রাস্তায় নেমে করতে হবে। যখন ২০১২ সালে ক্লাবের সঙ্কট, তখন এই মানস ভট্টাচার্য, বিদেশ বসু, কুণাল ঘোষই দিল্লি গিয়ে কুশল দাসকে ধরে ২ লাখ সই নিয়ে ওখানে গিয়ে দরাদরি করেছে। আজকে যারা এই সব পোস্ট করছে সেই সময় তারা কোথায় ছিল?”
কুণালের সংযোজন, “যখন আইএসএল খেলতে পারছে না মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গল, তখন বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় দুই ক্লাবকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। বলেছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলে দুই ক্লাবকে আইএসএলে খেলার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। তখন তো আমরা তৃণমূল বলে কোনও কথা বলিনি। তখন মোহনবাগানি হিসেবে আমরা সবাই চাইছিলাম আইএসএল-টা খেলতে। কেন্দ্রীয় সরকার যদি এই সমস্যার সমাধান করতে পারে তা হলে করবে। উনি দুই প্রধানের সমর্থকদের আবেগ নিয়ে ছেলেখেলা করে চলে গেলেন। তাঁদের প্রশ্নের আজ কেন উত্তর দেব? তাঁরা যদি সত্যি ক্লাবকে ভালবাসতেন, তা হলে সঙ্কটের দিনে এগিয়ে আসেননি কেন? মোহনবাগান নিজের মতো করে আইএসএলে গিয়েছে। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আইএসএলে খেলার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। যাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, ক্লাবের সঙ্কটের সময়ে তাঁরা আসেননি কেন? যদি আমি ছোটবেলা থেকে মোহনবাগানি হই, তা হলে তৃণমূল হওয়াটা দোষের নাকি? মোহনবাগানের ক্লাবের উন্নতিতে বামপন্থী বা অন্য দলের যে কেউ এগিয়ে আসতে পারেন।”
ক্লাবের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার আগে নেটমাধ্যমে মোহনবাগানের নামের আগে এটিকে থাকা নিয়ে নিজের আপত্তির কথা জানিয়েছিলেন কুণাল। শুক্রবার সাংবাদিকদের সামনেও নিজের অবস্থানে অনড় থাকলেন তিনি। তবে এটাও মেনে নিলেন, অনেক বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হয় তাঁদের। কুণাল বলেছেন, “আইএসএল খেলতে গেলে যে পরিমাণ টাকা এবং পরিকাঠামো প্রয়োজন তার জন্য বড় বিনিয়োগ বা বড় লগ্নিকারী দরকার। এটা ছাড়া সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে সঞ্জীব গোয়েঙ্কার মতো একজন মানুষ মোহনবাগানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এখনকার দিনে যে লগ্নিকারী লাগবে সেই বাস্তবটা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই।”
একটু থেমে কুণালের সংযোজন, “তবে সমর্থকদের আবেগকেও মাথায় রাখতে হবে। যে হেতু মোহনবাগান নামের আগে এটিকে রয়েছে, তাতে সমর্থকদের মনে কোথাও একটা আঘাত লাগছে। আমি চাই নতুন কমিটি সঞ্জীববাবুর সঙ্গে আলোচনা করুক এবং দেখুক এর কী বিকল্প তৈরি করা যায়। নতুন কমিটিও জানে এই ব্যাপারে আলোচনা করা প্রয়োজন। তবে এখনই এটা করতে হবে তার কোনও মানে নেই। সময় লাগবে। ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি, এটিকে না থাকলেই সবচেয়ে ভাল।”
মোহনবাগান নামের আগে এটিকে থাকা নিয়ে নিজের মত স্পষ্ট করেছেন নতুন সচিব দেবাশিস দত্তও। বলেছেন, “ব্যক্তিগত ভাবে মোহনবাগানের আগে এটিকে নামটা আমারও ভাল লাগে না। কিন্তু একটা জিনিস সবার জানা উচিত, ওই ক্লাবটা এক সময় ছিল যেটা এখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আইএফএ-তে এখন তারা আর স্বীকৃতও নয়। চুক্তি হয়েছে একটি কোম্পানির সঙ্গে। দুটো কোম্পানির ব্র্যান্ডের সংযুক্তিকরণ হয়েছে। আমাদের ব্র্যান্ড মোহনবাগান, ওদের ব্র্যান্ড এটিকে। নতুন ক্লাবের নাম হয় এটিকে মোহনবাগান। এই চুক্তিই করা হয়েছে। এর আগে একই ভাবে বিজয় মাল্যর সংস্থার সঙ্গেও চুক্তি ছিল। ওদের ব্র্যান্ডের নামও আগে ছিল। আমরা প্রথম মিটিংয়েই ঠিক করেছি এটিকে নাম নিয়ে একটা আলোচনা করা হবে। এখন সঞ্জীব গোয়েঙ্কা খুবই ব্যস্ত। বেশির ভাগ সময়েই উনি মুম্বইয়ে থাকছেন। আর একটা কথা বলি, অন্য কোনও সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হলে আমি এতটা আত্মবিশ্বাসী হতাম না। যেহেতু সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, তাই আশা রাখছি মোহনবাগানের সমর্থকদের কষ্টটা উনি বুঝতে পারবেন।”
গত ৩০ মার্চ মোহনবাগান ক্লাবের নতুন কমিটির প্রথম বৈঠক হয়। সেখানেই সহ-সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করা হয় কুণালের নাম। শুক্রবার তিনি প্রথম বার ক্লাবে এসেই দেখা করলেন সচিব দেবাশিস দত্ত, ফুটবল-সচিব স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাকি কর্তাদের সঙ্গে। এর পরেই সাংবাদিক বৈঠকে একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিলেন আগ্রাসী ভঙ্গিতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy