গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
বৃহস্পতিবার ফিফা জানিয়ে দিয়েছে, কাতার ফুটবল বিশ্বকাপ এক দিন এগিয়ে আনা হয়েছে। ২০ নভেম্বর শুরু হবে বিশ্বকাপ। অর্থাৎ, আর ঠিক ১০০ দিন বাকি। সময় যত এগিয়ে আসছে, ফুটবলার থেকে কোচেরা বুঝতে পারছেন তাঁদের কাজ কঠিন হতে চলেছে।
কেন?
এ বার মরসুমের মাঝপথে খেলতে হবে ফুটবল বিশ্বকাপ। সাধারণত জুন থেকে অগস্টের মধ্যে কোনও এক মাসে ফুটবল বিশ্বকাপ হয়ে থাকে। সেই প্রথার বদল হচ্ছে। কাতারে জুন-জুলাই মাসে প্রচণ্ড গরম থাকে। সে কারণে নভেম্বর-ডিসেম্বরে, অর্থাৎ তুলনায় মনোরম আবহাওয়াতে ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজন করা হচ্ছে।
এমনিতে ফুটবল বিশ্বকাপ যখন শুরু হয়, তখন বেশিরভাগ দেশগুলিতেই ঘরোয়া মরসুম শেষ হয়ে যায়। বিশ্বকাপের বছরগুলিতে ক্লাবের হয়ে খেলার পরেই বিভিন্ন দেশের ফুটবলাররা জাতীয় দলের শিবিরে যোগ দেন। বিশ্বকাপের আগে কোথাও ১৫ দিন, কোথাও এক মাসের জাতীয় শিবির চলে। এ বার সেটা দেখা যাবে না। কারণ, ভরা মরসুমের মাঝখানে কোনও দেশই এত দিনের জাতীয় শিবির করতে পারবে না। আট দিন, বা খুব বেশি হলে ১০ দিন জাতীয় দলের সঙ্গে থেকেই নেমে পড়তে হবে বিশ্বকাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতায়। আগে কোচেরা দীর্ঘ দিন প্রস্তুতি শিবির করিয়ে যে ভাবে দলকে সাজিয়ে-গুছিয়ে নিতেন, সেটা অন্তত এ বার সম্ভব হবে না। ফুটবলারদের মধ্যে বোঝাপড়া তৈরিতে খামতি থেকে যেতে পারে।
সবচেয়ে সমস্যা হতে চলেছে ইউরোপীয় দেশগুলির। ফুটবল বিশ্বকাপে ইউরোপ থেকেই সবচেয়ে বেশি দেশ খেলে। সেই দেশগুলিতে সাধারণত ফুটবল মরসুম শুরু হয় অগস্টে। চলে পরের বছরের এপ্রিল বা মে মাস পর্যন্ত। ফলে মরসুমের মাঝপথে বিশ্বকাপ খেলতে হবে ইউরোপের ফুটবলারদের।
তা ছাড়া ইউরোপীয় দেশগুলির ঘরোয়া লিগে অগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত অতটাও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা যায় না। কিন্তু ডিসেম্বর-জানুয়ারি থেকে ট্রফি জেতার লড়াই শুরু হয়। বিশ্বকাপে দেশের জন্যে সব ফুটবলারই নিজেদের সেরাটা দেন। ফলে বিশ্বকাপে যদি কোনও ফুটবলার বড় চোট পেয়ে বসেন এবং দু’-তিন মাস বা বাকি মরসুমের জন্য ছিটকে যান, তা হলে ক্লাবগুলির কাছে তা বড় ধাক্কা হতে পারে। এমনিতেই ফুটবলার নিয়ে ক্লাব বনাম দেশের লড়াই রয়েছে। যে কারণে অলিম্পিক্স বা তুলনায় গুরুত্বহীন জাতীয় দলের ম্যাচে বড় কোনও ফুটবলারকে ছাড়তে চায় না ক্লাবগুলি। বিশ্বকাপে সেই উপায় নেই। ফলে আর্জেন্টিনার হয়ে খেলতে গিয়ে লিয়োনেল মেসি বা ব্রাজিলের হয়ে খেলতে গিয়ে নেমার যদি চোট পান, তা হলে তাঁদের ক্লাব প্যারিস সঁ জঁ-কেই ভুগতে হবে। সে ক্ষেত্রে কাতার বিশ্বকাপের পরে ক্লাব বনাম দেশ সঙ্ঘাত আরও বাড়তে পারে।
We’re getting closer! 100 days to go for our national team's World Cup opening game #AlAnnabi pic.twitter.com/B7bOX8mYVs
— Qatar Football Association (@QFA_EN) August 12, 2022
লাতিন আমেরিকার ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু আলাদা। সেখানে বেশির ভাগ দেশে বছরের গোড়া থেকে লিগ শুরু হয়। শেষ হয় নভেম্বর-ডিসেম্বরে। ফলে তাদের ফুটবল মরসুমের মাঝপথে বিশ্বকাপ খেলতে হবে না। কিন্তু ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার মতো দেশ এই সুবিধে পাবে না। কারণ, তাদের লিয়োনেল মেসি, নেমারদের সঙ্গে লাতিন আমেরিকার লিগের কোনও সম্পর্ক নেই। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার অধিকাংশ ফুটবলারই ইউরোপের লিগে খেলেন।
এশিয়ার যে দেশগুলি বিশ্বকাপে খেলছে, তাদেরও সমস্যা হবে। কারণ, প্রতিটি দেশেরই ঘরোয়া মরসুম শুরু হয় বছরের মাঝামাঝি। অস্ট্রেলিয়ায় তো বিশ্বকাপের ঠিক আগে ঘরোয়া লিগ শুরু হচ্ছে। দু’-তিনটি ম্যাচ খেলেই বিশ্বকাপে নেমে পড়তে হবে অজি ফুটবলারদের। কাতার, ইরান, সৌদি আরব এবং জাপানেও একই ব্যাপার।
চিন্তা রয়েছে আবহাওয়া নিয়েও। কাতারের প্রচণ্ড গরমের কথা ভেবে এ বার বিশ্বকাপ এমন সময়ে হচ্ছে, যখন সে দেশে শীতকাল। অতীতে মাত্র তিন বার শীতকালে ফুটবল বিশ্বকাপ হয়েছে। চিলিতে ১৯৬২ সালে, আর্জেন্টিনায় ১৯৭৮ সালে এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০১০ সালে শীতকালে ফুটবল বিশ্বকাপ হয়েছে। কিন্তু তাতেও সমস্যা মিটছে না।
একটা উদাহরণ দিলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে। কাতারে গিয়ে কী ভাবে খেলতে হবে, সেই প্রস্তুতি বিভিন্ন দলে শুরু হয়ে গিয়েছে। টটেনহ্যাম হটস্পার সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রাক-মরসুম প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে গিয়েছিল। সেখানে অসহ্য গরমে খেলতে হয় তাদের। শুধু তাই নয়, এক ঘণ্টার অনুশীলনের পর দলের ফিটনেস কোচ হ্যারি কেনদের নির্দেশ দেন, ৪২ বার মাঠে চক্কর কাটতে। বলা বাহুল্য, কেউই তা পারেননি। মাঝপথেই হাল ছেড়ে দিয়ে হাঁপাতে থাকেন বেশির ভাগ ফুটবলার। নভেম্বর-ডিসেম্বরে বিশ্বকাপ হলেও কাতারে গরম এবং আর্দ্রতার সম্মুখীন হতে হবে। ফলে সব দেশের কাছেই এ বারের বিশ্বকাপ অন্য রকম। কঠিন লড়াই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy