Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
india football

Anita: দারিদ্রকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ দলে অদম্য অনিতা

রাঁচী থেকে প্রায় ঘণ্টা দেড়েকের দূরত্বের চাড়িহোচার গ্রামে অনিতাদের একচালার ছোট্ট ঘর। বাবা দীর্ঘ দিন ধরেই কিছু করেন না।

অস্ত্র: ভারতীয় দলের আক্রমণের অন্যতম ভরসা অনিতা।

অস্ত্র: ভারতীয় দলের আক্রমণের অন্যতম ভরসা অনিতা। ছবি: টুইটার

শুভজিৎ মজুমদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২২ ০৮:৩৯
Share: Save:

এক থালা ফ্যান ভর্তি ভাতের মধ্যে শুধু নুন মিশিয়ে তিনবেলা খাওয়া। মাছ-মাংস-ডিম তো দূরের কথা, মাসের মধ্যে দুই বা তিন দিন জোটে আলু চোখা। তাও একবেলার বেশি নয়। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলে নির্বাচিত হওয়া ঝাড়খণ্ডের অনিতা কুমারীর এটাই ছিল এক বছর আগের খাদ্যতালিকা! জাতীয় দলের শিবির থেকে বাড়ি ফিরলে এখনও এর চেয়ে বেশি কিছু জোটে না।

রাঁচী থেকে প্রায় ঘণ্টা দেড়েকের দূরত্বের চাড়িহোচার গ্রামে অনিতাদের একচালার ছোট্ট ঘর। বাবা দীর্ঘ দিন ধরেই কিছু করেন না। মা আশা দেবীর উপরেই সংসারের পুরো দায়িত্ব। কিন্তু সমস্যা তো শুধু বাড়িতেই নয়, বাইরেও। মেয়েরা খেলাধুলো করবে, গ্রামের মানুষদের পছন্দ নয়। কখনও মাঠে কাচের টুকরো ছড়িয়ে দিত। কখনও আবার কাঁটা গাছের ডাল। প্রকাশ্যেই দেওয়া হত হুমকি— মেয়ে হয়ে ফুটবল খেলা চলবে না। সংসার করো। গ্রামের মুরুব্বিদের ফতোয়া মেনে নিয়েছিলেন
অনীতার বাবা, মা-ও।

কিন্তু হাল ছাড়েননি অনিতার কোচ আনন্দ প্রতাপ গোপ। ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি তাঁর। চাকরি করতে মুম্বই চলে গিয়েছিলেন। ধারাভি বস্তিতে মেয়েদের ফুটবল খেলতে দেখেই আনন্দ সিদ্ধান্ত নেন, ঝাড়খণ্ডে ফিরে যাবেন। প্রবল দারিদ্রের মধ্যে শৈশব হারিয়ে ফেলা মেয়েদের ফুটবলের মাধ্যমেই মুক্তির পথ দেখাবেন। শুরু করলেন অর্থ জমানো। হাত পাতেন বন্ধুদের কাছে। ২০১৩ সালে রাঁচী ফেরেন আনন্দ। কোচিংয়ে ‘ডি’ লাইসেন্স পাস করে চাড়িহোচার গ্রামেই শুরু করলেন প্রথম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। তাঁর কাছে অনুশীলন করেই উত্থান অনিতার।

রাঁচী থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে উচ্ছ্বসিত আনন্দ বলছিলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ডের অধিকাংশ গ্রামেই মানুষ প্রবল দারিদ্রের মধ্যে বাস করেন। সব চেয়ে খারাপ অবস্থা মেয়েদের। লেখাপড়া শেখানো হয় না। দশ-বারো বছর বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। আমার মনে হয়েছিল, এই মেয়েগুলিকে যদি ফুটবল মাঠে টেনে আনা যায়, তা হলে ওরা একটু মুক্তি পেতে পারে। শুরুর দিকে কাজটা খুব কঠিন ছিল।’’ কেন? অনিতার কোচের কথায়, ‘‘মেয়েরা খেলাধুলো করবে, এটা কেউ মেনে নিতে রাজি ছিলেন না। আমাকে নানা ভাবে অপমান করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও হাল ছাড়িনি। জানতাম, যদি দু’টি মেয়েকেও মাঠে টেনে আনতে পারি, তা হলেই বাকিরা আসবে। ঠিক সেটাই হল। প্রায় পাঁচ বছর চেষ্টার পরে আমি সফল হই। এখন চাড়িহোচার ছাড়াও আরও কয়েকটি গ্রামে আমার প্রশিক্ষণ শিবির চলছে। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াইশো মেয়ে অনুশীলন করছে।’’ যোগ করলেন, ‘‘অনিতা যখন আমার কাছে ফুটবল শিখতে শুরু করে, তখন ওর আট বছর বয়স। অল্প দিনের মধ্যেই নজর কেড়ে নেয়। গোলটা খুব ভাল চেনে। মাসখানেক আগে অনূর্ধ্ব-১৮ মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্য ছিল অনিতা। নেপালের বিরুদ্ধে অসাধারণ একটি গোলও করেছিল। ২৩ জনের দলে রয়েছে। আমার বিশ্বাস, বিশ্বকাপে প্রথম একাদশেও জায়গা করে নেবে।’’

অনিতার মা আশা দেবীরও প্রবল আপত্তি ছিল মেয়ের ফুটবল খেলা নিয়ে। বললেন, ‘‘আনন্দ স্যর যখন অনিতাকে ফুটবল শেখানোর কথা বলেছিলেন, অন্যদের মতো আমিও খুব রেগে গিয়েছিলাম। তা ছাড়া ফুটবল খেলা সম্পর্কে আমার কোনও ধারণাই ছিল না। মনে হয়েছিল, খেলাধুলো করলে মেয়ের আর বিয়ে দিতে পারব না। অনিতার দুই দিদিকে খেলা ছাড়িয়ে বিয়ে দিয়েছিলাম। কারণ আমাকেই সংসার চালাতে হয়। অনিতার বাবা কোনও কাজ করেন না। নেশাগ্রস্ত মানুষ। আমার ভুল এখন ভেঙে গিয়েছে। অনিতার জন্য গর্বিত।’’

অনিতা একাই নয়, অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের জন্য ভারতীয় দলে ডাক পেয়েছে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির রাজ্যের সাত ফুটবলার! আনন্দ মনে করেন, সরকার যদি মেয়েদের ফুটবলের উন্নয়নে সাহায্য করে, আরও অনেক ফুটবলার উঠে আসবে। বলছিলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ডে প্রতিভার অভাব নেই। দরকার শুধু ওদের ঠিক মতো তুলে আনা। আর্থিক সাহায্য করা।’’

অনিতার ছোট বোনও এখন ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। বলছিল, ‘‘আমিও দিদির মতো গোল করতে চাই। দিদি বলেছে, বিশ্বকাপের খেলা দেখার জন্য টিকিট পাঠাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

india football India Under 19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy