Advertisement
E-Paper

অপরিচিত ইংল্যান্ড নামবে স্পেনের বিরুদ্ধে! ইউরো ফাইনালে ইতিহাস গড়ার সুযোগ ‘নতুন’ ইংরেজদের

কখনও পেনাল্টি ফস্কানো, কখনও টাইব্রেকারে হার, কখনও আবার অখ্যাত কোনও দেশের বিরুদ্ধে হেরে যাওয়া। এটাই ইংল্যান্ডের সমর্থকদের কাছে পরিচিত দৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। এ বারের ইউরোয় খেলছে এক অন্য ইংল্যান্ড।

England

ইউরো কাপের ফাইনালে হ্যারি কেনের ইংল্যান্ড। ছবি: রয়টার্স।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪ ১৫:৫৫
Share
Save

ফুটবলে ইংল্যান্ড মানেই একের পর এক প্রতিযোগিতা থেকে হতাশা নিয়ে বাড়ি ফেরা। কখনও পেনাল্টি ফস্কানো, কখনও টাইব্রেকারে হার, কখনও আবার অখ্যাত কোনও দেশের বিরুদ্ধে হেরে যাওয়া। এটাই ইংল্যান্ডের সমর্থকদের কাছে পরিচিত দৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। ১৯৬৬ সালের পর কোনও বড় ট্রফি জিততে না পারা দেশের কাছে খেতাব জয় শুধুই স্বপ্ন হয়ে থেকে যেত।

রবিবার ইউরো কাপে স্পেনের বিরুদ্ধে ফাইনাল খেলতে নামার আগে যদিও সমর্থকেরা ট্রফি জয়ের আশায় বুক বাঁধবেন। কারণ শেষ কয়েক বছরে ইংল্যান্ড বদলে গিয়েছে। গ্যারেথ সাউথগেটের প্রশিক্ষণে ইংল্যান্ড এখন নক আউটে কেঁপে যায় না, টাইব্রেকারে জিততে জানে। রবিবার রাতে যে ইংরেজ দল খেলতে নামবে, তাদের সেই হার না মানা মনোভাব সত্যিই অপরিচিত।

এ বারের ইউরো কাপে ইংল্যান্ড কখনও ভাগ্যের সাহায্য পেয়েছে, কখনও পেনাল্টিতে গোল করে জিতেছে, কখনও শেষ মিনিটের গোলে জিতেছে। আগে সাধারণত এগুলি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে হত। কিন্তু এ বারের ইউরো কাপে ইংল্যান্ডের জার্সিধারী ফুটবলারেরাই এই সব কাণ্ড ঘটিয়েছেন।

Jude Bellingham

স্লোভাকিয়ার বিরুদ্ধে জুড বেলিংহ্যামের শেষ মুহূর্তের বাইসাইকেল কিকে গোল। ছবি: রয়টার্স।

১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে পশ্চিম জার্মানিকে ৪-২ গোলে হারিয়ে জিতেছিল ইংল্যান্ড। সিনিয়র ফুটবলে সেটাই ইংল্যান্ডের একমাত্র ট্রফি। এ বারের ইউরো কাপে বদলে যাওয়া ইংরেজ দল সম্পর্কে কোচ সাউথগেট বলেন, “আমরা শুধু একটা প্রতিযোগিতা নিয়ে ভাবিনি। শুধু একমুখী পড়াশোনা করিনি। এই দলটা আলাদা।”

২০১৬ সালে দায়িত্ব দেওয়া হয় সাউথগেটকে। আইসল্যান্ডের কাছে হেরে ইউরো থেকে বিদায় নেওয়ার পর পরই কোচ করা হয়েছিল তাঁকে। সাউথগেটের প্রশিক্ষণে বদলাতে থাকে ইংল্যান্ড। ২০১৮ সালে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলে। ২০২১ সালে ইউরো কাপের ফাইনালে ওঠে। শেষ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল ইংল্যান্ড। এ বারের ইউরো কাপে আবার ফাইনালে হ্যারি কেনেরা। গত ৭০ বছরে এক বার কোনও প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলেছিল ইংল্যান্ড। গত আট বছরে সেখানে দ্বিতীয় ফাইনাল খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সাউথগেটের ছেলেরা।

ইংল্যান্ড জিতলেও কেনদের খেলা মন জিততে ব্যর্থ। বার বার বড় প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়া সমর্থকেরা বুঝতেই পারছেন না ফিল ফডেন, জুড বেলিংহ্যামদের ‘কুৎসিত’ ফুটবল দেখে কী ভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা উচিত। তাঁরা অভ্যস্ত ছিলেন বীরের মতো খেলে হেরে যাওয়া দেখতে, কিন্তু এখন দেখছেন কোনও মতে জিতে যাওয়া। ইংরেজ দল এখন অনেক বেশি যান্ত্রিক। তারা যে কোনও ভাবে জিততে জানেন।

ইংল্যান্ড ফুটবলের এই বদল এক দিনে হয়নি। পরিকল্পিত ভাবে তৈরি করা হয়েছে। গোটা বিশ্বের সেরা কোচদের নিয়ে আসা হয়েছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে। ম্যাঞ্চেস্টার সিটি, লিভারপুল, আর্সেনাল, চেলসি এবং ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে ইংরেজ ফুটবলারেরা তাঁদের হাতে তৈরি হচ্ছেন। ফুটবলের সেরা মস্তিষ্কের তীক্ষ্ণ নজর থাকছে ইংল্যান্ডের প্রতিভাবান ফুটবলারদের দিকে। স্পেনের পেপ গুয়ার্দিওয়ালা থেকে জার্মানির য়ুর্গেন ক্লপের মতো কোচেরা বেশ কয়েক বছর ধরেই ইংল্যান্ডের ক্লাব ফুটবলের অংশ। সেটার ফল পাচ্ছে ইংল্যান্ড।

ইউরোপের অন্য দেশগুলির সঙ্গে ইংল্যান্ডের ফুটবলের ফারাকটা ধীরে ধীরে মুছে গিয়েছে এই কারণে। গুয়ার্দিওয়ালার প্রশিক্ষণে তৈরি হওয়া ফুটবলারের সংখ্যা এখন স্পেনের থেকে বেশি রয়েছে ইংল্যান্ড দলে। সেরা উদাহরণ অবশ্যই ফডেন। ইংরেজ মিডফিল্ডারের তুলনা হতে পারে বার্সেলোনার অ্যাকাডেমি থেকে উঠে আসা ফুটবলারদের সঙ্গে। ম্যাঞ্চেস্টার সিটির কোচ গুয়ার্দিওয়ালা। তাঁর প্রশিক্ষণেই তৈরি হয়েছেন ফডেন।

সাউথগেট এটাই চেয়েছিলেন। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের আগে তিনি বলেছিলেন, “আমরা ভাগ্যবান। আমাদের দেশের তরুণ প্রতিভারা গুয়ার্দিওয়ালা, ক্লপ, কন্তে, ওয়েঙ্গার, মোরিনহোর মতো কোচেদের প্রশিক্ষণে খেলার সুযোগ পাচ্ছে। ক্লাবে প্রতি দিন, প্রতি মুহূর্তে এই কোচদের সামনে খেলছে তরুণ ফুটবলারেরা। সেই কারণেই এমন সব ফুটবলার তৈরি হচ্ছে দেশে।”

ইংল্যান্ড বুঝেছিল সিনিয়র ফুটবলে ট্রফি জিততে হলে, কাজটা শুরু করতে হবে জুনিয়র ফুটবল থেকেই। ১৯৬৬ সালের পর সিনিয়র দল কোনও ট্রফি জিততে না পারলেও ২০১৭ সালে অনূর্ধ্ব-২০ এবং অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ জিতেছিল ইংল্যান্ড। গত বছর অনূর্ধ্ব-২১ ইউরো কাপ জিতেছিল তারা। সেটাও আবার স্পেনকে হারিয়ে। রবিবার সেই দেশের বিরুদ্ধেই খেলবে ইংল্যান্ড। গত বছর অনূর্ধ্ব-২১ ইউরো কাপ জেতা ইংরেজ দলে ছিলেন অ্যান্থনি গর্ডন এবং কোল পামার। ২০১৭ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ড দলের সদস্য ছিলেন ফিল ফডেন, মার্ক গুয়েহি এবং কনর গালাঘের। ফডেন সেই প্রতিযোগিতায় সোনার বল জিতেছিলেন। এজরি কোনসা ছিলেন অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপজয়ী দলে। এই ছ’জন ফুটবলারই রবিবারের সিনিয়র ইংল্যান্ড দলে রয়েছেন।

Under-17 World Cup Win

সাল ২০১৭— ভারতের মাটিতে অনূর্ধ্ব-১৭ ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়। —ফাইল চিত্র।

ইংল্যান্ডের ফুটবল নিয়ামক সংস্থার ডিরেক্টর ড্যান অ্যাশওর্থ বলেন, “আমরা একটা মন্ত্রে বিশ্বাসী। ‘জার্সির মাপটা খালি বদলাবে।’ তাই অনূর্ধ্ব-১৫ থেকে সিনিয়র দলে উঠে আসছেন ফুটবলারেরা। ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলছে। সকলে এক লক্ষ্য নিয়ে খেলছে। এক রকম ভাবনায় খেলছে। সেটাই আমাদের সাফল্য এনে দিয়েছে।”

সাউথগেটের যে দল জার্মানিতে ইউরো কাপ খেলছে, তাদের ফুটবলে পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু দৃষ্টিসুখ নেই। গ্রুপ পর্বে দু’টি ম্যাচ ড্র করেছিল ইংল্যান্ড। মাত্র দু’টি গোল করেছিল। ইংল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম সেই সময় ছিঁড়ে খাচ্ছিল সাউথগেটকে। তিনি বলেন, “আমরা সকলে ভালবাসা চাই। দেশের হয়ে কিছু করার সময় গর্ব বোধ হয়। কিন্তু সেটা ফেরত না পেলে খারাপ লাগে। সমালোচনা হজম করা বেশ কঠিন।”

ইংল্যান্ড সমালোচনা হজম করেনি। বরং ফিরে এসেছে। প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছে। নকআউট পর্বে জিতেছে। টাইব্রেকারে জিতেছে। কিছু ক্ষেত্রে যা প্রত্যাশিত ছিল। উদাহরণ, প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের জুড বেলিংহ্যামের ৯৫ মিনিটের গোল। কিছু ক্ষেত্রে ছিল চমক। উদাহরণ, লিভারপুলের ট্রেন্ট অ্যালেক্সান্ডার-আর্নল্ডকে শুধুমাত্র টাইব্রেকারের জন্য দলে আনা এবং তাঁর করা গোলে জিতে সেমিফাইনালে ওঠা। কিছু ছিল অপ্রত্যাশিত। উদাহরণ, অ্যাস্টন ভিলার অলি ওয়াটকিন্স গোটা ইউরো কাপে খেলেছেন ৩১ মিনিট এবং তাঁর করা গোলেই নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে জিতে ফাইনালে ওঠে ইংল্যান্ড।

কোচ সাউথগেটের মতে, এটাই নতুন ইংল্যান্ড। যে দল লড়তে জানে, যে দল নিজের জাত চেনাতে জানে।

UEFA Euro 2024 England Football Gareth Southgate Harry Kane

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।