Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
FIFA World Cup 2022

দেশে শিয়রে বিপদ, তবু মেসি আর বিশ্বকাপে বুঁদ আর্জেন্টিনা

আর্জেন্টিনার মানুষের বিশ্বাস, মুদ্রাস্ফিতির হার তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছলে ক্রীড়া ক্ষেত্রে বড় সাফল্য আসে। তাঁরা মনে করছেন বিশ্বকাপের সঙ্গেই আসবে অর্থনৈতিক সুদিন। উদ্ধার করবেন মেসি।

সুদিনের জন্য মেসির দিকেই তাকিয়ে অর্থনৈতিক দুরবস্থায় থাকা আর্জেন্টিনার মানুষ।

সুদিনের জন্য মেসির দিকেই তাকিয়ে অর্থনৈতিক দুরবস্থায় থাকা আর্জেন্টিনার মানুষ। ছবি: টুইটার।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২২ ২১:৩৫
Share: Save:

আর্জেন্টিনার অর্থনৈতিক অবস্থা সঙ্কটজনক। তবু কাজ কর্ম শিকেয় তুলে বিশ্বকাপ নিয়ে মেতে রয়েছেন আর্জেন্টিনার মানুষ। বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসের অগ্নিমূল্য। তাও দেশের অর্থনীতির স্বাস্থ্য ফেরা নিয়ে উদ্বিগ্ন নন সে দেশের মানুষ।

জাদুর আশায় আর্জেন্টিনা। জাদুকরের নাম লিয়োনেল মেসি। আর্জেন্টিনার মানুষ বিশ্বাস করছেন, মেসির পায়ের জাদুতে ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ দেশে আসছেই। বিশ্বকাপের সঙ্গেই আসবে সুদিন। অর্থনৈতিক সঙ্কট ঘুচবে। কমবে মুদ্রাস্ফিতি। মানুষের এই বিশ্বাসের পিছনেও রয়েছে এক কারণ। তাঁদের বিশ্বাস, মুদ্রাস্ফিতির হার তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছলেই নাকি ক্রীড়া ক্ষেত্রে বড় সাফল্য আসে।

সে দেশের সরকারের সূত্র অনুযায়ী, গত নভেম্বরে আর্জেন্টিনায় মুদ্রাস্ফিতির হার ছিল ৮৮ শতাংশ। যা পূর্বাভাসের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। সরকার জানিয়েছে, ডিসেম্বরে মুদ্রাস্ফিতির হার আরও ছয় শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। সাধারণ মানুষ অবশ্য মনে করছেন, বিশ্বকাপ জ্বরে কাজ কর্ম যে ভাবে শিকেয় উঠেছে তাতে নভেম্বরের মুদ্রাস্ফিতি বৃদ্ধির হার বজায় থাকবে ডিসেম্বরেও। তা হলেই মুদ্রাস্ফিতির হার তিন অঙ্কে পৌঁছে যাবে। যা ঘরে বিশ্বকাপ আসারই ইঙ্গিত।

আর্জেন্টিনায় মুদ্রাস্ফিতি নতুন কোনও বিষয় নয়। গত এক দশক ধরে মুদ্রাস্ফিতি অভ্যাস হয়ে গিয়েছে সে দেশের মানুষের। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশ ছোঁয়া হলেও তাঁরা আর অবাক হন না। বিশ্বকাপ শুরুর আগে আর্জেন্টিনার শ্রমমন্ত্রী কেলি অলমোস বলেছিলেন, ‘‘বিশ্বকাপ জয়ের থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রাস্ফিতির হারে লাগাম টানা। আমাদের ধারাবাহিক ভাবে কাজ চালিয়ে যেতে হবে মুদ্রাস্ফিতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য।’’ দেশের মানুষকে বিশ্বকাপের আবহে গা না ভাসিয়ে স্বাভাবিক কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। যদিও মেনে নিয়েছিলেন, এক মাস মুদ্রাস্ফিতির হারে বিরাট কিছু পরিবর্তন করতে পারবে না। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘‘আর্জেন্টিনার সব মানুষের মতো আমিও চাই এ বার বিশ্বকাপ আমাদের দেশে আসুক। ফুটবল নিয়ে মানুষের আবেগের কোনও বিকল্প হতে পারে না। দেশের মানুষের এই উৎসবটাও প্রাপ্য।’’

তাঁর আহ্বান নিয়ে আর্জেন্টিনার ফুটবলপ্রেমী জনতার কোনও আগ্রহ নেই। এখন তাঁদের বিশ্বকাপ ছাড়া কিছুতেই আগ্রহ নেই। কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে মেসিরা হারানোর পর থেকেই সাধারণ মানুষ মেতে রয়েছেন ফুটবল নিয়ে। দোকান-বাজার ঠিক মতো খুলছে না। অফিসগুলোয় ঠিক মতো কাজ হচ্ছে না। কমেছে শিল্পের উৎপাদনও।

বহু মানুষ ইচ্ছা থাকলেও কাতারে বিশ্বকাপ দেখতে যেতে পারেননি অর্থের অভাবে। দেশের অর্থনীতির দুরবস্থার জন্য বহু মানুষের আয় কমেছে। অনেকে কাজও হারিয়েছেন। ৩৮ বছরের হাসপাতাল কর্মী লুক্রেসিয়া প্রেসডিগার বলেছেন, ‘‘মানুষ সমস্যা সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। তবু ফুটবল আর অর্থনীতি এক রাস্তায় হাঁটে না। নানা সমস্যার মধ্যে বিশ্বকাপে দলের পারফরম্যান্সই এক মাত্র আনন্দ দিচ্ছে মানুষকে। সকলেই জানেন, কাজ করলেও অর্থনীতির সমস্যা কমবে না। তাই কেউ এই আনন্দ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চাইছেন না।’’

সাধারণ মানুষ চিন্তিত না হলেও উদ্বিগ্ন শাসক দল। ১০ মাস পর আর্জেন্টিনায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। লাগামহীন মুদ্রাস্ফিতি নির্বাচনের ফলে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন শাসক দলের নেতারা। তাঁরাও অনেকে মনে করছেন, তাঁদের সমস্যার সমাধান করবেন মেসি। বিশ্বকাপ ঘরে এলেই অর্থনীতির চাকা ঘুরবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy