Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
একান্ত সাক্ষাৎকারে পঙ্কজ আডবাণী

সবাই ক্রিকেট খেলবে না, সচিনও হবে না

মায়ানমারে আইবিএসএল বিশ্ব বিলিয়ার্ডস চ্যাম্পিয়নশিপে নামছেন বাইশতম খেতাবের উদ্দেশে।

অপ্রতিরোধ্য: ২২তম বিশ্বজয়ের খোঁজে পঙ্কজ আডবাণী। ফাইল চিত্র

অপ্রতিরোধ্য: ২২তম বিশ্বজয়ের খোঁজে পঙ্কজ আডবাণী। ফাইল চিত্র

সুমিত ঘোষ 
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:৫৮
Share: Save:

একুশ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। শুধু এ দেশ কেন, যে কোনও দেশের খেলাধুলোতেই এমন অবিসংবাদী চ্যাম্পিয়ন পাওয়া কঠিন। তবু মাটিতে পা রেখে চলা এক সদা পরিশ্রমী যুবক। ভারতের সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবিদ কে এই প্রশ্ন উঠলে, তাঁর নামও উঠবে। মায়ানমারে আইবিএসএল বিশ্ব বিলিয়ার্ডস চ্যাম্পিয়নশিপে নামছেন বাইশতম খেতাবের উদ্দেশে। আজ, বুধাবারই ফাইনাল। তার আগে আনন্দবাজারের সঙ্গে খোলামেলা আলাপচারিতায় পঙ্কজ আডবাণী। তুলে দেওয়া হল নির্বাচিত অংশ...

প্রশ্ন: একুশ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। বছরের পর বছর ধরে বিশ্বসেরা থাকার রহস্য কী?

পঙ্কজ আডবাণী: এত বছর ধরে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করাটাই আমার কাছে এত সম্মানের ব্যাপার যে, যাবতীয় প্রেরণা আমি ওখান থেকেই পাই। আর একটা ব্যাপার হচ্ছে, আমি এমন একটা খেলায় আছি, যা অন্য রকম। চ্যালেঞ্জটাও একটু অন্য ধরনের। বিলিয়ার্ডস ও স্নুকারে বার বার নিজেকে বাধার সামনে ফেলা এবং সেটা অতিক্রম করার মানসিকতা তৈরি করা— এটা আমার কাছে খুব চ্যালেঞ্জিং মনে হয়। যে রাস্তাটায় হেঁটে কেউ দেখতে চায় না, সেই পথ পেরনোর মধ্যে আমি বরাবর অন্য রকম আনন্দ পেয়েছি।

প্র: আপনার আদর্শ ক্রীড়াবিক কে? যাঁকে সামনে রেখে নিজেকে গড়ে তুলতে চেয়েছেন বা এখনও চান?

পঙ্কজ: রজার ফেডেরার। এত বড় চ্যাম্পিয়ন আর দেখা যাবে না। সব দিক দিয়েই সেরা। যেমন উৎকর্ষ, তেমন দক্ষতা, তেমন জনতার প্রিয়, তেমনই নিখুঁত। স্বপ্নের ক্রীড়াবিদ!

প্র: জীবনের সেরা প্রাপ্তি বাছতে বললে কোনটাকে বেছে নেবেন?

পঙ্কজ: কোনও একটা প্রাপ্তিকে বাছতে চাই না। সাধারণ ভাবে বলব, যা পেয়েছি তাতে আমি খুশি। ক্রীড়া জগতের দিকে চোখ মেলে তাকালে এমন অনেক খেলোয়াড় পাওয়া যাবে, যাঁরা ৪৫-৫০ বছর বয়স পর্যন্তও চুটিয়ে খেলে চলেছেন। এবং, বেশ ভালই খেলছেন। কিন্তু আমি তত দিনই থাকব, যত দিন খেলাটা উপভোগ করতে পারব। তবু যদি জিজ্ঞেস করেন, বলব, বিলিয়ার্ডস এবং স্নুকারে সব ধরনের ফর্ম্যাটে বিশ্ব খেতাব জেতাটা খুব তৃপ্তিদায়ক।

প্র: বার বার বিশ্বজয়ের জন্য তৈরি হওয়ার সময় নিজেকে কী বলেন?

পঙ্কজ: বলি এটাই যে, যা করতে চাইবে, সেটা ভাল ভাবেই করতে হবে। আর পঙ্কজ, তুমি তো এটাই করতে চেয়েছ জীবনে। উচ্চতম মান সামনে রাখো, প্রথমে তাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করো, তার পর সেই মানকেও ছাপিয়ে গিয়ে আকও উচ্চ শৃঙ্গে ওঠার জন্য পরিশ্রম করো। বিশ্বাস করুন, কোনও বারই বিশ্ব খেতাব জিতে বাড়ি ফিরে কুশনে নিজেকে এলিয়ে দিয়ে বলিনি, পঙ্কজ, এই তো দারুণ করেছ। এ বার একটু আরাম করতেই পারো। বরং উল্টোটাই সব সময় বলেছি যে, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছ ঠিক আছে। আরও ভাল করা যায়। সেই চেষ্টাই করো।

প্র: আপনার এই দীর্ঘ, ধারাবাহিক সাফল্যের কী এটাই রহস্য? কখনও আত্মতুষ্টি ঢুকতে না দেওয়া?

পঙ্কজ: আমার মনে হয় এটাই আসল কারণ। আমার দর্শন হচ্ছে, শেখার কোনও শেষ নেই।

প্র: অবিসংবাদী বিশ্বজয়ী হওয়ার জন্য অনেক ত্যাগও তো করতে হয়েছে। সেগুলো কী রকম?

পঙ্কজ: সেরা হতে চাইলে আত্মত্যাগ তো করতেই হবে। সেটা তো এক জন ক্রীড়াবিদের জীবনের অঙ্গ। এ নিয়ে আমার কোনও অভিযোগ নেই। তবে জিজ্ঞেস করছেন বলে বলছি, স্বাভাবিক স্কুল জীবন বলে কিছু ছিল না আমার। কিশোর বয়সের মজাটাই আমার পাওয়া হয়নি। কারণ ছোট বয়স থেকেই যে ঠিক করে ফেললাম, আমি বড় খেলোয়াড় হতে চাই আর জীবন তখনই খুব গুরুগম্ভীর মোড় নিয়ে নিল।

প্র: ফিরে তাকিয়ে আফসোস হয় যে, আহা, সাধারণ একটা বাচ্চার মতো খেলোমেলা স্ফূর্তিতে বড় হতে পারলাম না? কিশোর বয়সে জীবনের সেরা মজাটাই পাওয়া হল না?

পঙ্কজ: না, একদম হয় না। যা করেছি, তা নিয়ে আমি খুশি। কিশোর বয়সের সেই মজাটা হয়তো আমাকে বিসর্জন দিতে হয়েছিল কিন্তু তার পরিবর্তে যেটা পেয়েছি, তা নিয়ে আমি অত্যন্ত খুশি এবং গর্বিত। আমিই তো এই জীবনটা চেয়েছি। সারা বিশ্বের সর্বত্র গিয়ে খেলব, জিতব, বিশ্বসেরা হব। আমি তো নিজেকে ফুলটাইম খেলোয়াড় ছাড়া অন্য কোনও ভূমিকায় দেখার কথা কল্পনাতেও আনতে পারি না!

প্র: ভারতে বিলিয়ার্ডস, স্নুকারের অবস্থা নিয়ে কী বলবেন আপনি?

পঙ্কজ: অনেক কিছু করা যেতে পারে। প্রত্যেক খেলারই নিজস্ব বাধা রয়েছে। আমার মনে হয়, প্রত্যেক বছর তিনটি জাতীয় পুরস্কারের মধ্যে দু’টি অলিম্পিক স্পোর্টের বাইরের প্রতিযোগীদের দেওয়া উচিত। তা হলে সব ধরনের খেলায় শিশু বা কিশোরদের উৎসাহিত করা যাবে। সকলেই তো আর ক্রিকেট খেলবে না সচিন তেন্ডুলকরও হতে পারবে না!

প্র: আপনার কি মনে হয়, ভারতে ক্রিকেটকে বড্ড বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়? মনে হয় কি অন্য খেলা বঞ্চিত?

পঙ্কজ: দেখুন, যে খেলা টিভিতে ভাল করে দেখানো হবে, সেটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। ক্রিকেটের ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। আমি চাইব, বিলিয়ার্ডস-স্নুকারও এ বার টিভিতে বেশি করে দেখানো হোক। তা হলে আগ্রহ বাড়বে, সমর্থনও আসবে। অন্য অনেক খেলার ক্ষেত্রে কিন্তু সেটা হয়েছে। কে ভাবতে পেরেছিল যে, ভারতে ফুটবলের চেয়ে কবাডির টিভি দর্শকের সংখ্যা বেশি হতে পারে! হাতের কাছে কবাডিই হচ্ছে সেরা উদাহরণ। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, টিভি সম্প্রচারের সমর্থন পেলে অনেক খেলাই আমাদের দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে।

প্র: ব্যাডমিন্টনে পি ভি সিন্ধুর বিশ্বজয় নিয়ে কী বলবেন?

পঙ্কজ: অসামান্য এক প্রাপ্তি। যেটা শেখার মতো, তা হচ্ছে, সিন্ধু সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পৌঁছনোর জন্য একটানা পরিশ্রম করে গিয়েছে। বার বার চেষ্টা করেও যখন পারছে না, তখনও বিশ্বাস হারায়নি। আরও পরিশ্রম করেছে লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য। এই মানসিকতাটাই চ্যাম্পিয়নের জন্ম দেয়। আমি আশা করব, টোকিয়ো অলিম্পিক্সে গিয়েও সোনা জিতবে সিন্ধু। ওর জন্য অনেক শুভেচ্ছা।

প্র: একুশ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নের কাছে জানতে চাইব, চ্যাম্পিয়ন তৈরি হওয়ার রহস্য কী?

পঙ্কজ: তিনটে জিনিস। পরিশ্রম। অধ্যবসায়। ইচ্ছাশক্তি। আর তার সঙ্গে স্বপ্ন দেখতে হবে। আমি খুব স্বপ্ন দেখতাম, দেশের হয়ে বড় মঞ্চে বড় ট্রফি জিতছি। কী জানেন তো, স্বপ্ন সফল হতে গেলে প্রথমে তো স্বপ্ন দেখতেও হবে, তাই না?

অন্য বিষয়গুলি:

Interview Snooker Pankaj Advani Billiards
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE