মেসি এবং এমবাপে কি সেমিফাইনালের লড়াইয়ে জিততে পারবেন? ছবি: রয়টার্স
বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারানোর রাতে কিছুটা অন্যমনস্ক লাগছিল ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশঁকে। কিছু ক্ষণ আগেই তাঁর দল হাড্ডাহাড্ডি, লড়াকু ম্যাচে হারিয়েছে ইংল্যান্ডকে। তিনি যেন তাঁর থেকে কিছুটা দূরেই। বাঁশি বাজার পর সাংবাদিক বৈঠক এসে তিনি বলেন, “বেশ মজা লেগেছে খেলে।”
দেশঁর অভিব্যক্তি বোঝা তেমন কিছু কঠিন নয়। বিশ্বকাপের আগে যে ভাবে ফ্রান্সের একের পর এক ফুটবলার চোট পেয়ে ছিটকে যাচ্ছিলেন, তাতে এত দূর পর্যন্ত উঠে আসা ফ্রান্সের কাছে কিছুটা স্বপ্নের মতোই। অনেকেই হয়তো তা বিশ্বাস করবেন না। কিন্তু দেশঁ জানেন সেটা। গত বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পিছনে যাঁরা ছিলেন, তাঁদেরই এ বারে পাননি তিনি। ছিলেন কিলিয়ান এমবাপে। কিন্তু ফুটবলে এক জনের উপর ভরসা রেখে স্বপ্ন দেখার বোকামি তাঁর মতো ধুরন্ধর কোচ করবেনই না। সেমিফাইনালে উঠে ফ্রান্স ইতিমধ্যেই পিছনে ফেলে দিয়েছে ব্রাজিল, স্পেন, জার্মানিকে, যারা সত্যিকারের দাবিদার হিসাবে খেলতে এসেছিল বিশ্বকাপে।
দুটো সেমিফাইনালের দিকে তাকালে একটা মিল খুঁজে পাওয়া যাবে। চারটি দলের মধ্যে দু’টি দল রয়েছে, যারা ধারেভারে অনেক বড় এবং ট্রফি জেতার দাবিদার। বাকি দু’টি দলকে কেউই হিসাবের মধ্যে রাখেননি। হিসাবের মধ্যে না রাখা এই দু’টি দলই সব হিসাব বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। সাধেই কি আর দেশঁ বলেছেন, “যে কোনও দল কাপ জিততে পারে।” গত তিন সপ্তাহ ধরে যা চলেছে, তাতে দেশঁর কথার বিরোধিতা করা খুবই মুশকিল।
আর্জেন্টিনার কথাই ধরা যাক। তাদের ছন্দ যেন কাতারের আবহাওয়ার মতোই। কখনও গরম, কখনও ঠান্ডা। পাঁচটি ম্যাচে ধীরে ধীরে তাদের দল হিসাবে তৈরি হতে দেখা গিয়েছে। প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে অবিশ্বাস্য হারের ধাক্কা ছিল। শেষ ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে জিততে হয়েছে। মেসি ছাড়া আর্জেন্টিনার মহাতারকা বলতে আর কেউ নেই। মেসিকে ঘিরেই চলছে যাবতীয় স্বপ্নের আনাগোনা। মেসিকে দেখেই বাকি ফুটবলারদের মধ্যে শক্তির সঞ্চার হচ্ছে। মাঠের মধ্যেও আর্জেন্টিনার খেলায় শান্ত মনোভাব দেখা যাচ্ছে। নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ম্যাচের বেশির ভাগ সময়ে দাপট ছিল আর্জেন্টিনারই। তবে ২ গোল হজম করেও টাইব্রেকারে যে ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তারা, তার প্রশংসা করতেই হবে।
আর্জেন্টিনা এ বার এমন একটা দলের সামনে, যারা হারতে ভয় পায় না। কিন্তু হারার আগে এমন লড়াই দেবে, যা নিঃসন্দেহে বিচলিত করবে প্রতিপক্ষকে। গত দু’টি বিশ্বকাপ তাদের সামনে যারাই এসেছে, বিফল মনোরথ নিয়ে ফিরে গিয়েছে। গত বারের ফাইনালে হারের পিছনে অনেকে ক্রোয়েশিয়ার খেলোয়াড়দের ক্লান্তির কথা তুলে ধরেছিলেন। এ বার কিন্তু দু’টি ম্যাচই টাইব্রেকারে গেলেও ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলারদের মধ্যে ক্লান্তি দেখা যায়নি।
দেশঁ আবার অন্য একটি কারণে ভয় পাচ্ছেন। ইংল্যান্ডকে হারানোর পর দল আবার আত্মপ্রসন্ন হয়ে গিয়ে হেরে না বসে। এমনিতে টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের মুখে রয়েছে ফ্রান্স। ১৯৬২-তে ব্রাজিলের পর আবার সেই কীর্তি ছোঁয়ার সুযোগ। কিন্তু ছন্দ বজায় রাখাটাই আসল কাজ তাদের সামনে। ফ্রান্সে রয়েছেন কিলিয়ান এমবাপে, যিনি শুধু দলের সেরা ফুটবলারই নন, রয়েছেন সোনার বুটের দৌড়ে। ইংল্যান্ড ম্যাচের আগে ছাড়া সে ভাবে তাঁদের পরীক্ষিত হতে হয়নি। সেই ম্যাচেও বেশির ভাগ সময়ে খেলেছে ইংল্যান্ড। কিন্তু জিতেছে ফ্রান্স।
দু’টি বিষয় দেশঁকে চিন্তায় রাখতে পারে। প্রথম হল, মরক্কোর চোয়াল চাপা মানসিকতা। ওয়ালিদ রেগ্রাগুইয়ের ছেলেরা পর্তুগাল, স্পেন, বেলজিয়াম, ক্রোয়েশিয়ার মতো দলের বিরুদ্ধে খেলেছে। কারওর কাছে একটিও গোল খায়নি। কানাডার বিরুদ্ধে শুধু আত্মঘাতী গোল হয়েছে। যদি কেউ এমবাপেকে থামানোর ক্ষমতা রাখেন, তা হলে প্যারিস সঁ জরমঁ-য় তাঁর সতীর্থ আশরফ হাকিমি। দ্বিতীয় বিষয়টি হল, ফ্রান্সের মনে হতে পারে তারা বিশ্বকাপ নয়, মরক্কোর মাঠে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে নেমেছে। কাতার বিশ্বকাপে মরক্কোর সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকে তাদের সমর্থন করছেন। ম্যাচের সারা ক্ষণ শিস দিয়ে, ড্রাম পিটিয়ে গর্জন করে চলেছেন তাঁরা।
মরক্কো শুধু আফ্রিকার প্রথম নয়, আরব দুনিয়ার প্রথম প্রতিনিধি হিসাবে সেমিফাইনালে উঠেছে। কাতার আরবীয় হওয়ায় সেই দেশের অনেকে তাদের পাশে। নিজেদের খেলা নিয়ে কাতারিরা লজ্জিত হলেও, এই বিশ্বকাপে সমর্থন করার মতো আর একটি দল তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন। প্রতিটি ম্যাচেই সেটা বোঝা গিয়েছে। হয়তো এই বিশ্বকাপে মরক্কোর থেকেও কঠিন প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হবে ফ্রান্স। কিন্তু সেমিফাইনালের মতো পরিবেশ যে তারা পাবে না, এটা বলেই দেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy