জার্মানির বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে কলম্বিয়ার মহিলা ফুটবলার লিন্ডা কাইসিডো। ছবি: রয়টার্স
জার্মানির বক্সে বলটি যখন কলম্বিয়ার লিন্ডা কাইসিডোর পায়ে যায় তখন তাঁকে ঘিরে পাঁচ জন প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার। ঠান্ডা মাথায় চারটি টাচ করলেন ১৮ বছরের লিন্ডা। তার পরেই সবাই দেখল বল জার্মানির গোলের মধ্যে। এ বারের মহিলাদের ফুটবল বিশ্বকাপের সেরা গোলের তকমা দেওয়া হচ্ছে লিন্ডার ডান পা থেকে বার হওয়া বাঁক খাওয়ানো শটকে। বিশ্বকাপে নজির গড়েছেন লিন্ডা। সেই লিন্ডা, যিনি তিন বছর আগে ক্যানসারকে হারিয়ে মাঠে ফিরেছেন। সেই লিন্ডা, যিনি অনুশীলনে মাথা ঘুরে পড়ে গেলেও খেলার সময় ৯০ মিনিট প্রতিপক্ষকে নাচান। সেই লিন্ডার পায়েই স্বপ্ন দেখছে কলম্বিয়া।
এ বারের বিশ্বকাপের সব থেকে বড় অঘটন ঘটিয়েছে কলম্বিয়া। দু’বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে হারিয়েছে তারা। সেই জার্মানি, যারা ১৯৯৫ সালের পর থেকে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে হারেনি। সেই জার্মান দুর্গ ভেঙে দিয়েছেন ১৮ বছরের এক ফুটবলার। লিন্ডার গোলটাও তো স্বপ্নের মতো। বক্সের মধ্যে যেন দাবার চাল দিয়েছেন তিনি। নিক্তিতে মেপে। এক পা এ দিক ও দিক হয়নি।
৫২ মিনিটের মাথায় বক্সের মধ্যে একটি ভলি বুকে করে নামান লিন্ডা। প্রথম টাচে বল নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন। তাঁর গা ঘেঁষে তখন দু’জন ডিফেন্ডার। দ্বিতীয় টাচে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে নেন তিনি। তৃতীয় টাচে বলটিকে নিজের ডান পায়ে শট মারার জায়গায় নিয়ে যান। সেই সময় লিন্ডার সামনে তিন ডিফেন্ডার। এক জন বক্সের অন্য দিকে। দু’জন পেনাল্টি স্পটের কাছে। চকিতে ডান পায়ের বাঁক খাওয়ানো শটে গোল করেন লিন্ডা। গোলরক্ষক ঝাঁপিয়েও বাঁচাতে পারেননি। পরে অবশ্য পেনাল্টি থেকে সমতা ফেরায় জার্মানি। কিন্তু ভানেগাসের গোলে ম্যাচ জেতে কলম্বিয়া। আর এই সব কিছুই শুরু হয়েছিল লিন্ডার ডান পা থেকে।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে কলম্বিয়ার সিনিয়র দলে সুযোগ পান লিন্ডা। পরের বছরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তাঁর। জরায়ুর ক্যানসারে আক্রান্ত হন। অস্ত্রোপচার হয়। কেমোথেরাপি চলে। ছ’মাস মাঠের বাইরে থাকেন। অনেকেই ভেবেছিলেন প্রতিভাবান এই ফুটবলার বুঝি আর খেলতে পারবেন না। কিন্তু সবাইকে ভুল প্রমাণিত করে ফেরেন লিন্ডা। তাঁর কোচ নেলসন আবাদিয়ার কথায়, ‘‘লিন্ডার মাথায় ভগবানের হাত রয়েছে। ওকে থামাবে সাধ্য কার।’’ কোটের প্রতিটি কথা সত্যি প্রমাণিত করে চলেছেন ক্লাব ফুটবলে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলা এই উইঙ্গার।
২০২২ সালে দেশের হয়ে চারটি আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নেন লিন্ডা। দক্ষিণ আমেরিকার অনূর্ধ্ব-১৭ প্রতিযোগিতা, মহিলাদের অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবল বিশ্বকাপ, মহিলাদের কোপা আমেরিকা ও অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল বিশ্বকাপ। তার মধ্যে ভারতে অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। লিন্ডার অধিনায়কত্বে ফাইনালে উঠেছিল দল। প্রথম বার। ফাইনালে স্পেনের কাছে হারতে হয়েছিল। তার মধ্যেই নিজের জাত চিনিয়েছিলেন লিন্ডা।
কলম্বিয়ার সহকারী কোচ অ্যাঞ্জেলো মারসিগলিয়া বলেন, ‘‘লিন্ডা অন্য গ্রহের ফুটবলার।’’ সত্যিই কি তাই! নইলে কী ভাবে মাত্র ১৮ বছর বয়সে এত বড় বড় দলের বিরুদ্ধে গোল করছেন তিনি। এ বারের বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে নিজের প্রথম গোল করেন লিন্ডা। বিশ্বকাপে সর্বকনিষ্ট মহিলা ফুটবলার হিসাবে গোলের নজির গড়েছেন তিনি। চলতি প্রতিযোগিতায় যুগ্ম ভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি।
জার্মানির বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে অনুশীলনে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন লিন্ডা। ছুটে এসেছিলেন চিকিৎসকেরা। পরে কোচ বলেন, ‘‘১৮ বছরে বিশ্বকাপের চাপ নেওয়া সহজ নয়। তাই হয়তো অমন হয়েছিল। এটা ওর প্রথম বিশ্বকাপ। আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে লিন্ডার বয়স কিন্তু মাত্র ১৮ বছর।’’ এক বার মাঠে নামার পরে অবশ্য লিন্ডার খেলায় চাপ উধাও। উল্টে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলেছেন তিনি। জার্মানি থাকার পরেও গ্রুপে সবার উপরে রয়েছে কলম্বিয়া। স্বপ্ন দেখাচ্ছেন লিন্ডা। দক্ষিণ আফ্রিকার একটি ছোট্ট দেশকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy