স্মরণ: পেলের প্রাক্তন ক্লাব স্যান্টোস ক্লাবে ভক্তদের শ্রদ্ধার্ঘ্য। ছবি: রয়টার্স।
বারো ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও আমরা ব্রাজিলীয়রা এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না, পেলে আর নেই। সকলেই জানতেন সঙ্কটজনক ছিলেন। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। তবুও আশা করেছিলাম, যে ভাবে বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের প্রতিরোধ ভেঙে ফুটবল সম্রাট গোল করতেন, একই ভাবে এ বারও মারণ রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জিতবেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সাও পাওলোর স্থানীয় সময় বিকেল ৩.২৭ মিনিটে ৮২ বছর বয়সে ফুটবল সম্রাটের প্রয়াণের খবর শোনার পর থেকেই শোকস্তব্ধ বিশ্ব। সাও পাওলোর মানুষ আপনজনকে হারানোর বেদনায় কাতর।
ফুটবল সম্রাটের প্রয়াণের খবর শোনার পর থেকেই অ্যালবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালের সামনে ভিড় জমতে শুরু করেছিল। সাও পাওলোয় এখন প্রত্যেক দিনই ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় উপেক্ষা করেই ভক্তরা অপেক্ষায় রয়েছেন প্রিয় নায়কের।
বছরের এই সময়টায় সাও পাওলোর অধিকাংশই বাসিন্দাই ছুটি কাটাতে বেড়াতে চলে যান। নববর্ষ পালন করেই তাঁরা ফেরেন। কিন্তু ফুটবল সম্রাটের প্রয়াণের খবর পাওয়ার পরেই ছবিটা বদলে গিয়েছে। ছুটি বাতিল করে অনেকে ফিরে এসেছেন শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে। জানা গিয়েছে, নেমার দা সিলভা স্যান্টোস জুনিয়রও প্যারিস থেকে সাও পাওলোয় আসতে পারেন। যদিও সরকারি ভাবে তিনি কিছু জানাননি। নেমারের ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছে, ফুটবল সম্রাটের প্রয়াণের খবর শোনার পর থেকেই শোকে কাতর হয়ে রয়েছেন তিনি। তাই শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সাও পাওলো আসতে মরিয়া। নেমারের জন্মও যে এই সাও পাওলোয়। পেলের মতো তাঁরও উত্থান স্যান্টোস থেকেই। আসার কথা ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো-সহ সারা বিশ্বের অসংখ্য গণ্যমান্য অতিথিদের।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পেলের প্রয়াণের খবর পেয়েই ছুটেছিলাম হাসপাতালে। অনেকেই কাঁদছিলেন। কেউ কেউ আবার ফুল নিয়ে গিয়ে হাসপাতালের গেট ও প্রাচীরের উপরে রাখছিলেন। খোঁজ নিচ্ছিলেন ফুটবল সম্রাটের শেষ যাত্রা সম্পর্কে। জানা গিয়েছে, আগামী মঙ্গলবার পেলেকে সমাধিস্থ করা হবে স্যান্টোসের মেমোরিয়াল নেক্রোপোল একুমেনিকাতে। সেখানে অবশ্য শুধু তাঁর পরিবারের সদস্যরাই থাকতে পারবেন। আগের দিন অর্থাৎ, সোমবার ভোরবেলায় হাসপাতাল থেকে ফুটবল সম্রাটের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে স্যান্টোসের ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে। এই মাঠেই বহু স্মরণীয় গোল করেছিলেন পেলে। সাও পাওলোর বাসিন্দাদের কাছে ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়াম তীর্থস্থান। এখানেই ব্রাজিলের সাধারণ মানুষ তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন।
শুক্রবার দুপুরে বেলমিরোতে গিয়ে দেখলাম, মাঠের ঠিক মাঝখানে শায়িত থাকবেন পেলে। সোমবার সকাল ১০টা থেকে সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টার পরে পেলের শেষযাত্রা শুরু হবে। স্যান্টোসের বিভিন্ন রাস্তায় ঘোরানো হবে। কিন্তু ফুটবল সম্রাটকে তাঁর পৈতৃক বাড়ির সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে কি না, তা নিয়ে কিছুটা দ্বিধায় রয়েছে সকলে। কারণ, পেলের মা সেলেস্টি এখন জীবিত। একশো বছর বয়স তাঁর। প্রচণ্ড অসুস্থও। অতীতের সব স্মৃতি ভুলে গিয়েছেন। এক জন মায়ের পক্ষে সন্তানের শেষযাত্রা দেখার চেয়ে যন্ত্রণা কিছু নেই।
(লেখক সাও পাওলোর বাসিন্দা। আরসেভেন ডট কম সংবাদমাধ্যমের এডিটর-ইন-চিফ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy