প্রশ্ন: দেশে ফিরে সবচেয়ে বড় উপহার কী পেলেন?
সাক্ষী: মায়ের তৃপ্তির হাসি। আলুর পরোটা আর কড়ি চাওয়াল।
প্র: ব্যস?
সাক্ষী: (হাসতে হাসতে) টানা চার মাস ভাল করে খেতে পারিনি। বাড়িতে সবাই আলুর পরোটা খাচ্ছে দেখেও ধারেকাছে ঘেঁসতে পারিনি। ভাইয়ের কড়া নজর থাকত আমার খাওয়াদাওয়ার দিকে। তাই কাল রিও থেকে বাড়িতে ফিরে সবার আগে মায়ের হাতের আলুর পরোটা আর কড়ি চাওয়ালের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। বাব্বা, এত দিন শুধু স্যুপ আর স্যুপ!
প্র: নতুন মিশন কী ভেবে ফেলেছেন?
সাক্ষী: দু’হাজার কুড়ির টোকিও অলিম্পিক্স।
প্র: আর বিয়ে?
সাক্ষী: (লাজুক হাসি) ওই প্রসঙ্গটা বাদ দিন।
প্র: গোটা দেশ কিন্তু সেটা জানতে চায়।
সাক্ষী: (সামান্য চুপ থাকার পরে) এ বছরেই বিয়ে করছি। তবে পাত্রের নামটা প্লিজ জিজ্ঞেস করবেন না। ওটা ভীষণ সিক্রেট।
প্র: পাত্র কী করেন, সেটা তো বলা যেতেই পারে...
সাক্ষী: কুস্তিগির।
প্র: বিয়ের পরে কেরিয়ারে মন দিতে পারবেন?
সাক্ষী: ও খুব সাপোর্টিভ। আমার স্বপ্নকে ও নিজের স্বপ্ন মনে করে। বরং বিয়ের পরে আমি একজন বন্ধু পাব। যে আমার প্রস্তুতিতেও সাহায্য করবে। আমার বিশ্বাস বিয়ের পরে কুস্তিতে কোনও সমস্যা হবে না।
প্র: অলিম্পিক্স পদক জয়ের পরে সবার আগে কী মাথায় এসেছিল?
সাক্ষী: ওই লোকগুলোর কথা যাঁরা মনে করতেন, মেয়েদের দিয়ে কুস্তি হবে না। যাঁরা প্রতি পদক্ষেপে আমাকে টিটকিরি দিতেন। পদক হাতে নিয়ে প্রথমেই ভাবলাম, এ বার ওদের ভুল ধারণাটা বদলাতে পারব আমি।
প্র: এত রাগ! হাতে বন্দুক থাকলে তো গুলি করে দিতেন মনে হচ্ছে?
সাক্ষী: গুলি কেন করব? ওঁরা তো ফুলের মালা পাওয়ার যোগ্য। ওঁরা ছিল বলেই তো নিজের ভেতর জেদটা তৈরি করতে পেরেছিলাম। মরিয়া ছিলাম একদিন দেখিয়ে দেব, মেয়েরাও কম নয়। আমরা যদি জন্ম দিতে পারি, তা হলে পৃথিবীর যে কোনও কাজ করতে পারি। সবার চেয়ে ভাল করতে পারি।
প্র: শুনেছি আপনি ছোটবেলা থেকে বিমানে চড়ার স্বপ্ন দেখতেন?
সাক্ষী: আমাদের গ্রামের উপর দিয়ে কোনও বিমান গিয়েছে আর সেটা আমি দেখিনি, এ রকম ঘটনা খুঁজে পাওয়া যাবে না। ছোটবেলা থেকেই বিমানে চড়ার শখ। তাই তো রিও থেকে বিমানে ফেরার ছবিটাও পোস্ট করেছি টুইটারে।
প্র: সুশীল সিংহ তো আপনার আইডল?
সাক্ষী: হ্যাঁ, সুশীলজির লড়াই আমার খুব ভাল লাগে। দেশে ফেরার পরে উনি আমাকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এও বলেছেন যদি কোনও সাহায্য লাগে, তিনি সেটা করতে প্রস্তুত।
প্র: কোচ কুলদীপ সিংহের ভূমিকা কী ভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
সাক্ষী: রিওতে পদক জেতার জন্য যদি আমি একশো শতাংশ পরিশ্রম করে থাকি, উনি একশো এক শতাংশ করেছেন। দিন-রাত খেটেছেন। এই পদক যদি দু’ ভাগ করা যেত, তা হলে একটা অংশ কোচকে দিয়ে দিতাম।
প্র: কুস্তিগির হওয়ার স্বপ্ন কি গোড়া থেকেই ছিল?
সাক্ষী: কবাডি আর ক্রিকেটও ভাল লাগত। সচিন তেন্ডুলকরের নামে ভাইয়ের নাম রেখেছিলাম। কিন্তু একটা সময়ের পরে ওই সব খেলা আর ভাল লাগত না। তার পরে কুস্তিকেই কেরিয়ার হিসেবে বেছে নিই।
প্র: রিওর পরে জীবনটা কতটা পাল্টে গিয়েছে?
সাক্ষী: (আবেগে ধরা গলায়) পুরোটা। স্বপ্ন অনেকেই দেখে। কিন্তু কত জনের সেই স্বপ্নপূরণ হয়? আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে চাই যে, উনি আমার পরিশ্রমকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। একটা পদক...জীবনটাই বদলে গেল। স্বপ্নপূরণ, না স্বপ্ন দেখছি, মাঝেমধ্যে চিমটি কেটে সেটা দেখতে হচ্ছে!
প্র: পদকটা কোথায় রাখলেন?
সাক্ষী: আপাতত ড্রইংরুমে। সবাই দেখতে আসছেন তো। তবে রাতে বালিশের নীচে রেখে ঘুমোচ্ছি। পরে আমার বেডরুমে একটা ফ্রেম করে বাঁধিয়ে রাখব। যাতে সকালে ঘুম থেকে উঠে সবার আগে সেটা নজরে পড়ে। যাকে বলে গুডলাক চার্ম!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy