আশির দশকে নাইজেরিয়া থেকে এসে কলকাতার ফুটবলে ঝড় তুলেছিলেন চিমা ওকোরি। ভারতীয় ফুটবলে খেলা বিদেশিদের মধ্যে অন্যতম সেরা এই নামের আর এক জন আসায় ড্যানিয়েল চিমার কাছে অনেক প্রত্যাশা ছিল কলকাতার ক্লাব ও তাদের সমর্থকদের। তার উপর ড্যানিয়েল চিমা ফুটবল জীবনে অনেক সাফল্যও পেয়েছেন। কিন্তু এসসি ইস্টবেঙ্গলে যোগ দিয়ে সব স্বপ্নই এক সময় শেষ হয়ে যেতে বসেছিল চিমার।
জানুয়ারিতে দলবদলের সময় যখন এসসি ইস্টবেঙ্গলে চরম ব্যর্থ হয়ে দেশে ফিরে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা শুরু করেছিলেন চিমা, তখন তিনি জামশেদপুর এফসি থেকে প্রস্তাব পান ও সেখানে যোগ দেন। জামশেদপুর তখন নেরিয়ুস ভালসকিসকে ছেড়ে দিয়ে চিমাকে সই করায়। নতুন জার্সি গায়ে মাঠে নামার পর থেকেই যেন নিজেকে ফিরে পান তিনি। লাল-হলুদ শিবির ছেড়েছিলেন মাত্র দু’গোল করে। জামশেদপুরে যোগ দিয়েই তিনি গোলের বন্যা বইয়ে দেন। একাধিক ম্যাচে একার হাতে দলকে জিতিয়েছেন তিনি।
তিন বার নরওয়ের প্রথম ডিভিশন ক্লাব মোল্ড এফকে-র লিগ চ্যাম্পিয়ন দলে ছিলেন চিমা। চার বছর লিগে অংশ নিয়ে তিন বারই চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। ১৩ গোল করে ২০১৩-য় সেই ক্লাবের সর্বোচ্চ স্কোরারও হয়েছিলেন। ২০১১ থেকে ২০১৪— এই চার বছর বর্তমান ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড কোচ ওলে গুনার সোলসারের তত্ত্বাবধানেও খেলেছিলেন তিনি। ওই চার বছর মোল্ডের কোচের দায়িত্বে ছিলেন সোলসারই।
BRB! 🥵 Admin heading to the gym to pump some iron! 💪😤💪#JamKeKhelo pic.twitter.com/jsCni1dLGK
— Jamshedpur FC (@JamshedpurFC) March 10, 2022
জামশেদপুরের কোচ আওয়েল কয়েল তাই জন্যেই বলেছেন, “কারা ওকে নিয়ে সন্দেহ করেছে জানি না। কিন্তু আমার মতো যারা অনেক দিন ধরে ফুটবলে রয়েছে, তারা জানে চিমা একজন অসাধারণ খেলোয়াড়। যারা ওর দক্ষতা নিয়ে সন্দিহান, তারা হয়তো এসসি ইস্টবেঙ্গলের হয়ে ওর মাত্র দু’টো গোলের জন্য এ কথা বলেছেন। দলের পারফরম্যান্সে অবদান রাখতে গেলে যে গোল করতেই হবে, তার কোনও মানে নেই। চিমা আমাদের দলে সেই কাজটাই করে, যাতে প্রমাণ হয় ওর মধ্যে যথেষ্ট গুণ রয়েছে।” সাতটি গোল করে কোচের বলা প্রতিটি শব্দের দাম দিয়েছেন চিমা।
শুরুটা খারাপ ভাবে হয়েছিল। কিন্তু যে ভাবে জামশেদপুরের হয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, তাতে খুশি চিমা। এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “সত্যিই শুরুটা খুব কঠিন হয়েছিল। তবে এখন কেমন চলছে, তা আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন। আমি গর্বিত। খুব খারাপ সময়েও হাল ছেড়ে দিতে নেই। আমিও দিইনি। নিজেকে টেনে দাঁড় করিয়েছি এবং এই জায়গায় নিয়ে এসেছি। আসলে খারাপ সময় থেকে শিক্ষা নিয়ে ভাল সময়ে ফেরা যায়।”
এ মরসুমে তিনি অনবদ্য জুটি বেঁধেছেন ঋত্বিক দাসের সঙ্গে। সেই জুটি নিয়ে চিমা বলেছেন, “আমাদের জুটির সাফল্য আসলে একে অপরের মধ্যে ভাল সম্পর্ক ও বন্ধুত্বের ফল। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করি কী করে খেলাটাকে আরও উপভোগ করা যায়। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াটা ভাল হলে তার ভাল ফল অবশ্যই পাওয়া যায়। ঋত্বিকের সঙ্গে আমার বোঝাপড়াটা খুব সহজেই গড়ে উঠেছে। কারণ, ছেলেটা খুবই ভাল। ও জানে আমি কী চাই, আমিও জানি ও কী চায়। সব মিলিয়ে ওর সঙ্গে মাঠে নামতে খুব ভাল লাগে। ঋত্বিক যে রকম খেলছে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ও অনেক দূর এগোবে।”