স্বপ্নপূরণ: বায়ার্ন জার্সিতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত সরপ্রীত। এফসি বায়ার্ন
প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত ফুটবলার হিসেবে বায়ার্ন মিউনিখের জার্সিতে অভিষেক হয়েছে তাঁর। রবার্ট লেয়নডস্কি, ফিলিপে কুতিনহো, থোমাস মুলারদের সতীর্থ সরপ্রীত সিংহের জন্ম নিউজ়িল্যান্ডে হলেও মনেপ্রাণে তিনি ভারতীয়। সচিন তেন্ডুলকর, বিরাট কোহালি থেকে পঞ্জাবি ভাংড়া— তাঁর জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। ভারতের বাছাই করা কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমকে মিউনিখ থেকে ফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বায়ার্নের আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার শোনালেন নানা অজানা কাহিনি।
পঞ্জাব থেকে নিউজ়িল্যান্ড: পঞ্জাবের মাহিলপুরের কাছে একটি ছোট গ্রামে আমাদের পূর্বপুরুষেরা থাকতেন। আমার জন্ম অবশ্য নিউজ়িল্যান্ডের অকল্যান্ডে। তবে ভারতীয় সংস্কৃতির আবহেই আমি বড় হয়েছি। পঞ্জাবি বলতে পারি। আমার প্রিয় গায়কের নাম জ়্যাজ়ি বি। এখনও পর্যন্ত তিন বার আমি পূর্বপুরুষের ভিটেতে গিয়েছি। প্রত্যেক বারই অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়েছে।
ফুটবলার হওয়ার জন্য গৃহত্যাগ: নিউজ়িল্যান্ডে ফুটবলের চেয়ে ক্রিকেট বেশি জনপ্রিয়। আমার কাকা ও দাদা ক্রিকেটের পাশাপাশি ফুটবলও খেলতেন। আমিও ছোটবেলায় সব ধরনের খেলাধুলোই করেছি। কিন্তু আমাকে বেশি আকর্ষণ করত ফুটবল। তাই ফুটবলার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ফুটবলের প্রথম পাঠ অকল্যান্ডের একটি অ্যাকাডেমিতে। কিন্তু পেশাদার ফুটবলার হওয়ার জন্য ১৫ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম ওয়েলিংটনে।
বায়ার্ন মিউনিখে সুযোগ: পেশাদার ফুটবলার হিসেবে আমার প্রথম ক্লাব ছিল ওয়েলিংটন ফিনিক্স। ওখানে খেলার সময় নিউজ়িল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-২০ জাতীয় দলে নির্বাচিত হই। অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে আমার খেলা পছন্দ হয় বায়ার্ন কর্তাদের। আমাকে সই করার প্রস্তাব দেন তাঁরা।
স্বপ্নপূরণ: বায়ার্নের জার্সিতে অভিষেক আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত। তবে এই ম্যাচের আগে আমার মানসিকতায় কোনও পরিবর্তন হয়নি। একমাত্র লক্ষ্য ছিল, ধারাবাহিকতা যেন বজায় রাখতে পারি। সব সময় আমি মনে করি, আমার পরের প্রজন্মের ফুটবলারদের কাছে আমি যেন প্রেরণা হয়ে উঠতে পারি। ওরা যেন আমাকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়। আমি মনে করি, ভারতীয় এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত অনেক ফুটবলার আছে, যারা ইউরোপে খেলার যোগ্য।
অনুপ্রেরণা কোহালি: ফুটবল খেললেও ক্রিকেটের সব খবর রাখি। সময় পেলেই ক্রিকেট দেখি। আমাকে অনুপ্রাণিত করে বিরাটের ধারাবাহিকতা ও নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা। একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দেয় বিরাট। দলের সকলকেও নিজের সেরাটা উজাড় করে দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। বিরাট অসাধারণ। এ ছাড়া সচিন তেন্ডুলকরেরও আমি ভক্ত ছিলাম।
শিক্ষক লেয়নডস্কি-কুতিনহো: পেশাদার ফুটবলে সর্বোচ্চ পর্যায়ে কী ভাবে খেলতে হয়, তা শিখেছি লেয়নডস্কি ও কুতিনহোর মতো বিশ্বের অন্যতম সেরা দুই ফুটবলারের কাছে। অনুশীলন থেকে ড্রেসিংরুম— সর্বত্র ওরা আমাকে দারুণ ভাবে আগলে রাখে। বিশ্ব ফুটবলে লেয়নডস্কিকে বলা হয় গোলমেশিন। ওর কাছে বল ধরা, শট নেওয়ার বিশেষ কৌশল শিখেছি। কুতিনহো শিখিয়েছে, কী ভাবে কাঁধ ব্যবহার করে বিপক্ষের চক্রব্যূহ ভেঙে এগিয়ে যেতে হয়। বায়ার্ন ওরা শুধু আমার সতীর্থ নয়, শিক্ষকও।
কৃষ্ণ-উইলিয়ামস যুগলবন্দি: গত মরসুমে অস্ট্রেলীয় ‘এ’ লিগের সেরা ফুটবলার ছিল রয়। ডেভিড উইলিয়ামসের সঙ্গে ওর জুটি ভয়ঙ্কর। তবে ওদের সব চেয়ে বড় গুণ— জুনিয়র ফুটবলারদের সঙ্গে সম্পর্ক। রয় আমার কাছে নিজের দাদার মতো। ওয়েলিংটন ফিনিক্সে খেলার সময় আমাকে আগলে রাখত, উদ্বুদ্ধ করত, ভাল খেলার পরামর্শ দিত। শুধু তাই নয়। ভুল-ত্রুটি হলে তা শুধরেও দিত। দু’জনের সঙ্গেই যোগাযোগ রয়েছে। মাঝেমধ্যেই কথা হয়।
ভারতে খেলার স্মৃতি: ২০১৮ সালে মুম্বইয়ে আন্তর্মহাদেশীয় কাপে নিউজ়িল্যান্ডের হয়ে খেলতে গিয়েছিলাম। ভারতের মাটিতে ভারতের বিরুদ্ধে খেলার অনুভূতি একেবারেই অন্য রকম ছিল। কারণ, দু’টি দেশই আমার হৃদয় জুড়ে রয়েছে। মনে আছে, ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সেই প্রতিযোগিতায়। এখনও ভারতীয় দলের কয়েক জন ফুটবলারের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। ভারতীয় ফুটবল সম্পর্কে সব খবর ওদের কাছ থেকে পাই। আমার মনে হয়, ভারতীয় ফুটবল ঠিক পথেই এগোচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy