ডুরান্ড কাপের প্রথম বড় ম্যাচের একটি মুহূর্ত। ছবি: টুইটার।
ডার্বি। না, বড় ম্যাচ। এই এক শব্দেই বাঙালি জেগে ওঠে। উত্তেজনায় ছটফট করে। যে উত্তেজনা শুরু হয়ে যায় চার-পাঁচ দিন আগে থেকেই। ডুরান্ড কাপের ফাইনালও ব্যতিক্রম নয়। গত কয়েক দিন ধরে কলকাতার ফুটবল জনতা দেখেছে টিকিটের জন্য হাহাকার। যাঁরা টিকিট পেয়েছেন, তাঁরা ভরিয়ে তুলবেন রবিবারের যুবভারতী। যাঁরা পাননি, তাঁরা ম্যাচের সময় নড়বেন না টেলিভিশনের সামনে থেকে।
ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান লড়াই এখন আর নিছক ঘটি-বাঙালের লড়াই নয়। বাঙালির ফুটবল আবেগের লড়াই। দু’ক্লাবেই বাঙালি ফুটবলারের সংখ্যা হাতেগোনা। তবু লাল-হলুদ আর সবুজ-মেরুন জার্সি মুখোমুখি মানে না হারার মানসিকতা। এই ম্যাচের দিন মাছের বাজারে দাম বাড়ে ইলিশ, চিংড়ির। এই ম্যাচের দিন শহরের সব পথ মেশে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। রবিবারও অন্য কিছু হয়নি। বাইক, ট্যাক্সি, মেট্রো, লোকাল ট্রেন, ম্যাটাডোর— যে যেমন ভাবে যুবভারতীর পথে। কারও হাতে মশাল তো কারও হাতে পাল তোলা নৌকা। প্রিয় ক্লাবের জার্সি বা পতাকা তো আছেই। সঙ্গে রয়েছে পেল্লায় আকারের সব টিফো। ম্যাচ শুরুর আগেই যা ঝুলে পড়বে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে।
ট্রেনে চড়ে, বাসে চেপে, ম্যাটাডোর-এ দাড়িয়ে — আজ সবার গন্তব্য যুবভারতী! ♥️
— Mohun Bagan Super Giant (@mohunbagansg) September 3, 2023
ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে দ্বৈরথ আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা! জয় মোহনবাগান! #MBSG #JoyMohunBagan #আমরাসবুজমেরুন pic.twitter.com/yfMMOUYPkT
বাঙালির বড় ম্যাচের জন্য ফুটবলারদের আলাদা করে উদ্বুদ্ধ করতে হয় না। এমনই বাড়তি অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ হয়। এই ম্যাচ কেউ হারতে চান না। ড্র করতে চান না। জয়, জয় এবং জয়ই এক মাত্র লক্ষ্য। এই ম্যাচ নিছক খেলা নয়। সম্মানের লড়াই। মর্যাদার লড়াই। পরস্পরকে ছাপিয়ে যাওয়ার লড়াই। ম্যাচের দু’চার দিন আগে থেকেই দু’ক্লাবের সমর্থকেরা নানা রসিকতায় মেতে ওঠে।
ডুরান্ড কাপ ফাইনালের ম্যাচ নিয়ে টিকিটের চাহিদা আকাশ ছোঁয়া। অসংখ্য সমর্থক ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাননি। অনলাইনে টিকিট বিক্রি করা হয়নি। চাহিদা মতো টিকিটের ব্যবস্থাও করেননি ডুরান্ড কাপের আয়োজকেরা। ম্যাচ শুরুর এক ঘণ্টা আগেও যুবভারতীর সামনে বহু মানুষ টিকিটের খোঁজ করছেন। যাঁদের কাছে অতিরিক্ত টিকিট রয়েছে, তাঁরা ফেসবুকে ফোন নম্বর দিয়ে জানিয়েছেন টিকিট বিক্রি করতে চান। তবে ক্রেতাকে গুনতে হবে বাড়তি কড়ি। অর্থাৎ, খুল্লামখুল্লা কালোবাজারি। এই কালোবাজারির অভিযোগেই শনিবার ময়দান থানার পুলিশ চার জনকে গ্রেফতার করেছে।
রেফারির বাঁশির জন্য অপেক্ষা করেন না ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান সমর্থকেরা। লড়াই শুরু হয়ে যায় মাঠে যাওয়ার পথেই। প্রতিপক্ষ দলের সমর্থকদের দেখলেই নানা কটূক্তি, বিদ্রুপ ছুড়ে দেন ফুটবলপ্রেমীরা। রবিবার এ সব কিছুই মজুত ছিল শহরের ট্র্যাফিক সিগন্যালগুলোয়। এসএসকেএম হাসপাতালের কাছের রাস্তার দৃশ্যের সঙ্গে অমিল ছিল না যশোর রোড, বিটি রোড বা গড়িয়াহাটের। বড় ম্যাচের দিন বাইপাস কার্যত দখল করে নেন ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান সমর্থকেরা। মাঠমুখী সব সিগন্যাল যেন আপনিই সবুজ হয়ে যায়। আর অন্য দিকের পথের আলো লাল। ট্র্যাফিক সিগনালও যেন বড় ম্যাচের সঙ্গী!
কলকাতা ময়দানের ইতিহাসের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে বড় ম্যাচ। এমন সমর্থকের খোঁজ পাওয়া যায়, যিনি প্রিয়জনের সৎকার করে খেলা দেখতে এসেছেন। যিনি প্রিয়জনকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে মাঠে ছুটে এসেছেন। অন্য কিছুর সঙ্গে এই ম্যাচের আবেগের তুলনা হয় না। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচকেও দু’চার গোল দিয়ে দিতে পারে কলকাতার বড় ম্যাচ।
উচ্ছ্বাস, উৎসব, হতাশা, হাহুতাশ— সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় এই ম্যাচে। বড় ম্যাচ জন্ম দেয় নায়কের। গত কয়েক বছরে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে টানা আট ম্যাচ জিততে না পারা ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা গত কয়েকটা ডার্বিতে মাঠে গিয়েছিলেন কিছুটা চুপচাপ ভাবে। রবিবার কিন্তু আবার শোনা গিয়েছে তাঁদের চেনা গর্জন। ডুরান্ড কাপের গ্রুপ পর্বের ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলের জয় বদলে দিয়েছে সমর্থকদের শরীরী ভাষা। যে ভাষার আড়ালে জ্বলছে মশালের আগুন। যে ভাষায় লেখা আছে গত কয়েক বছরের লাঞ্ছনা, অপমানের জবাব। পিছিয়ে নেই সবুজ-মেরুন ব্রিগেডও। ১২ অগস্টের হারের বদলা নিতে মরিয়া তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy