Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
bhaichung bhutia

AIFF: ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচনে গোলমেশিন বনাম গোলরক্ষক

মনোনয়ন জমা দেওয়া প্রার্থীদের মধ্যে ভাইচুং নিঃসন্দেহে বড় নাম। তিনি জনতার ফেভারিট হলেও এআইএফএফের লড়াইয়ে এগিয়ে আর এক প্রাক্তন কল্যাণ চৌবে।

ভাইচুং ভুটিয়া ও কল্যাণ চৌবে।

ভাইচুং ভুটিয়া ও কল্যাণ চৌবে। ফাইল চিত্র

সুমিত ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২২ ১১:২৭
Share: Save:

ফিফার নির্বাসন থেকে মুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনে। শুক্রবার মনোনয়ন জমা দেওয়া শুরু এবং শেষ হল। ২৮ অগস্ট নির্বাচন, তবে মাত্র সপ্তাহখানেক হাতে থাকলেও নির্বাচনকে ঘিরে উত্তরের চেয়ে প্রশ্নই এখনও বেশি।

মনোনয়ন জমা দেওয়া প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় নাম নিঃসন্দেহে ভাইচুং ভুটিয়া। গত সোমবার ফুটবল ফেডারেশনকে (এআইএফএফ) ফিফা নির্বাসিত করার পর থেকেই প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করার ইচ্ছাপ্রকাশ করে আসছিলেন ভারতীয় ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। কিন্তু ফুটবল মাঠে বল পায়ে জাদু দেখানো এক আর প্রশাসনিক স্তরে ভোটের রাজনীতিতে সফল হওয়া আর এক। তাই ভাইচুং সব চেয়ে বড় নাম হলেও বা জনতার ফেভারিট হলেও, এআইএফএফের এই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় তিনিই এগিয়ে, শুক্রবারে দাঁড়িয়ে অন্তত বলা যাচ্ছে না।

বরং ভাইচুংয়ের চেয়ে ফুটবলার হিসেবে পিছিয়ে থাকলেও নির্বাচনের মাঠে এগিয়ে অন্য এক প্রাক্তন। দুই বড় ক্লাবের হয়ে গোলকিপার হিসেবে খেলা কল্যাণ চৌবে। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় বিজেপি হেভিওয়েটদের (পড়ুন শাহি আশীর্বাদ) বরাভয় তাঁর সঙ্গে রয়েছে। কল্যাণ এমনিতেই বঙ্গ বিজেপিতে আছেন। নির্বাচনে লড়েছেন। শোনা যাচ্ছে, ‘হাইকম্যান্ড’-এর অনুমোদন নিয়েই তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশিত পরিবর্তিত গঠনতন্ত্রে ক্রিকেট বোর্ডে রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ব্যক্তিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। শরদ পওয়ার আগে বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, আইসিসি প্রধান হয়েছেন কিন্তু এখন আর অনুরাগ ঠাকুর-রা বোর্ডে থাকতে পারেন না। ফুটবলে তেমন কোনও বিধিনিষেধ এখনও নেই, তাই কল্যাণ চৌবেদের জন্য মুক্ত ময়দান!

কল্যাণ যে গুজরাত থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, তা সব চেয়ে ইঙ্গিতবাহী। দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক হেভিওয়েটের রাজ্য গুজরাত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ওয়াকিবহাল মহলের মত, ‘‘গুজরাত থেকে মনোনয়ন জমা দেওয়ার অর্থ, না বলেও সব কিছু বলে দেওয়াই হল।’’ শোনা যাচ্ছে, কলকাতার প্রাক্তন গোলরক্ষকের জন্য বেশ কিছু রাজ্য সংস্থার প্রভাবশালী কর্তাদের কাছে ইতিমধ্যেই ফোন গিয়েছে শীর্ষ মহল থেকে। ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচনে যেমন শোনা যায় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পক্ষে বাজিমাত ঘটিয়েছিল তাঁর প্রতি গুজরাতের সমর্থন, ফুটবল নির্বাচনেও কি তাই ঘটবে? যদিও এখানে উল্লেখ্য যে, সৌরভ কোনও রাজনৈতিক দলের পতাকাবাহী ছিলেন না। কল্যাণ সরাসরি বিজেপি পার্টির প্রতিনিধি।

কল্যাণের প্রার্থীপদ ‘সেকেন্ড’ করেছে অরুণাচল প্রদেশ। গুজরাত বলতে যেমন ভেসে ওঠে মোদী-শাহ যুগলবন্দি, তেমন অরুণাচল বলতে প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রী, বর্তমান আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজুর রাজ্য। ভাইচুংয়ের প্রার্থীপদ কোনও রাজ্য সংস্থা প্রস্তাব করেনি। কল্যাণের ক্ষেত্রে যেমন গুজরাত করেছে। ফিফা অনুমোদিত নির্বাচনী প্রক্রিয়া অনুযায়ী, খেলোয়াড়েরা এখনও পর্যন্ত স্বাধীন ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। তাঁদের রাজ্য প্রতিনিধি হিসেবেই আসতে হবে। ভাইচুংয়ের নাম প্রস্তাব করেছেন প্রাক্তন ফুটবলারেরা, কোনও রাজ্য নয়। তিনি মনোনয়নও জমা দিয়েছেন ‘প্রাক্তন ফুটবলার’ হিসেবে, কোনও রাজ্য সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে নয়। তাই তাঁর মনোনয়ন ফিফার চোখে গৃহীত হবে কি না, সেই জটিলতা রয়েছে।

আরও মনে রাখা দরকার, সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত সিওএ যখন নতুন গঠনতন্ত্রে সংস্থার মধ্যে ফুটবলারদের পঞ্চাশ শতাংশ জায়গা দেওয়ার কথা তুলেছিল, তা খারিজ করে দেয় ফিফা। তারা বলে, খেলোয়াড়দের কো-অপ্ট করে নেওয়া হোক ভোটিং অধিকার ছাড়া। এবং, সেই সংখ্যাটাও পঁচিশ শতাংশের বেশি নয়। তাই ভারতীয় খেলাধুলোর পরিমণ্ডলে যতই প্রশাসনে প্রাক্তন খেলোয়াড়দের দেখতে চাওয়ার বাসনা থাকুক, ফুটবলের নিয়ামক সংস্থায় তেমন কোনও আবেগের চিহ্ন নেই। তাই ফুটবলার ভাইচুং ভুটিয়া যতই কোটি কোটি ভারতবাসীর হৃদয় জিতে থাকুন, নির্বাচনী হার্ডল জেতা সহজ হবে না।

কোন নিয়মে নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে, তা নিয়েও কৌতূহল রয়েছে। এ নিয়ে ফের সুপ্রিম কোর্টের শুনানির দিকে তাকিয়ে রয়েছেন সকলে। সোমবারেই শুনানি রয়েছে। সিওএ যা ঠিক করে রেখেছে, ৩৬ রাজ্য সংস্থা এবং ৩৬ জন ফুটবলার ভোট দেবে। এই নিয়ম বলবৎ হলে ভাইচুংয়ের সম্ভাবনা নিঃসন্দেহে অনেক উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, ফিফার গঠনতন্ত্রে ৩৬ জন ফুটবলারের ভোট দেওয়ার অংশটি নেই। শুধু ৩৬টি রাজ্য সংস্থার ভোটদানের অধিকারের কথাই বলা আছে। তাই শোনা যাচ্ছে, সোমবার ফিফার এই নিয়মের কথা তুলে কেন্দ্র ৩৬-৩৬ ভোট সমীকরণের বিরোধিতা করতে পারে সুপ্রিম কোর্টে। ফিফার নিয়ম অমান্য করলে নির্বাসন উঠবে না, নির্বাচনকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করা হতে পারে, এমন কথাও তুলতে পারে কেন্দ্র। তখন দেশের সর্বোচ্চ আদালত কী রায় দেয়, তা দেখার।

প্রাক্তন ফুটবলার ও রাজনীতি মিশিয়ে আরও কিছু মনোনয়ন জমা পড়েছে। যেমন ইউজেনসন লিংডো মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তিনিও যোগ দিয়েছেন রাজনীতিতে। মেঘালয়ে ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এমএলএ তিনি। বাংলা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাদা এবং বঙ্গ ফুটবল সংস্থা আইএফএ প্রেসিডেন্ট অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। কর্নাটক থেকে কংগ্রেস সাংসদ এন এ হ্যারিস জমা দিয়েছেন। সাধারণ সচিব পদে দিল্লি থেকে সাজি প্রভাকরণ আসতে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছে।

যদিও চুম্বকে ফুটবলের এই নির্বাচনের সেরা আকর্ষণ হতে যাচ্ছে ভাইচুং বনাম কল্যাণ দ্বৈরথ। তার আগে ভাইচুংকে মনোনয়ন সংক্রান্ত ফিফা নিয়মের জটিলতার কাঁটাতার পেরোতে হবে। এক জন গোলমেশিন। অন্য জনের কাজ ছিল প্রহরী হয়ে গোল ঠেকানো। নির্বাচনের ময়দানে ভাইচুংয়ের ভলি জাল ছিঁড়ে দেবে? নাকি দুর্ধর্ষ ‘সেভ’ করে দিতে পারেন কল্যাণ? রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের অপেক্ষায় দেশের ফুটবল-জনতা!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy