আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র
গত ১৯ মে আইএফএ সচিবের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। এএফসি এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারে ৮ থেকে ১৪ জুন ভারতের তিনটি ম্যাচ যুবভারতীতে। তাই ১৪ জুন পর্যন্ত দায়িত্ব সামলাবেন। তারপর আর নয়। কেন সরে দাঁড়ালেন? আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করলেন জয়দীপ।
প্রশ্ন: সরে দাঁড়ালেন কেন? কোথায় সমস্যা হচ্ছিল?
জয়দীপ মুখোপাধ্যায়: আইএফএ-র থেকে এখন যে কোনও একটা ক্লাবের গ্রহণযোগ্যতা বেশি! আইএফএ বাংলার ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা তো নামেই। নিজস্ব মাঠ নেই, তাঁবু নেই। কীসের নিয়ামক সংস্থা? আমরাই যেন যত দোষ নন্দ ঘোষ হয়ে গিয়েছি। যে যা পারছে বলে যাচ্ছে। ছোট ক্লাবেরও যে সমর্থন আছে, আইএফএ-র সেটা নেই। প্রচুর অস্বীকৃত প্রতিযোগিতা হচ্ছে। তাদের বাজেট আমাদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতার বাজেটের থেকেও বেশি। কেন লোকে আমাদের প্রতিযোগিতায় খেলবে? নিয়ামক সংস্থা করে কী হবে? ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দার! ক্ষমতাহীন একটা সংস্থায় থেকে কাজ করা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন: তার মানে তো ১২৯ বছরের পুরনো একটা সংস্থার তো এখনও নিজের পরিচয়ই তৈরি হয়নি?
জয়দীপ: একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে। ‘সিঙ্গুর গোল্ড কাপ’ নামে একটা প্রতিযোগিতা হয়েছিল। সেটা নিয়ে প্রথমে বলা হল, খেপ খেলা হচ্ছে। যারা খেলেছিল, সেখান থেকেও ৪০ হাজার টাকা পেয়েছিল। সেটাও তো তাদের কাজে লেগেছে। এর পরে সেই প্রতিযোগিতারই ফাইনালে যখন বিশিষ্ট মানুষেরা গিয়েছিলেন, তখন আর খেপের প্রতিযোগিতা বলা হল না। আসলে আমাদের নামে যা খুশি তাই বলে দেওয়া যায়’
প্রশ্ন: পরিচিতি তো এমনি এমনি তৈরি হয় না। তৈরি করতে হয়। এটা তো আইএফএ-র সামগ্রিক প্রশাসনিক ব্যর্থতা?
জয়দীপ: অবশ্যই! এটা সম্পূর্ণ আমাদেরই ব্যর্থতা। মুখ্যমন্ত্রী এআইএফএফ-কে জমি দিলেন। আইএফএ-কেও দিতে পারতেন। আমরাই হয়ত পৌঁছতে পারিনি। নিজেদের দাবি ঠিক মতো জানালে উনি নিশ্চয়ই ফিরিয়ে দিতেন না আমাদের।
প্রশ্ন: সামনেই আইএফএ-র নির্বাচন। আপনি কি হেরে যাওয়ার ভয়েই আগেভাগে সরে দাঁড়ালেন?
জয়দীপ: এ সব অভিযোগ যাঁরা করছেন, তাঁদের সব কিছু জেনে কথা বলা উচিত। এ বছর চেয়ারম্যান, সভাপতি এবং তিনজন সহ-সভাপতি পদে নির্বাচন। আমি ২০১৯-এর ৫ জুলাই দায়িত্ব নিই। ফলে আমার মেয়াদ এমনিতেই ২০২৩ পর্যন্ত ছিল। সচিব পদে এই বছর নির্বাচনের কোনও ব্যাপারই ছিল না। মানসিক ভাবে কাজ করতে পারছি না বলে তাই সরে দাঁড়াচ্ছি।
প্রশ্ন: কিন্তু এটা তো ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া!
জয়দীপ: আনন্দের সঙ্গে কাজ করতে এসেছিলাম। দুর্ভাগ্য, চার বছর কাটাতে পারলাম না। বাংলা সন্তোষ ট্রফিতে টাইব্রেকারে হেরে রানার্স হয়েছে। কিন্তু বাংলার ফুটবলের জন্য আমরা কী করলাম? দু’জনের চাকরি হয়েছে। তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু সেটাই কি সব? অন্য রাজ্য কত এগিয়েছে! এরা কি তা হলে সব ত্যাগ করে বাংলার জন্য দিনের পর দিন খেলে যাবে? আমিই ব্যর্থ! লোকের কাছে পৌঁছতে পারিনি। তাই ঠিক করে নিয়েছি আর থাকব না।
প্রশ্ন: দু’বছর আগেও এক বার পদত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু দু’দিনের মধ্যে সেই ইস্তফা ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। এ বারও কি তেমন হবে?
জয়দীপ: এ বারও আমাকে চেয়ারম্যান, সভাপতি অনুরোধ করেছিলেন থেকে যাওয়ার জন্য। কিন্তু এ বার আমি সিদ্ধান্তে অনড়। ১৪ জুনের পরে আর থাকছি না।
প্রশ্ন: চার বছরে ক্লাবগুলোর থেকে কতটা অসহযোগিতা পেয়েছেন?
জয়দীপ: কোনও অসহযোগিতা পাইনি। বরং পূর্ণ সমর্থন পেয়েছি। মুখ্যমন্ত্রীর থেকে সমর্থন পেয়েছি। তাঁর এবং তিন প্রধানের সহযোগিতা না থাকলে কোনও আইএফএ সচিব কাজ করতে পারত না। যখন দায়িত্ব নিই কোনও স্পনসর ছিল না। টেলিভিশন পার্টনার ছিল না। সেখান থেকে এখন আইএফএ-র ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১ কোটি টাকা রয়েছে। ক্লাবগুলো এবং সরকারের সাহায্য ছাড়া এটা সম্ভব হত না। আলাদা করে মহমেডানের কথা বলব। যখন যে ভাবে বলেছি, সাহায্য করেছে। বাংলার ফুটবল দলকে সাহায্য করেছে।
প্রশ্ন: কী বলছেন! ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান তো আপনাদের প্রতিযোগিতা দেখলেই নাক সিঁটকোয়। কলকাতা লিগে খেলেনি দুটো দলই। এটা অসহযোগিতা নয়?
জয়দীপ: দুটো ক্লাবই চেষ্টা করেছিল। ইস্টবেঙ্গলের ঝামেলা ছিল তৎকালীন বিনিয়োগকারীদের নিয়ে। মোহনবাগান এএফসি কাপ খেলতে গিয়েছিল। ওদের পক্ষে খেলা সম্ভব ছিল না। ফেডারেশন বরং সব ক্লাবের সঙ্গে কথা বলে সূচি তৈরি করতে পারত। সূচি তো রাজ্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে কথা কথা বলে করতে হবে। ফেডারেশনকেও আলোচনা করে এগোতে হবে।
প্রশ্ন: নিজেই বলছেন সবার সহযোগিতা পেয়েছেন। কোথাও কোনও সমস্যা নেই। ১ কোটি টাকা ব্যাঙ্কে রেখে যাচ্ছেন। তা হলে আর সরছেন কেন?
জয়দীপ: কেন সরে যাচ্ছি, সেটা সময় যখন আসবে তখন বলব। এখন বললে আইএফএ-র ক্ষতি হয়ে যাবে। সেটা চাই না। ব্যক্তিগত বক্তব্য কখনও আইএফএ-র ঊর্ধ্বে যেন না যায়। শেষ দু’বছর ধরে আইএফএ যে ভাবে দেশের সেরা ফুটবল সংস্থা হয়েছে, ভবিষ্যতেও যেন সেটা হয়। বাংলার ফুটবলে স্পনসরের অভাব হবে না। শুধু খেলা করতে হবে।
প্রশ্ন: ‘স্বেচ্ছাবসর’ নেওয়ার পর কী করবেন?
জয়দীপ: অবসর তো নিচ্ছি না। ফুটবলের মধ্যেই থাকব। যিনি আসবেন, তিনি বাংলার ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আমার সাহায্য সব সময় পাবেন। আমি ফুটবল নিয়েই থাকব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy