গোলের পর বিষ্ণুর উল্লাস। মঙ্গলবার যুবভারতীতে। ছবি: সমাজমাধ্যম।
ইস্টবেঙ্গল ৪ (হিজাজি, বিষ্ণু,
সুরেশ-আত্মঘাতী, ডেভিড)
পঞ্জাব ২ (আসমির, ভিদাল)
কথায় আছে, পিছিয়ে পড়া ইস্টবেঙ্গল খোঁচা খাওয়া বাঘ। দীর্ঘ দিন এই প্রবাদের বাস্তব চিত্র দেখতে পাননি ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা। তা দেখা গেল মঙ্গলবার। আইএসএলে পঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে দু’গোলে পিছিয়ে থাকার পর দ্বিতীয়ার্ধে চার গোল দিল ইস্টবেঙ্গল। জিতল ৪-২ ব্যবধানে। জিতেও অবশ্য ১১ নম্বরে থাকল ইস্টবেঙ্গল। ১১ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ১০। ১১ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্জাব পাঁচ নম্বরে। জয়ের ফলে বেঁচে থাকল ইস্টবেঙ্গলের প্লে-অফের আশা।
গত শনিবার যুবভারতী দেখেছিল মোহনবাগানের প্রত্যাবর্তন। কেরল ব্লাস্টার্সের কাছে পিছিয়ে থাকা মোহনবাগান খেলা ঘুরিয়ে দিয়েছিল শেষ কয়েক মিনিটে। তবে মঙ্গলবার ইস্টবেঙ্গল প্রত্যাবর্তন করে ম্যাচ শেষ করে দিল ৩০ মিনিট আগেই। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে ইস্টবেঙ্গলের যে ঝড় দেখা গেল তা উড়িয়ে নিয়ে গেল পঞ্জাবকে।
২০ মিনিটের লাল-হলুদ ঝড়
প্রথমার্ধে দু’গোলে পিছিয়ে থাকা দল দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নামার পরে দুটো জিনিস দেখতে পাওয়া যেতে পারে। হয় সেই দল আত্মবিশ্বাসের তলানিতে থেকে আরও গোল হজম করে হারবে। অথবা ঘুরে দাঁড়াবে। মঙ্গলবার ইস্টবেঙ্গল বেছে নিল দ্বিতীয়টাই। ৪৬ মিনিট থেকে ৬৬ মিনিটের মধ্যে যুবভারতীতে যা দেখা গেল, তার ঘোর কাটতে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের সময় লাগবে। কবে ইস্টবেঙ্গল দু’গোলে পিছিয়ে থেকে চার গোলে জিতেছে তা নিয়ে মাথা চুলকাতে হতে পারে। কলকাতার তিন প্রধানের মধ্যে ইস্টবেঙ্গলই প্রথম দল যারা দ্বিতীয়ার্ধে চার গোল দিল। ৪৬ থেকে ৬৬, এই ২০ মিনিটের মধ্যে চার-চারটি গোল করল ইস্টবেঙ্গল।
দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতেই এক গোল শোধ করে লাল-হলুদ। ডান দিক থেকে ক্লেটন সিলভার ফ্রিকিকে মাথা ছুঁইয়ে গোল করেন হিজাজি মাহের। আট মিনিট পরে দ্বিতীয় গোল। এ বার মাঝমাঠ থেকে মহম্মদ রাকিপের থেকে ক্রস পেয়েছিলেন বিষ্ণু। বল ধরে একটু ভেতরে ঢুকে বিপক্ষের গোল লক্ষ্য করে শট মেরেছিলেন। পঞ্জাবের এক ফুটবলারের গায়ে লেগে তা গোলে ঢুকে যায়। চাপের মুখে পঞ্জাবের ভুল এগিয়ে দেয় ইস্টবেঙ্গলকে। ডান দিক থেকে নন্দকুমারের পাস ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজের গোলেই ঢুকিয়ে দেন সুরেশ মিতেই। তারও ছ’মিনিট পরে আবার বিষ্ণু-ম্যাজিকে এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। এ বার বাঁ দিক থেকে কেরলের ফুটবলারের ক্রসে প্রায় মাটিতে শুয়ে পড়ে হেডে গোল করেন ডেভিড লালানসাঙ্গা।
অস্কারের ফুটবল-বুদ্ধি
স্পেনীয় কোচ অস্কার ব্রুজ়োর রক্তে রয়েছে লড়াই। যে দলেই কোচিং করিয়েছেন, অতীতে বার বার খাদের কিনারা থেকে তাদের তুলে এনেছেন। অকারণে উত্তেজিত হন না। জয় বা হার, কোনও কিছুতেই তাঁর আবেগ বিশেষ বদলায় না। চোট-আঘাত, কার্ডের জন্য হাতে ফুটবলার নেই বলে আক্ষেপও করেন না। সারা ক্ষণ ফুটবল নিয়েই ভাবতে ভালবাসেন। তাঁর বুদ্ধির দৌড় কতটা তা ইস্টবেঙ্গল দেখতে পেল মঙ্গলবার। প্রথমার্ধে হালকা চোট পেয়েছিলেন নাওরেম মহেশ। খুব একটা ভাল খেলতেও পারেননি। বিরতিতেই তাঁকে তুলে নিয়ে বিষ্ণুকে নামান ব্রুজ়ো। এই একটা বদলই খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিল। বুদ্ধিমান কোচ তিনিই হন যিনি সঠিক সময়ে সঠিক ফুটবলারকে মাঠে আনতে পারেন। চোট-আঘাতে জর্জরিত ইস্টবেঙ্গলের হাতে এখন এমন বিকল্প কম। তার মধ্যে থেকেই নিজের সাধ্যমতো খেলান অস্কার। তাঁর বুদ্ধিতেই তারকা হয়ে উঠলেন কেরলের বিষ্ণু। অস্কারের একটা চাল খেলা ঘুরিয়ে দিল।
যুবভারতীতে বিষ্ণু-ম্যাজিক
ইস্টবেঙ্গলের যুব দলে খেলার সময়েই নিজের জাত চিনিয়েছিলেন বিষ্ণু। গত বারের কলকাতা লিগে ভাল খেলে কার্লেস কুয়াদ্রাতের আমলে সিনিয়র দলে সুযোগ পেয়ে নজর কেড়েছিলেন। এ বারও তিনি সিনিয়র দলের নিয়মিত সদস্য। ওড়িশার কাছে আগের ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল হারলেও বিষ্ণুর খেলা নজর কেড়েছিল। এ দিনও বিষ্ণু এসে ফুল ফোটালেন মাঠে। ইস্টবেঙ্গল যে ক’টি আক্রমণ করেছে প্রায় প্রতিটিতেই বিষ্ণুর অবদান রয়েছে। একটি গোল করিয়েছেন। একটি গোল করেছেন। এ ছাড়াও বহু আক্রমণে ভূমিকা নিয়েছেন। শারীরিক ভাবে একটু পিছিয়েই থাকবেন অনেকের থেকে। তবে বিষ্ণুর পায়ের কাজ, চোরা গতি এবং নিখুঁত পাস দেওয়ার ক্ষমতা তাঁকে বাকিদের থেকে আলাদা করে তুলেছে। তাঁকে অস্কার যেমন লেফট ব্যাকেও খেলাচ্ছেন, তেমনই উইংয়েও খেলাচ্ছেন। সব জায়গাতেই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন বিষ্ণু।
পঞ্জাবের লাল কার্ড এবং ইভানের চোট
ইস্টবেঙ্গলের প্রথম গোলের সময়েই চোট পেয়েছিলেন পঞ্জাবের ডিফেন্ডার ইভান নোভোসেলেচ। কিছু ক্ষণ পরেই মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। ডাগআউটের বাইরে রাখা ফ্রিজের ধারে হেলান দিয়ে বসেছিলেন। তাঁর ডান পায়ে বাঁধা হচ্ছিল বরফের প্যাকেট। ওই জায়গাতেই বসে ইভান দেখলেন, কী ভাবে তাঁকে ছাড়া ভেসে গেল পঞ্জাবের রক্ষণ। দীর্ঘদেহী ইভান মাঠে থাকার সময় ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারেরা সে ভাবে দাঁত ফোটাতে পারেননি। তিনি মাঠ ছাড়তেই বাঁধ ভেঙে গেল পঞ্জাবের। সেই সুযোগে একের পর এক গোল করে গেল ইস্টবেঙ্গল। হতাশ চোখে দেখলেন ইভান। শুধু তাই নয়, অকারণে ফাউল পঞ্জাবের খাইমিনথাং লুংডিমের দ্বিতীয় হলুদ কার্ড তথা লাল কার্ড দেখাও ইস্টবেঙ্গলের সুবিধা করে দিল। দুটো গোলের পর পঞ্জাবের যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলার কথা ছিল তা তারা পারেনি। তার পুরোপুরি ফায়দা তুলল ইস্টবেঙ্গল।
প্রথমার্ধে ইস্টবেঙ্গল ছন্নছাড়া
প্রথমার্ধে পঞ্জাবের দু’টি গোল দেখে অনেক সমর্থকই হয়তো বাড়ির পথ ধরেছিলেন। তাঁরা লাল-হলুদের প্রত্যাবর্তন দেখতে পেলেন না। তবে প্রথমার্ধে ইস্টবেঙ্গল যা খেলেছে তা চিন্তিত করার মতোই। শুরুটা খারাপ হয়নি। তবে ম্যাচ যত এগোতে থাকে তত যেন ইস্টবেঙ্গল খোলসের মধ্যে ঢুকে পড়তে থাকে। দু’টি গোল দেখেই মনে হয়েছে দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব রয়েছে। রক্ষণের ফুটবলারদের মধ্যে যোগাযোগের অভাব, আনোয়ার আলি ও মহম্মদ রাকিপের ভুলের সুযোগ নিয়েছে পঞ্জাব। জিতলেও প্রথমার্ধে পারফরম্যান্স চিন্তায় রাখবে অস্কারকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy