Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
FIFA World Cup 2022

মারাদোনার মতোই আর্জেন্টিনাকে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছে মেসি

ফাইনালে মেসির প্রতিপক্ষ খুব শক্তিশালী ফ্রান্স দল। যাদের দেখে মনে হচ্ছে, গাড়িতে ‘ব্রেক’ বলে কোনও জিনিস নেই। আছে শুধু ‘অ্যাক্সিলেরেটর’। সহজে হার মানবে না।

বিশ্বকাপে এই শেষ। বিশ্বের নজর মেসির উপরেই।

বিশ্বকাপে এই শেষ। বিশ্বের নজর মেসির উপরেই। ছবি: রয়টার্স।

জিকো
শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:১১
Share: Save:

কাতার বিশ্বকাপ যত এগিয়েছে, ততই যেন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে লিয়োনেল মেসি। সৌদি আরবের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচেই ও পেনাল্টি থেকে গোল করেছিল। কিন্তু সেই ম্যাচ হেরে গিয়ে জোর ধাক্কা খেয়েছিল আর্জেন্টিনা। তার পর থেকে প্রত্যেকটা ম্যাচ ওদের কাছে নক-আউটের মতো ছিল। আর প্রত্যেকটা ম্যাচেই যেন উন্নতি করতে থাকল মেসি। যত চাপ বেড়েছে, ততই যেন মঞ্চ দখল করে নিয়েছে জাদুকর। ততই ওর খেলা দেখে সম্মোহিত হচ্ছে জনতা।

ফাইনালে মেসির প্রতিপক্ষ খুব শক্তিশালী ফ্রান্স দল। যাদের দেখে মনে হচ্ছে, গাড়িতে ‘ব্রেক’ বলে কোনও জিনিস নেই। আছে শুধু ‘অ্যাক্সিলেরেটর’। সহজে হার মানবে না। তবু মেসি এমন এক চরিত্র, যার জয়ের প্রার্থনা চলবে সারা বিশ্বের নানা কোণে।

কোনও সন্দেহ নেই, মেসিই আর্জেন্টিনার নায়ক। নাটকের প্রধান চরিত্র। সেই ভূমিকা সার্থক ভাবে পালন করে চলেছে ও। যখন গোল করার দরকার পড়েছে, করেছে। যখন গোলের বল সাজিয়ে দিতে হচ্ছে, দিচ্ছে। খেলা তৈরি করছে, জায়গা ‘ওপেন’ করে দিচ্ছে, গোলের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে, নিজেও দুর্দান্ত ফিনিশ করছে। মেসি এমন একজন ফুটবলার, যার পায়ের জাদু দেখার অপেক্ষায় থাকে সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরা। সেই প্রত্যাশা ও পূরণ করে চলেছে। মারাদোনার মতোই দলকে নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বকাপ জেতানোর স্বপ্ন দেখাচ্ছে ও।

মারাদোনা, মেসি, রোনাল্ডো, এমবাপে বা নেমারের মতো ফুটবলারের থেকে আমরা কী দেখতে চাই? দেখতে চাই নিজেদের কাঁধে ওরা দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে স্বপ্নপূরণের দিকে নিয়ে যাচ্ছে দেশবাসীকে। কাতারে আর্জেন্টিনার হয়ে ঠিক সেটাই করে চলেছে মেসি।

ব্রাজিলে গত কয়েক দিনে সব ইন্টারভিউয়ে আমি বিশ্বকাপ ফাইনাল নিয়ে একই পুর্বাভাস করে গিয়েছি। বলতে লজ্জা নেই, আমার পূর্বাভাস পঞ্চাশ শতাংশ মিলেছে। আমি চারটে দলের কথা বলেছিলাম, যাদের মধ্যে যে কোনও দু’টি ফাইনালে খেলতে পারে। এদের মধ্যে ব্রাজিল আর ইংল্যান্ড পারেনি। আর্জেন্টিনা আর ফ্রান্স পেরেছে।

ফ্রান্স বেশ কয়েক জনকে চোটের জন্য হারানোর পরেও যে ফুটবল খেলেছে, অসাধারণ। আমার মতে গ্রিজ়ম্যান বিশ্বকাপে সবচেয়ে উন্নতি করা ফুটবলার। আর্জেন্টিনা তেমনই শুরুতে ধাক্কা খেয়েছিল। যে ম্যাচটা তাদের সহজেই পেরিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, সেটাই হেরে অনিশ্চয়তায় মুড়ে দিয়েছিল নিজেদের ভাগ্যকে। আমার মনে হয়, সৌদি আরবের কাছে হার আর্জেন্টিনাকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করে তুলেছিল। শুরুতেই নিজেদের ভুলগুলো শুধরে নিতে পেরেছে ওরা। বাড়তি তাগিদ আর ইচ্ছাশক্তি নিয়ে ওরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে এর পর থেকে।

আর্জেন্টিনার এই প্রত্যাবর্তন ১৯৯০-এর দলটাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। যারা সেবার প্রথম ম্যাচেই ক্যামেরুনের কাছে হেরে গিয়েছিল। তার পর জিততে শুরু করে এবং ফাইনালে পৌঁছে যায়। ফাইনালে যদিও ওরা হেরে যায় জার্মানির কাছে। তার আগের বারই দিয়েগো মারাদোনার অসাধারণ ফুটবল ওদের কাপ জিতিয়েছিল। তখন ছিল মারাদোনা। এখন আর্জেন্টিনার অভিযানকে নেতৃত্ব দিচ্ছে মেসি। কখনও-সখনও প্রথম ম্যাচে ধাক্কা খাওয়া একটা দলকে চাঙ্গা করে তুলতে পারে। ১৯৯০-এর পর ২০২২-এও সেটাই দেখা গেল আর্জেন্টিনার ক্ষেত্রে। প্রথম ম্যাচ হারার পরে গ্রুপের অন্য ম্যাচগুলোতে বিরাট কিছু প্রতিরোধের সামনে পড়তে হয়নি আর্জেন্টিনাকে। মেক্সিকো দারুণ কিছু খেলছিল না। পোল্যান্ড যোগ্যতা অর্জন পর্বেই হোঁচট খাচ্ছিল। নক-আউটে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়া। ওরা কিন্তু সহজে ছাড়েনি। চোখে চোখ রেখে লড়েছিল। তবে ওই ম্যাচটার পর থেকে অন্য এক আর্জেন্টিনাকে দেখতে পেয়েছি। যাদের অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছে। এর পরের ম্যাচগুলো ওরা শাসন করে জিতেছে। নেদারল্যান্ডস ম্যাচে শেষ মুহূর্তে যখন ওরা গোল খেল, তখনও কিন্তু আর্জেন্টিনা দারুণ খেলছিল।

আরও দু’টো দলের কথা বলতেই হবে। ক্রোয়েশিয়া এবং মরক্কো। অনেকেই হয়তো প্রতিযোগিতার শুরুতে এই দু’টো দলকে নিয়ে খুব আশা দেখেনি। ক্রোয়েশিয়া দেখিয়ে দিল, গত বার ফাইনাল খেলাটা মোটেও ফ্লুক ছিল না। কাতারে ওরা দারুণ শুরু করতে পারেনি। কিন্তু যত সময় এগিয়েছে, সকলকে চমকে দেওয়ার মতো ফুটবল খেলেছে। শনিবার ওরা এমন একটা দলের বিরুদ্ধে তৃতীয় স্থানের জন্য লড়াই করতে নামছে, যারা এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর দল। মরক্কোকে নিয়ে যা-ই বলি না কেন, কম হয়ে যাবে। ওদের খেলা দেখে আমি উচ্ছ্বসিত। এমন একটা দল, যারা কাউকে ভয় পায়নি। দুর্দান্ত উদ্যম নিয়ে আগ্রাসী ফুটবল খেলে গিয়েছে। শুধু রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলেনি মরক্কো। এমন মনোভাব নেয়নি যে, ম্যাচটা যেন না হারি। ওরা প্রতিপক্ষের উপরে সারাক্ষণ চাপ তৈরি করে গিয়েছে নৈপুণ্য ও টেকনিক্যাল খেলা দিয়ে। ফ্রান্সের মতো শক্তিশালী দলের সঙ্গেও সমানে টক্কর দিয়ে গিয়েছে মরক্কো। প্রবল চাপ তৈরি করেছিল গত বারের চ্যাম্পিয়নদের উপরে। ওরা ফাইনালে উঠলেও অবাক হওয়ার ছিল না।

বিশ্বকাপে কতটা মরিয়া ভাব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া যায়, তা মরক্কোকে দেখে অনেকে শিখতে পারে। ওরা দেখিয়েছে, যদি তুমি বিশ্বাস রাখো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে, তা হলে পারবে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে চাই, শনিবারের তৃতীয় স্থান নির্ধারণের ম্যাচটা জিতুক মরক্কো। তা হলে ওরা সব লড়াইয়ের যোগ্য পুরস্কার পাবে। আফ্রিকার ফুটবলের জন্যও দারুণ এক মুহূর্ত তৈরি হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

FIFA World Cup 2022 Argentina france Lionel Messi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy