Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
india football

Chibuzor Nwakanma: চিমা বিধ্বংসী, চিবুর  ছিল শিল্পের ছোঁয়া এশিয়া সেরার চোখে   

ভারতীয় খাবার ছিল খুব প্রিয়। আমার সঙ্গে নিয়মিত কথা হত। ফুটবল ছেড়ে চিবু পাদ্রি হয়েছে শুনে একটু অবাকই হয়েছিলাম। তবে ভাবিনি এ ভাবে ও আমাদের ছেড়ে চলে যাবে।

স্মরণীয়: ময়দানের দুই তারকা। চিমার সঙ্গে চিবুজোর। ফাইল চিত্র

স্মরণীয়: ময়দানের দুই তারকা। চিমার সঙ্গে চিবুজোর। ফাইল চিত্র

অতনু  ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২২ ০৭:৩৯
Share: Save:

এমেকার সঙ্গে প্রথম দিন ইস্টবেঙ্গলের অনুশীলনে চিবুজোরকে দেখে চমকে গিয়েছিলাম। নাইজিরীয় মানেই দীর্ঘদেহী বলে আমাদের ধারণা ছিল। কিন্তু চিবু ছিল একেবারে উল্টো। তার উপরে যখন শুনলাম স্ট্রাইকার, তখন আরও বিস্মিত হলাম। কেউ কেউ তো ভবিষ্যদ্বাণীও করে ফেলেছিল, ‘‘এই উচ্চতা নিয়ে স্ট্রাইকার হওয়া যায় না। ময়দানে খুব বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না।’’

উচ্চতার ঘাটতি চিবু ঢেকে রাখত ওর গতি ও শিল্প দিয়ে। অনুশীলনের প্রথম দিনেই আমরা মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম ওর প্রচণ্ড গতি ও বলের উপরে নিয়ন্ত্রণ দেখে। চিমা ছিল বিধ্বংসী। চিবু ছিল শিল্পী। দু’পায়েই দুর্দান্ত কাজ ছিল। বল ধরে এত দ্রুত ঘুরতে পারত যে, ডিফেন্ডাররা ওকে ধরতেই পারত না। আর ছিল নমনীয় শরীর। ওর মনটা ছিল একেবারে শিশুর মতো। সারাক্ষণ মুখে হাসি লেগে রয়েছে।আমাদের পুরো মাতিয়ে রাখত। প্রথম দিকে গোল করেই চিবু মাঠের মধ্যে অদ্ভুত ভাবে ডিগবাজি দিত। যা দেখে দর্শকরা আরও বিদ্রুপ করতেন। এক দিন আমরা ওকে বললাম, তুই এ রকম অদ্ভুত ভাবে ডিগবাজি দিস না। সমর্থকেরা তোকে নিয়ে হাসাহাসি করে। চিবু আমাদের কথা একবাক্যে মেনে নিয়েছিল। গোল করার পরে আর ও রকম কাণ্ড করত না।চিবুর চেহারা ছোটখাটো হলে কী হবে, প্রচণ্ড সাহসী ছিল। কোমরের সমান উচ্চতার বলেও শরীর ছুড়ে হেড করে অসংখ্য গোল করেছে। পরবর্তী কালে ভাইচুং ভুটিয়ার মধ্যে এই গুণ দেখেছিলাম। বিপক্ষে চিবু থাকলে সব সময় আতঙ্কে থাকতাম। ও যে কী করবে, তা কেউ বুঝতে পারতাম না। ওকে আটকানোর জন্য কোনও পরিকল্পনাই যথেষ্ট ছিল না। চিমা কী ধরনের ফুটবল খেলে আমরা জানতাম। বিপক্ষের রক্ষণকে গুঁড়িয়ে দিয়ে গোলার মতো শটে গোল করতও। কিন্তু চিবু কখনও তিন চার জনকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে নিখুঁত প্লেসিংয়ে বল জালে জড়িয়ে দিচ্ছে। কখনও আবার গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে বল গোলে পাঠাচ্ছে। মনে আছে, মহমেডানের হয়ে একটা ম্যাচে শূন্য ডিগ্রি কোণ থেকে গোল করেছিল চিবু। ওই জায়গা থেকে যে বল গোলের মধ্যে রাখা যায়, তা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। চিবু কিন্তু অনায়াসে এই ধরনের গোল অসংখ্যবার করেছে।

চিবু যখন যে দলে খেলত, সকলকে মাতিয়ে রাখত। ও থাকলে আমরা অনেক চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পারতাম। এমেকা, চিমাকে দেখেছি, অনুশীলনের পরে অধিকাংশ দিনই মেস বা ফ্ল্যাটে ফিরে বিশ্রাম করত। খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেও প্রচণ্ড সংযমী ছিল। চিবু কোনও দিনই সে রকম ছিল না। আমার অফিস তখন ছিল পার্ক স্ট্রিটে। ইলিয়ট রোডের মেসে থাকত চিবু। ঘরে ওর মন টিকত না। প্রায় প্রত্যেক দিনই দুপুর বেলা রংচঙে জামা পরে আমাদের অফিসে চলে আসত গল্প করতে।এর জন্য বাংলা ও হিন্দিও শিখেছিল। ভারতীয় খাবার ছিল খুব প্রিয়। আমার সঙ্গে নিয়মিত কথা হত। ফুটবল ছেড়ে চিবু পাদ্রি হয়েছে শুনে একটু অবাকই হয়েছিলাম। তবে ভাবিনি এ ভাবে ও আমাদের ছেড়ে চলে যাবে।

অন্য বিষয়গুলি:

india football AIFF
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy