Finisher Akbar Ali leads the new era in Bangladesh cricket dgtl
cricket
খেলার মাঝেই এল দিদির মৃত্যুসংবাদ, শোক সহ্য করেই প্রথম বিশ্বকাপ জয়
আঠেরোর ঔদ্ধত্যকে বশে রাখা এই তরুণের হাত ধরেই প্রথমবার বিশ্বকাপ পেল বাংলাদেশে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১০:২৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৪
শরীরী ভাষায় আগ্রাসন কম। পছন্দ করেন ঠান্ডা মাথায় নেতৃত্ব দিতে। অধিনায়ক হিসেবে সামনে আসার তুলনায় আকবর আলি বেশি স্বচ্ছন্দ সাফল্যের নেপথ্যে থাকতে। আঠেরোর ঔদ্ধত্যকে বশে রাখা এই তরুণের হাত ধরেই প্রথমবার বিশ্বকাপ পেল বাংলাদেশ।
০২১৪
আকবরের জন্ম ২০০১ সালের ৮ অক্টোবর, বাংলাদেশের রংপুর সদরে। প্রথাগত ক্রিকেট প্রশিক্ষণে হাতেখড়ি সপ্তম শ্রেণিতে। বাংলাদেশ ক্রীড়াশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনূর্ধ্ব ১৮ দলের হয়ে প্রথম লিস্ট এ ম্যাচ খেলেন ২০১৯ সালের ৮ মার্চ। বিপক্ষে ছিল আবাহনী লিমিটেড।
০৩১৪
তার আগেই অবশ্য হয়ে গিয়েছে টি-২০ ম্যাচে আত্মপ্রকাশ। ২০১৯-এর ২৫ ফেব্রুয়ারি টি-২০ ম্যাচে তাঁর অভিষেক। বাংলাদেশ ক্রীড়াশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হয়ে তিনি খেলেন প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবের বিরুদ্ধে।
০৪১৪
এখনও পর্যন্ত ১৩টি লিস্ট এ ম্যাচে তাঁর মোট রান ২৯৫। সর্বোচ্চ ৫৬। দু’টি টি২০ ম্যাচে তিনি করেছেন ৮৫ রান। সর্বোচ্চ রান ৮৫।
০৫১৪
তাঁর হাতেই তুলে দেওয়া হয়েছিল যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্বের ব্যাটন। প্রতিযোগিতার শুরু থেকেই আকবর আলি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। বলেছিলেন, বাংলাদেশ যে শুধু নক আউটে যাবে তাই নয়, বিশ্বকাপও জিতবে।
০৬১৪
যে দেশ কোনওদিন ক্রিকেট বিশ্বকাপের কোনও পর্যায়ে ফাইনালেই পৌঁছতে পারেনি, তারা কি না কাপ জিতবে! আকবর আলির কথা গুরুত্বই পায়নি সংবাদমাধ্যমে। ধরে নেওয়া হয়েছিল টগবগে রক্তর ‘অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস’ কথা বলেছে।
০৭১৪
কিন্তু অনূর্ধ্ব-১৯ যুব বিশ্বকাপ যত এগিয়েছে, ততই সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে আকবর আলির ভবিষ্যদ্বাণী। লিগ পর্যায়ে কঠিন গ্রুপেই ছিল বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান, জিম্বাবোয়ে, স্কটল্যান্ডের মতো দল।
০৮১৪
নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে জিতে আকবরের অধিনায়কত্বে প্রথমবার বিশ্বকাপ ফাইনালে পা রাখে বাংলাদেশ। একবারও তার কৃতিত্ব নিজে নেননি আকবর। বরং বলেছেন, এই দলীয় সাফল্যের নেপথ্যে আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। প্রচুর ম্যাচ খেলার সুযোগ, বিদেশ সফর, উন্নত পরিকাঠামো তাঁদের পরিশীলিত করেছে। বারবার এমনটাই জানিয়েছেন অধিনায়ক আকবর।
০৯১৪
এক বছরের বেশি সময় ধরে দল হিসেবে খেলায় তাঁদের মধ্যে বন্ডিং গড়ে উঠেছে। যার ফসল, রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকার পোচেস্ট্রুমে ভারতকে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়। সাফল্যের কৃতিত্বের বড় অংশ আকবর আলি দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে।
১০১৪
যুব বিশ্বকাপের মধ্যেই বাড়ি থেকে আসে দুঃসংবাদ। খবর আসে, সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে একমাত্র দিদির। এই শোকে যাতে ভেঙে না পড়েন অধিনায়ক, তা খেয়াল রেখেছিলেন দলের বাকি সদস্যরা। আগলে রেখেছিলেন অধিনায়ককে। চেষ্টা করেছেন তাঁর ক্ষত প্রশমিত করার। দিদির মৃত্যুশোক সহ্য করেই দেশকে প্রথম বার বিশ্বকাপ এনে দেন আকবর। দেশে ফিরে তিনি প্রয়াত দিদির সদ্যোজাত সন্তানকে দেখতে চান।
১১১৪
মাঠের বাইরে সহজ জীবনদর্শনে বিশ্বাসী তরুণ অধিনায়ক। ক্রিকেট তাঁর জীবন। কিন্তু জীবন ক্রিকেটসর্বস্ব নয়। জয়ের পাশাপাশি পরাজয়কেও মেনে নিতে শিখেছেন তিনি। মনে করেন, ক্রিকেটই জীবনের শেষ কথা নয়। মাঠের বাইরেও একটা বড় জীবন আছে।
১২১৪
একাধারে ব্যাটসম্যান-উইকেটকিপার-অধিনায়ক। অনেকেই আকবর আলির সঙ্গে ধোনির মিল খুঁজে পান। কিন্তু বাংলাদেশি অধিনায়ক জানিয়েছেন, তিনি নিজের মতো খেলতে চান। কাউকে অনুকরণ করতে চান না।
১৩১৪
তিনি উইকেটের পিছনে থেকে বিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের পর্যবেক্ষণ করতে ভালবাসেন। ফলে এতে তাঁর অধিনায়কত্বে সুবিধে হয়। জাতীয় দলের অধিনায়কত্বকেও বেশি গুরুত্ব দিতে নারাজ তিনি। বরং, এই তরুণ তুর্কি মনে করেন, দলীয় ক্রীড়া হিসেবেই দেখা উচিত ক্রিকেটকে।
১৪১৪
উইকেটকিপিংয়ের মতো ‘থ্যাঙ্কলেস’ কাজের পাশাপাশি ব্যাটিং অর্ডারেও নিজেকে রাখেন নীচের দিকে। ব্যাট করতে নামেন ছ’নম্বরে। নিজেকে ‘ফিনিশার’ বলতে ভালবাসা রংপুরের তরুণের নেতৃত্বে শুরু হল পদ্মাপাড়ের ক্রিকেটের নতুন অধ্যায়।
(ছবি: আর্কাইভ ও ফেসবুক)