Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
pele

পেলে হওয়া কঠিন, সহ্য করেছি সব কিছু

ফাইনালে ইটালিকে ৪-১ চূর্ণ করেছিল ব্রাজিল। প্রথম গোলটাই করেছিলেন পেলে। বাকি তিনটি গোল যথাক্রমে করেছিলেন গ্রেসন, জায়েরজিনহো ও কার্লোস আলবের্তো।

অমলিন: বিশ্বকাপ হাতে পেলে। যে ট্রফি জেতেন তিন বার। ফাইল চিত্র

অমলিন: বিশ্বকাপ হাতে পেলে। যে ট্রফি জেতেন তিন বার। ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:৪৫
Share: Save:

ব্রাজিলকে বিশ্বকাপে তিন বার তিনি চ্যাম্পিয়ন করেছেন। তাঁর পায়ের জাদুতে এখনও মন্ত্রমুগ্ধ বিশ্ব। তাঁকে একবার দেখার জন্য আকুল কোটি কোটি মানুষ। খ্যাতির শিখরে থাকা যে বিড়ম্বনা, গত গ্রীষ্মে ইংল্যান্ডের একটি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া শেষ সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন পেলে। ভুলতে পারেননি ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের তিক্ততাও।

নবরূপে আত্মপ্রকাশ করা নিউ ইয়র্ক কসমস ক্লাবের প্রচারে এক দশক আগে ইংল্যান্ড সফরে গিয়েছিলেন পেলে। ডাউনিং স্ট্রিটে ফুটবল সম্রাটকে বিশাল সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। শিশুদের সঙ্গে ফুটবলও খেলেছিলেন তিনি। ১৯৬৬ বিশ্বকাপের প্রসঙ্গ উঠতেই আবেগপ্রবণ হয়ে উঠেছিলেন। ব্যক্ত করেছিলেন তাঁর যন্ত্রণাও। এক বছর আগে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। জানিয়েছিলেন, ১৯৬২’তে প্রতিযোগিতার শুরুতেই চোট পাওয়ার পরে ঠিক করেছিলেন আর কখনও বিশ্বকাপে খেলবেন না। পেলে বলেছিলেন, ‘‘সামনেই আরও একটা বিশ্বকাপ ছিল। কিন্তু আমি তা খেলতে চাইনি। কারণ, ৬২’তে মাত্র দু’টি ম্যাচ খেলেছিলাম। যদিও ব্রাজিল বিশ্বকাপ জেতায় সেই যন্ত্রণা কিছুটা দূর হয়েছিল। কিন্তু ৬৬’র বিশ্বকাপ থেকে যে ভাবে ষড়যন্ত্র করে ব্রাজিলকে বার করে দেওয়া হয়েছিল তা ভয়ঙ্কর।’’ আরও বলেছিলেন, ‘‘মানসিক ভাবে আমি এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম, তখনই বিশ্বকাপকে চিরতরে বিদায় জানাতে চেয়েছিলাম।’’

চার বছর পরে ১৯৭০ সালে মেক্সিকোয় পেলের জাদুতেই বিশ্বসেরা হয় ব্রাজিল। চিরকালের জন্য জুলে রিমে কাপ নিজের দেশে নিয়ে গিয়েছিলেন ফুটবল সম্রাট। সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণ কী ছিল? পেলে বলেছেন, ‘‘মানুষ চেয়েছিল আমি যেন ফিরে আসি, বিশ্বকাপে খেলি।’’ ইংল্যান্ডের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার উল্লেখ করে যোগ করেছিলেন, ‘‘৬৬’র বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডে যা ঘটেছিল, তার পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এই কারণেই খেলতে চাইছিলাম না। সেই সঙ্গে এটাও মনে করতাম, ১৯৫৮ সাল থেকে বিশ্বকাপ খেললেও আমার অবদান যথেষ্ট ছিল না। তা ছাড়া জানতাম, এটাই আমার ফুটবলজীবনের শেষ বিশ্বকাপ হতে চলেছে। এই কারণেই সিদ্ধান্ত বদল করে জাতীয় দলে যোগ দিয়েছিলাম।’’

সিদ্ধান্ত বদলে পেলে ৭০ সালের বিশ্বকাপ খেলার জন্য জাতীয় দলে যোগ দেওয়ায় উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছিল ব্রাজিলে। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের একাংশ তাঁর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিল। সেই দুঃখও ভুলতে পারেননি ফুটবল সম্রাট। বলেছিলেন, ‘‘সাংবাদিকদের প্রায় সকলেই বলেছিল, আমি ছন্দে নেই। ব্রাজিল দলে আমার ফেরা ঠিক হয়নি। সেই সময় আমি প্রবল চাপের মধ্যে ছিলাম। পেলে হয়ে থাকাটা খুবই কঠিন। আমি পছন্দ করি বা না করি, আমাকে সব কিছু সহ্য করতে হচ্ছিল।’’

১৯৭০ বিশ্বকাপে ব্রাজিল দলের কোচ হন পেলেরই প্রাক্তন সতীর্থ মারিয়ো জ়াগালো। ফুটবল সম্রাটকে তিনিই উজ্জীবিত করেছিলেন। পেলের কথায়, ‘‘জ়াগালো আমাকে বলেছিল, ‘আমার কখনওই মনে হচ্ছে না, তুমি আগের সেই পেলে নও।’ জ়াগালো আমাকে কথা দিয়েছিল আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য সব ম্যাচে খেলাবে। গ্রেসনের মতো শিল্পীর পাশাপাশি আরও তিন জন দুর্দান্ত ফরোয়ার্ড দলে নিয়েছিল জ়াগালো। আমি মনে করি, ১৯৭০ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের দলটাই ছিল সেরা। কারণ, প্রতি বিভাগেই বিশ্বমানের তিন জন করে ফুটবলার ছিল সেই দলে।’’ যোগ করেছিলেন, ‘‘১৯৭০ বিশ্বকাপের সাফল্যই আমার যাবতীয় হতাশা দূর করে দিয়েছিল। ইটালির বিরুদ্ধে ফাইনাল খেলতে আজ়তেকা স্টেডিয়ামে যাওয়ার পথে টিম বাসের জানালা দিয়ে দেখেছিলাম, অসংখ্য মানুষ পতাকা হাতে ব্রাজিল...ব্রাজিল...পেল...পেলে...চিৎকার করছেন। আমার চোখ জলে ভরে গিয়েছিল। কিন্তু সেই সময় আমি ছিলাম দলের সবচেয়ে বেশি বয়সি সদস্য। চাইনি সতীর্থরা আমার কান্না দেখুক। আমি তখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছিলাম, আর একবার যেন আমাকে আশীর্বাদ করেন।’’ যদিও ৭০’এ বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল দলে সবচেয়ে বেশি বয়সের ফুটবলার ছিলেন ব্রিটো। পেলে ছিলেন দ্বিতীয়।

ফাইনালে ইটালিকে ৪-১ চূর্ণ করেছিল ব্রাজিল। প্রথম গোলটাই করেছিলেন পেলে। বাকি তিনটি গোল যথাক্রমে করেছিলেন গ্রেসন, জায়েরজিনহো ও কার্লোস আলবের্তো। বিশ্বকাপ জয়ের পরে সতীর্থদের কাঁধে চড়ে পেলের স্টেডিয়াম প্রদক্ষিণের সেই দৃশ্য এখনও উজ্জ্বল ক্রীড়াপ্রেমীদের স্মৃতিতে। ফুটবল সম্রাটও বলেছেন, ‘‘১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ আমার জীবনের সেরা স্মৃতি। তবে দেশের জন্য তা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ফুটবলের চেয়েও আমার অনেক বেশি অবদান ছিল ব্রাজিলের প্রতি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

pele Brazil football
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy