উল্লাস: দেশের জার্সি পরে বাবার সঙ্গে রিকার্দো। নিজস্ব চিত্র
সাত বছরের জন্মদিনে রিকার্দো শিশু চিকিৎসক বাবার কাছে আবদার করেছিল— কাতার বিশ্বকাপে লিয়োনেল মেসির অন্তত একটা খেলা দেখতে চায়। তার আর কোনও উপহার চাই না। বুধবার রাতেই দোহার স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ জন্মদিনের উপহার পেয়ে গেল রিকার্দো।
মরণ-বাঁচন ম্যাচে পোল্যান্ডকে ২-০ হারিয়ে বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় যোগ্যতা অর্জনের পরে স্টেডিয়ামের গ্যালারি, ফ্যান জ়োন থেকে মেট্রো স্টেশন— আর্জেন্টিনা সমর্থকদের উল্লাসে রাতের দোহা তখন রঙিন। নীল-সাদা পতাকা হাতে নিয়ে লাফাচ্ছিল রিকার্দো। জনস্রোতে ছেলে যাতে হারিয়ে না যায়, তার জন্য শক্ত করে হাত ধরে রেখেছিলেন হর্হে। তাঁর গালেও নীল-সাদা রং। হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘’২৪ সেপ্টেম্বর রিকার্দোর জন্মদিন ছিল। আগের দিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, কী উপহার চাই। আমি ভেবেছিলাম, ও প্লে-স্টেশন চাইবে। কিন্তু রিকার্দো আমাকে অবাক করে বলল, কাতার বিশ্বকাপে স্টেডিয়ামে বসে মেসির খেলা দেখতে চায়। আর কোনও উপহার ওর চাই না। তবে ছেলের আবদার মেটাতে গিয়ে বাড়িতে অশান্তি ডেকে এনেছি।’’
কেন? বুয়েনোস আইরেসের শিশু চিকিৎসক হর্হে বললেন, ‘‘আমার স্ত্রী ও দুই মেয়ে বুয়েনোস আইরেসের বাড়িতে রয়েছে। আমি শুধু রিকার্দোকে নিয়ে কাতার এসেছি। বাড়ির সকলে আমার উপরে প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত। বাড়িতে ফেরার পরে আমার জন্য কী অপেক্ষা করে আছে, অনুমান করেই এখন আতঙ্কিত হয়ে পড়ছি।’’ স্ত্রী ও দুই মেয়েকে কেন আনেননি বিশ্বকাপ দেখাতে? হতাশ হর্হে বললেন, ‘‘বিশ্বকাপ দেখতে এমনিতেই প্রচুর খরচ। তার উপরে কাতার খুবই দামি শহর। বিশ্বকাপের টিকিট কাটার পরে ইন্টারনেটে দোহার হোটেলের খোঁজ করতে গিয়ে মাথা প্রায় খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এত অর্থ কোথায় পাব? তাই এ বার শুধু ছেলেকে নিয়েই এসেছি। স্ত্রী ও দুই মেয়েকে কথা দিয়েছি, ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোয় হবে। ওখানে ওদের নিয়ে যাব খেলা দেখাতে।’’ এই কারণেই বৃহস্পতিবার ছেলেকে নিয়ে আর্জেন্টিনা ফিরে যাচ্ছেন হর্হে। বলছিলেন, ‘‘এই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ইচ্ছে ছিল ফাইনাল দেখেই দেশে ফেরার। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বৃহস্পতিবারই আমরা আর্জেন্টিনায় ফিরে যাচ্ছি।’’
পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে কেমন লাগল আর্জেন্টিনার খেলা? উচ্ছ্বসিত হর্হ বললেন, ‘‘প্রথমার্ধ খুব একটা ভাল লাগেনি। দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন ঘটাল আর্জেন্টিনা। গোল না পেলেও অনবদ্য খেললেন মেসি। আমাদের বিশ্বকাপ দেখতে আসা সার্থক।’’ ছোট্ট রিকার্দো স্প্যানিশ ক্রমাগত বলে চলল, ‘‘মেসি...মেসি...মেসি...।’’ পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনাকে পেনাল্টি দেওয়া নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকেই রেফারির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলছেন। আপনার কী মত? হর্হের কথায়, ‘‘রেফারি তো ভিডিয়ো প্রযুক্তি ব্যবহার করেই পেনাল্টির নির্দেশ দিয়েছিলেন। তা ছাড়া মেসি তো গোলও করতে পারেননি। তা হলে এত বিতর্ক হচ্ছে কেন? আর্জেন্টিনা জিতেছে আলেক্সিস ম্যাক আলিস্টার ও ইউলিয়ান আলভারেসের গোলে।’’
হর্হে যখন কথা বলছিলেন, তখন পাশ দিয়ে একদল আর্জেন্টিনীয় সমর্থক ভামোস মেসি...ভামোস আর্জেন্টিনা জয়ধ্বনি দিতে দিতে এগোচ্ছিলেন। বাবার হাত ছাড়িয়ে রিকার্দোও ছুটল তাঁদের পিছনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy