অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
রাজ্য জুড়ে বিজেপি-বিরোধী বিক্ষোভেই বছরের শেষ ঘোষিত রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে সংবিধান প্রণেতা বি আর অম্বেডকরের ‘অসম্মান’ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা এই কর্মসূচিতে তৃণমূলের প্রবীণদের সক্রিয়তাই বেশি নজরে এসেছে। পাশাপাশি, রাজ্যব্যাপী কর্মসূচিতে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকাশ্য অনুপস্থিতি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। অম্বেডকর এবং সংবিধানকে অবমাননার দায়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ক্ষমাপ্রার্থনা ও ইস্তফার দাবি বহাল রেখেছে কংগ্রেসও।
সংসদে সংবিধান নিয়ে আলোচনায় শাহের মন্তব্য নিয়ে কয়েক দিন ধরেই সরব বিরোধীরা। সেই প্রতিবাদে শামিল হতেই রাজ্য জুড়ে এক ঘণ্টার বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। কলকাতা-সহ রাজ্যের সব জেলায় সোমবার বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রী ও জনপ্রতিনিধিরা। কলকাতায় অম্বেডকের মূর্তিতে মালা দিয়ে প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করেছেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার-সহ অন্য নেতারাও। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ দলের মিছিলে অংশ নেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, সুজিত বসু, সাংসদ মালা রায়। সকালেই উত্তর কলকাতায় দলের পুর-প্রতিনিধি ও নেতাদের সঙ্গে মিছিল ও সভা করেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। পথে নেমেছিলেন মন্ত্রী শশী পাঁজা। কলেজ স্ট্রিটের মিছিলে ছিলেন দলের ছাত্র সংগঠনের সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য।
উত্তর ২৪ পরগনায় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, হাওড়ায় দুই মন্ত্রী অরূপ রায়, পুলক রায়, হুগলিতে বেচারাম মান্না, শিলিগুড়িতে মিছিলে নেতৃত্ব দেন মেয়র গৌতম দেব। তবে বহু জেলায় অভিষেকের মতোই তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি, নবীন নেতাদের উৎসাহের অভাব চোখে পড়েছে। অন্যান্য বড় কর্মসূচিতে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অভিষেক এবং দল হিসেবে তৃণমূলের সমাজমাধ্যমে যে ধরনের প্রচার থাকে, তা-ও চোখে পড়েনি এই বিক্ষোভ কর্মসূচিকে ঘিরে। এই সূত্রে দলের সংগঠন নিয়ে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ টানাপড়েন ফের চর্চায় এসেছে।
এই নিস্পৃহতার কথা মেনেও দলের এক শীর্ষ নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত কর্মসূচিতে আলাদা করে কোনও অংশের সক্রিয়তা দেখা অর্থহীন!’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘অভিষেক সংসদ চলাকালীনই এ ব্যাপারে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন। তা ছাড়া, চোখের কারণেই হয়তো এই রকম কর্মসূচিতে এখনও অংশ নিতে সমস্যা রয়েছে তাঁর।’’
এআইসিসি-র নির্দেশ মাফিক সব রাজ্যেই এ দিন অম্বেডকর-প্রশ্নে সরব হয়ে শাহের ক্ষমা চাওয়া ও পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়েছেন কংগ্রেস নেতারা। অম্বেডকরকে কংগ্রেস কখনও সম্মান দেয়নি যে বলে যে পাল্টা অভিযোগ বিজেপি নেতারা তুলেছেন, তার প্রেক্ষিতে কলকাতায় বিধান ভবনে এ দিন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘‘আদানি-কাণ্ড থেকে নজর ঘোরাতে অম্বেডকর নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তার পরেও বিজেপি বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করছে। অম্বেডকর দেশের আইনমন্ত্রী হয়েছিলেন, তাঁর আনা ‘হিন্দু কোড বিল’ জনসঙ্ঘের নেতারা সমর্থন করেননি। পরে কেন্দ্রীয় সরকার যখন তাঁকে ‘ভারতরত্ন’ দেয়, তাতেও বিজেপির কোনও ভূমিকা ছিল না।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের বক্তব্য, ‘‘আদানির বিরুদ্ধে সরব রাহুল গান্ধীকে খুনের ষড়যন্ত্র করছে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার। তাই আমরা রাজ্যের সব থানায় শাহ ও মোদী সরকারের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছি।’’ এআইসিসি-র কর্মসূচি মেনে আজ, মঙ্গলবার জেলা ও ব্লক স্তরে ‘অম্বেডকর সম্মান যাত্রা’র ডাক দিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস। পাঁচ বাম দল সিপিএম, সিপিআই, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন, আরএসপি এবং ফরওয়ার্ড ব্লকও শাহের ইস্তফার দাবি সামনে রেখে আগামী ৩০ ডিসেম্বর দেশ জুড়ে প্রতিবাদ দিবসের ডাক দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy