অনুশীলনের ফাঁকে লিয়োনেল মেসি। মঙ্গলবার কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে। ছবি রয়টার্স।
কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেনিং গ্রাউন্ড থ্রি-তে সোমবার সন্ধেয় অনুশীলন শুরু হওয়ার ঠিক আগে আর্জেন্টিনা কোচিং দলের এক সদস্য লিয়োনেল মেসিকে কিছু বলতেই হেসে উঠলেন তিনি।
চব্বিশ ঘণ্টা আগেই মেক্সিকোর বিশ্বজয়ী বক্সার সান্তোস (কানেলো) আলভারেস হুমকি দিয়েছিলেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ককে। কিংবদন্তি বক্সার মাইক টাইসন মঙ্গলবার মেসির পাশে দাঁড়িয়ে পাল্টা হুঙ্কার দিয়েছেন, ‘‘কানেলো নামের এক জন মেসিকে হুমকি দিয়েছে। ও যদি মেসিকে স্পর্শ করার দুঃসাহস দেখায়, তা হলে আমাকে এত বছর পরে আবার রিংয়ে ফিরতে হবে।’’ পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে মরণ-বাঁচন ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু করার আগে মেসি কি হেসে উঠলেন টাইসনের মন্তব্য শুনেই? হতেও পারে।
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বুধবার স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ পোল্যান্ড ম্যাচের ফলের উপরেই। জিতলে শেষ ষোলো নিশ্চিত। ড্র করলে তাকিয়ে থাকতে হবে জটিল অঙ্কের দিকে। আর্জেন্টিনা যদি ড্র করে, এই গ্রুপের অন্য ম্যাচে মেক্সিকো বনাম সৌদি আরব দ্বৈরথও অমীমাংসিত থাকে, সে ক্ষেত্রে শেষ ষোলোয় পৌঁছে যাবেন মেসিরা। নয়তো মেক্সিকো-কে অন্তত দু’গোলের ব্যবধানে হারাতে হবে সৌদি আরবকে।
আর হারলে...বিশ্বকাপ জিতে দিয়েগো মারাদোনার নজির স্পর্শ করার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে মেসির।
দোহার রাস আবু আবুদে সমুদ্রের ধারে স্টেডিয়াম ৯৭৪ গড়ে তোলা হয়েছে জাহাজের কন্টেনার দিয়ে। বিশ্বকাপ পর্যন্তই আয়ু এই স্টেডিয়ামের। তার পরে কন্টেনারগুলির আবার জায়গা হবে জাহাজে। মঙ্গলবারের বিকেলে দোহা শহর দেখতে বেরোনো এক দল পোল্যান্ড সমর্থক বিদ্রুপের সুরে বলেই দিলেন, ‘‘বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার কী ভবিষ্যৎ হতে চলেছে, তা অনুমান করেই সম্ভবত ফিফা স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ মেসিদের শেষ ম্যাচ দিয়েছে। পোল্যান্ডের কাছে হারের পরে যাতে এই কন্টেনারগুলির মধ্যে আর্জেন্টিনাকে পুরো দলটা ভরে ফেরত পাঠানো যায়!’’
আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের সমর্থকদের কাছে দোহা শহরের আকর্ষণ একেবারেই নেই। লাতিন আমেরিকার দুই ফুটবল প্রধান দেশের ভক্তরা প্রায় সকলেই থাকছেন শহর থেকে অনেকটাই দূরে বিভিন্ন সমুদ্র সৈকতে। ব্রাজিলীয়দের যেমন পছন্দ সিমাইসমা বিচ। আর্জেন্টিনীয়রা প্রিয় খোর আল আদাইদের সমুদ্র সৈকতে অথবা আরও দূরে দোহার উত্তর-পূর্বে আল মারোনায়। ম্যাচের দিন ছাড়া শহরমুখী হচ্ছেনই না তাঁরা।
এর আগে সব বিশ্বকাপেই আর্জেন্টিনার বহু সমর্থক টিম হোটেলের সামনে তাঁবুতে বা ক্যারাভ্যানে থাকতেন। মেসিরা এখানে রয়েছেন কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে। সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারের সামনে দাঁড়িয়ে যে তাঁরা প্রিয় ফুটবলারদের দেখবেন, উজ্জীবিত করবেন, সেই সম্ভাবনাও নেই। গেট থেকে ছেলেদের হস্টেলে পৌঁছতে গাড়িতেই তো মিনিট দশেক লেগে যায়। অত দূর দাঁড়িয়ে থাকা অর্থহীন। যদি বিশ্বকাপের চেনা আবহ থাকত কাতারে, মঙ্গলবার দুপুরে নিশ্চিত ভাবেই ধুন্ধুমার বেধে যেত। কেউ আটকাতে পারতেন না দুই দেশের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ।
সমর্থকদের মতো পোল্যান্ডের সাংবাদিকদের আত্মবিশ্বাসও বিস্মিত করার মতো। কে বলবে চব্বিশ ঘণ্টা পরেই তাঁদের প্রতিপক্ষ দু’বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। নীল-সাদা জার্সি পরে মাঠে নামবেন মেসির মতো কিংবদন্তি। যে কোনও মুহূর্তে ম্যাচের রং বদলে দিতে পারার ক্ষমতা রয়েছে তাঁর। এ দিন বিকেলে দোহা কনভেনশন সেন্টারে সাংবাদিক বৈঠকে কোচ লিয়োনেল স্কালোনি ও ডিফেন্ডার লেসান্দ্রোর কাছে তাঁদের প্রধান প্রশ্নই ছিল, লেয়নডস্কিকে আটকানোর শক্তি কি রয়েছে আর্জেন্টিনা রক্ষণের? শান্ত স্বরে আর্জেন্টিনীয় কোচ বললেন, ‘‘লেয়নডস্কি বিশ্বের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার। দুরন্ত ছন্দে রয়েছে। তবে আমরাও তৈরি। সকলেই জানে এই ম্যাচের উপরেই আমাদের বিশ্বকাপের ভাগ্য নির্ভর করছে। তাই জেতা ছাড়া অন্য কিছুই ভাবতে চাই না এই মুহূর্তে।’’ মার্তিনেস বললেন, ‘‘প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হার থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছিলাম বলেই মেক্সিকোর বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতে সফল হয়েছিলাম। বুধবার পোল্যান্ডের বিরুদ্ধেও একই মানসিকতা ও রণকৌশল নিয়ে খেলব।’’
দু’টি ম্যাচের একটিতে জয় ও একটি ড্র করে চার পয়েন্ট নিয়ে এই মুহূর্তে ‘সি’ গ্রুপের শীর্ষ স্থানে রয়েছেন লেয়নডস্কিরা। ১৯৮৬ সালের পরে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনের হাতছানি তাঁদের সামনে। আর্জেন্টিনা কোচের মতে বুধবারের ম্যাচে রক্ষণ শক্তিশালী করেই খেলবে পোল্যান্ড। বললেন, ‘‘ওরা আমাদের বিরুদ্ধে ঝুঁকি নেওয়ার চেষ্টা করবে না। অপেক্ষা করবে সুযোগের। আমরা অবশ্য চিন্তিত নই। আমাদের রণকৌশলও তৈরি।’’ পোল্যান্ডের সমর্থক ও সাংবাদিকরা আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ম্যাচের এক দিন আগেই ধরে নিয়েছেন, জয় নিশ্চিত। ব্যতিক্রম কোচ চেস্টওয়াফ মিখনিয়েভিচ। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে সাংবাদিক বৈঠকে মেসিকে নিয়ে উচ্ছ্বাস লুকিয়ে রাখতে পারলেন না তিনি। বললেন, ‘‘মেসি বিশ্বের সেরা ফুটবলার। আমিও ভক্ত ওর। বার্সেলোনায় যখন মেসি ছিল, বহুবার ওর খেলা দেখতে স্পেনে গিয়েছি।’’ যোগ করলেন, ‘‘মেসির মতো শিল্পীকে আটকানোর জন্য কোনও পরিকল্পনাই যথেষ্ট নয়। তবুও আমাদের লক্ষ্য থাকবে ওঁকে গোল করতে না দেওয়া।’’ পোল্যান্ডের এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, ‘‘আর্জেন্টিনা তো এই বিশ্বকাপে সে ভাবে গোল করার সুযোগ তৈরিই করতে পারছে না...’’ পোলিশ কোচ তাঁকে থামিয়ে বলে দিলেন, ‘‘যে দলে মেসি খেলে, তাদের খুব বেশি সুযোগ তৈরির করার প্রয়োজনও হয় না। মেক্সিকোর বিরুদ্ধেই প্রমাণ করেছে আর্জেন্টিনা।’’
পোল্যান্ড কোচের ভবিষ্যদ্বাণী মিলিয়ে দিতে মরিয়া মেসিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy