কার্লেস কুয়াদ্রাত। — ফাইল চিত্র।
ইস্টবেঙ্গলের কোচের দায়িত্ব নিয়ে কিছু দিন আগেই শহরে এসেছেন তিনি। শুরু করে দিয়েছেন অনুশীলনও। সমর্থকদের অনেক আশা তাঁর উপরে। লাল-হলুদের কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত প্রথম বার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জানালেন, মোহনবাগানের থেকে প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা শিখতে হবে তাঁদের। দীর্ঘ দিন একসঙ্গে খেলার কারণে মোহনবাগানের মধ্যে যে ঐক্যবদ্ধ মানসিকতা তৈরি হয়েছে, সেটা আনতে হবে তাঁর দলেও। একই সঙ্গে সমর্থকদেরও অনুরোধ করেছেন পাশে থাকার। জানিয়েছেন, একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে সাফল্য আসতে বাধ্য।
শনিবার সাংবাদিকদের কুয়াদ্রাত বলেছেন, “মোহনবাগানের দারুণ মানের পেশাদার ফুটবলারেরা রয়েছে। বিদেশিরাও ভাল। তা ছাড়া, দলের অনেকেই একসঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে খেলছে। ফলে ওদের মধ্যে লড়াই করার একটা মানসিকতা তৈরি হয়ে গিয়েছে। সেখানে আমরা শূন্য থেকে শুরু করছি। দলের বেশির ভাগ ফুটবলারেরা নতুন। শুধু মোহনবাগানই নয়, বেশির ভাগ দলই নিজেদের অনেক আগে থেকে গুছিয়ে নিতে শুরু করেছে। আমাদের খুব অল্প সময়ে সেই জায়গায় পৌঁছতে হবে। এটা একটা চ্যালেঞ্জ।”
দীর্ঘ দিন ধরে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা হাপিত্যেশ করে বসে রয়েছেন ট্রফির লক্ষ্যে। অনেক দিন ধরেই ক্লাব কোনও ট্রফি পায়নি। আইএসএলে তিনটি মরসুমেই নীচের দিকে শেষ করতে হয়েছে। কুয়াদ্রাত জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করছেন তাঁরা। নির্দিষ্ট পথে চললেই সাফল্য আসবে বলে মনে করেন তিনি। বলেছেন, “আমাদের নতুন একটা দল। গত বছরের মধ্যে ১-২ জন রয়েছে এই দলে। আমি জানি সমর্থকেরা অনেকদিন কিছু পাননি। কিন্তু মনে রাখবেন, বার্সেলোনাও একটা সময়ে টানা ১০ বছর কোনও ট্রফি জেতেনি। সমর্থকদের মধ্যে একটা নেতিবাচক মানসিকতা চলে এসেছে, যেটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু ওঁদের বলব, ধৈর্য ধরুন। সাফল্য আসতে দেরি নেই।”
বেঙ্গালুরু এফসি-র দায়িত্বে থাকার সময় সেই দলকে অনেক সাফল্য এনে দিয়েছিলেন কুয়াদ্রাত। জিতিয়েছিলেন আইএসএলও। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের কোচিং করা তাঁর জীবনের কঠিনতম কাজ বলে মেনে নিচ্ছেন তিনি। বলেছেন, “নিঃসন্দেহে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বেঙ্গালুরুতে আমাদের নির্দিষ্ট একটা প্রোজেক্ট ছিল। ধীরে ধীরে আমরা একটা চ্যাম্পিয়ন দল তৈরি করি। কিন্তু সেটা করতে ৪-৫ বছর লেগেছিল। একটা সময় আমাদের দলে সুনীল ছেত্রী, সন্দেশ ঝিঙ্ঘন, উদান্তা সিংহেরা ছিল। প্রত্যেকে দারুণ ফুটবলার। তা সত্ত্বেও আমরা আই লিগে চার নম্বরে শেষ করেছিলাম। তাই একটা সফল দল তৈরি করতে গেলে সময় লাগবেই।”
জাতীয় দলের কোচ ইগর স্তিমাচ কিছু দিন আগেই বলেছিলেন, ভারতীয় দলে কোনও সঠিক মানের স্ট্রাইকার উঠে আসছে না। তিনি আইএসএলের ক্লাবগুলিকে অনুরোধ করেছিলেন আরও বেশি করে দেশীয় স্ট্রাইকার খেলানোর জন্যে। কুয়াদ্রাতের মতে, কাজটা কঠিন। তাঁর কথায়, “স্তিমাচ একদম সত্যি কথাই বলেছেন। বেশির ভাগ ক্লাবই স্ট্রাইকারের জায়গায় বিদেশি কাউকে খেলাতে পছন্দ করে। আমি বুঝতে পারছি ওঁর দাবি। কিন্তু এই মুহূর্তে সেটা কঠিন। ভাল মানের স্ট্রাইকার সেই অর্থে এখনও ভারতে নেই। কিন্তু ওঁর কথা শুনে আমি নিশ্চয়ই চেষ্টা করব যাতে দেশীয় স্ট্রাইকার বেশি করে খেলানো যায়।”
আগামী মরসুমে ক্লেটন সিলভা, নাওরেম মহেশদের জন্যে কড়া বার্তা এখন থেকেই দিয়ে রেখেছেন কুয়াদ্রাত। বলেছেন, “আমার দলের প্রত্যেক ফুটবলারের নির্দিষ্ট একটা কাজ থাকবে। সেটা আমিই ওদের দেব। দলের প্রত্যেক ফুটবলারদের থেকে সেরাটা বের করে আনাই আমার কাজ। ওদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সেরাটা বের করে আনতে হবে। আমি মনে করি, দলের সব ফুটবলারই একজন যোদ্ধা। মাঠে নেমে লড়াই করাই তাদের কাজ। এই দলকে ভারতীয় ফুটবলে সেরা করে তুলতে চাই।”
শনিবার কুয়াদ্রাতের কথায় বার বার উঠে এল বার্সেলোনা এবং হায়দরাবাদের কথা। তিনি একটাই জিনিস মনে করালেন, নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। একটা পরিকল্পনা ধরে এগোলে দল কী ভাবে সাফল্য পেতে পারে, বেঙ্গালুরু, বার্সেলোনা এবং হায়দরাবাদ এফসি-র উদাহরণ টেনে ধরে বোঝালেন কুয়াদ্রাত। গত বার ইস্টবেঙ্গলের কোচ থাকাকালীন স্টিভন কনস্ট্যান্টাইনও একই কথা বলেছিলেন। এক বছরের বেশি টেকেননি। এখন কুয়াদ্রাতের অধীনে দল কতটা সাফল্য পায় সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy