গত দুই মরসুমে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি ক্লাবকে অবিশ্বাস্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন তাদের ম্যানেজার পেপ গুয়ার্দিওলা। বহু বছর পরে পেপের ক্লাব চমকে দিয়েছে টানা দু’বার প্রিমিয়ার লিগ জিতে। তাই ফুটবল মহলের মনে এখন একটাই প্রশ্ন, আসন্ন মরসুমে ম্যান সিটি কি আরও বড় বা নতুন কিছু করে দেখাতে পারবে? এ হেন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন পেপ স্বয়ং। বলেছেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য একটাই। আরও, আরও উন্নতি করে যাওয়া।’’
গত মার্চে পেপের ক্লাব সমস্ত টুর্নামেন্ট ধরে টানা এক ডজন ম্যাচ জেতার অসাধারণ নজির গড়েছিল। সঙ্গে ৩৭টি গোলও করেছিল। বিপক্ষে হয়েছিল মাত্র সাতটি গোল। প্রিমিয়ার লিগে গত মরসুমে তারা নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য গড়েছে। কিন্তু পেপ ‘এত অল্পে’ সন্তষ্ট হচ্ছেন না। বলা হয়, ফুটবলারদের কাছে তাঁর চাহিদার কোনও শেষ নেই। নতুন মরসুম শুরুর আগেও তাঁর মুখে সেই একই ধরনের কথা। গোল করা থেকে পয়েন্ট সংগ্রহ— প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে একের পর এক নজির গড়া ক্লাবের ম্যানেজারের মন্তব্য, ‘‘কথা দিলাম পরের মরসুমে আপনারা আরও শক্তিশালী ম্যান সিটিকে দেখবেন। এ ব্যাপারে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত।’’
বিশ্বফুটবলে ম্যান সিটির দাপট অন্যদের কাছে এখন স্থায়ী আতঙ্ক। আর আতঙ্ক সৃষ্টির মূল কারিগর যে গুয়ার্দিওলা তা নিয়ে কারও মনে কোনও সংশয় নেই। বিশেষ করে, আরও উন্নতি করে নতুন নতুন নজির গড়ার যে প্রবণতা ম্যান সিটির খেলায় এখন দেখা যায়, তাতে মোহিত কার্যত সবাই। শুধু তো ম্যান সিটি নয়। তাঁর প্রশিক্ষণে লিয়োনেল মেসির বার্সেলোনা লা লিগা জয়ের হ্যাটট্রিক করেছিল। একই ভাবে তাঁর আমলে দারুণ সফল বায়ার্ন মিউনিখও। হতে পারে ম্যান সিটিও এ বার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের হ্যাটট্রিক করে ফেলবে।
গুয়ার্দিওলার সুবিধে তিনি সব সময় ক্লাব-বোর্ডের আর্থিক সহায়তা পান। তিনি কিন্তু শুধু মহাতারকাদের জন্য না ঝাঁপিয়ে নতুন প্রতিবাদেরও খুঁজে বার করেন। এ বারই যেমন সই করিয়েছেন রদ্রিকে। তাও ক্লাবের ইতিহাসে রেকর্ডমূল্যে। রদ্রি সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার। বয়স মাত্র তেইশ। উচ্চতা ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি। দু’বছর আগেও স্পেনের যুব দলের সদস্য ছিলেন। গত মরসুমে খেলেছেন আতলেতিকো দে মাদ্রিদে। মূলত স্পেনের যুব দলের ফুটবলার। পেপ মনে করছেন, রদ্রি সফল হলে ম্যান সিটি আগামী দিনে আরও ভাল ফুটবল খেলবে।
সঙ্গে নতুন নতুন ট্যাকটিক্স বার করায় তাঁর অবিশ্বাস্য উদ্ধাবনী ক্ষমতা তো আছেই। সেটা তাঁর কোচিং জীবনের একেবারে গোড়া থেকেই স্পষ্ট হয়েছে। যার সব চেয়ে বড় উদাহরণ মেসিকে প্রথম বার ‘ফলস নাইন’ হিসেবে খেলানো এবং অসাধারণ সাফল্য পাওয়া। তাঁর কোচিংয়েই বার্সা ২০০৯ সালে রিয়াল মাদ্রিদকে ৬-২ হারিয়ে চমকে দিয়েছিল। সেই মরসুমের নায়ক কিন্তু ৩২ গোল করা সেন্ট্রাল স্ট্রাইকার স্যামুয়েল এটো। যা তাঁর ট্যাকটিকাল অভিনবত্বই প্রমাণ করেছিল বলে মনে করেন ফুটবল পণ্ডিতেরা। গুয়ার্দিওলা এক সাক্ষাৎকারে বললেন, ‘‘ফুটবল ঠিক আমাদের জীবনের মতো। অনেক সময় নতুন কৌশল মাথায় আসে না। একটা শুরু করতে হয়। তার পরে নতুন-নতুন চিন্তা মাথায় আসে। আর জীবনের মতোই ফুটবলেও সব সময় সব কিছু পাল্টাতে থাকে। সমস্যা আসে। তখন সমাধানের রাস্তা খোঁজাটাই কোচদের কাজ। কখনও এটা করব-ওটা করব গোছের কথা আগ বাড়িয়ে বলা যায় না। সে ভাবে দেখলে ফুটবল আর মানুষের জীবনের মধ্যে কোনও ফারাকই নেই।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘একটা দল চালাতে গিয়ে দেখেছি সমস্যার শেষ থাকে না। কিন্তু আপনি যদি সমাধানের ঠিক রাস্তাটা একবার পেয়ে যান, তা হলে দল সফল হবেই। অন্তত আমার ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে বারবার। কখনও কখনও কয়েক জনের ফর্ম অন্যদের থেকে ভাল থাকে। কখনও কখনও অসম্ভব আত্মবিশ্বাসী ফুটবলরাদের হাতে পাওয়া যায়। আমাদের কাজই হচ্ছে, সব কিছু সামলে একটা বোঝাপড়া তৈরির মতো পরিস্থিতি তৈরি করা। ফুটবল প্রতিদিন নতুন নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে হাজির হয়। জীবনও তাই।’’
পেপ বলেছেন, পরের মরসুমে আরও শক্তিশালী ম্যাঞ্চেস্টার সিটিকে দেখা যাবে। সঙ্গে সঙ্গে এটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি অসম্ভব সমীহ করছেন লিভারপুলকে। হ্যাঁ, আসন্ন মরসুমেও। তাঁর সাফ কথা, ‘‘নিঃসন্দেহে ওরা এই মুহূর্তের বিশ্বের অন্যতম সেরা দল। আমি অন্তত খুব কম এত শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে নিজের দলকে খেলিয়েছি। কী নেই ওদের? দারুণ সব কৌশল। অসম্ভব ভাল রক্ষণ। বিপক্ষকে চাপে রাখার সব ধরনের অস্ত্র ওদের হাতে। অসাধারণ প্রতিআক্রমণ করে। প্রত্যেকটা পজিশনে ভাল ভাল ফুটবলার রয়েছে। সব চেয়ে বড় কথা, ওরা এখনও উন্নতি করে যাচ্ছে। আর করবে না-ই বা কেন? ওদের ম্যানেজারের নাম যে য়ুর্গেন ক্লপ। আবার বলছি, ওদের সব কিছু আছে। যে কারণে প্রিমিয়ার লিগে গত বার আমাদের এতটা কাছে শেষ করতে পেরেছে। বলতে পারেন, ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy