Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Manoj Tiwary

‘যত সমালোচনা হোক না কেন, কথা বলবে আমার ব্যাটই’

রেকর্ড নিয়ে চিন্তা করলে অনেক সময় পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। নিজস্ব প্রাপ্তি নিয়ে যথেষ্ট খুশি। কারও সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যেতে চাই না।

তৃপ্ত: ব্যাট নিয়ে ছবি পোস্ট করে মনোজের টুইট, ‘‘আজ রাতে ঘুমটা দারুণ হবে।’’ তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরও।

তৃপ্ত: ব্যাট নিয়ে ছবি পোস্ট করে মনোজের টুইট, ‘‘আজ রাতে ঘুমটা দারুণ হবে।’’ তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরও।

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত
কল্যাণী শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:২৮
Share: Save:

ভারতীয় দলে প্রথম সুযোগ পেয়েই কাঁধের চোট ছিটকে দিয়েছিল তাঁকে। ২০১২-তে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করার পরের ম্যাচেই বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আইপিএলে একাধিক ম্যাচে ভাল পারফর্ম করেও দল পাচ্ছেন না। এক রাশ যন্ত্রণা থাকা সত্ত্বেও তাঁর মুখে তৃপ্তির হাসি। কী করে নিজেকে এখনও অনুপ্রাণিত করেন? ৩৪ বছর বয়স হওয়া সত্ত্বেও তাঁর লক্ষ্য কী? তিনি কি এখনও জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন দেখেন? জীবনের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি করার পরে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকারে সবকিছু নিয়েই খোলামেলা কথাবার্তা বললেন প্রাক্তন অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি।

প্রশ্ন: জাতীয় নির্বাচক দেবাং গাঁধীর রেকর্ড ৩২৩ রানের। আপনি ২০ রান পিছিয়ে থেকে শেষ করলেন। তাঁকে টপকে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল না?

মনোজ: এই সব নিয়ে ভাবি না। ও যদি এ বিষয়ে খুশি থাকে, তা হলে থাকুক। আমার সামনে এখনও অনেক সুযোগ আসবে ওকে টপকানোর। রেকর্ড নিয়ে চিন্তা করলে অনেক সময় পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। নিজস্ব প্রাপ্তি নিয়ে যথেষ্ট খুশি। কারও সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যেতে চাই না।

প্রশ্ন: ম্যাচে যে ক’টি মাইলফলক ছুঁয়েছেন, ব্যাটের পিছনে চুমু খেয়েছেন। এটি কি বিশেষ কোনও উৎসব?

মনোজ: ব্যাটের পিছনে ছেলের নাম খোদাই করা (যুবান)। গত বছরও ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলাম ছেলের নাম খোদাই করা ব্যাট দিয়ে। ট্রিপল সেঞ্চুরিও সেই ব্যাট দিয়ে। এখন আমি ক্রিকেট খেলি ছেলের জন্য। বড় হওয়ার পরে ও যেন বোঝে, আমি খারাপ খেলতাম না (হাসি)। আরও কয়েক বছর ক্রিকেট খেলে যেতে চাই, যাতে ও বড় হয়ে আমার খেলা দেখতে পারে।

প্রশ্ন: জীবনের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি কি ছেলেকেই উৎসর্গ করলেন?

মনোজ: অবশ্যই। স্ত্রী সুস্মিতাকেও উৎসর্গ করছি। ব্যাট করার সময় শুধু ছেলের হাসি মুখটা মাথায় থাকে। যত সমালোচনা হোক না কেন, কথা বলবে আমার ব্যাটই।

আরও পড়়ুন: ‘আইপিএল খেলব না, এটা মেনে নেওয়া কঠিন ছিল’

প্রশ্ন: গত মরসুমের শুরুতেই দু’টি ম্যাচের আগে শর্ত দেওয়া হয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছিল দলে আপনার জায়গা নিয়েও। ডাবল সেঞ্চুরি করে জবাব দিয়েছিলেন। এ বার নেতৃত্ব হারানোর পরে এটাই কি জবাব?

মনোজ: নেতৃত্ব হারানোর পরে খারাপ তো লাগেই। তবে আমাকে স্প্লিট ক্যাপ্টেন্সির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। যা আমি নাকচ করেছি। আমি মনে করি, অধিনায়ক একজনই থাকা উচিত। না হলে দলের মধ্যে অনেক সমস্যা তৈরি হয়। এটা কোনও জবাব নয়, বাস্তবটা উল্লেখ করার সামান্য একটা প্রয়াস মাত্র।

প্রশ্ন: ভারতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন কি এখনও দেখেন?

মনোজ: পুরোটাই নির্বাচকদের হাতে। আমাদের এখান থেকে কেউ পারফর্ম করলে ভারতীয় ‘এ’ দল পর্যন্ত দরজা খোলা থাকে। বাকিটা আর যাওয়া হয় না। বিভিন্ন ক্রিকেটারের জন্য বিভিন্ন নিয়ম। কেউ ৩৫ বছরেও ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে খেলছে। কোনও একজনকে ৩৪ বছর বয়সেই বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে পারফর্ম করা সত্ত্বেও। শাহবাজ নাদিম যদি ৩০ বছর বয়সে ভারতীয় দলের হয়ে খেলতে পারে, তা হলে বাকিরা কেন পারবে না? তার মানে ৩০ বছর বয়সি ক্রিকেটারদের একেবারে পরিকল্পনার বাইরে রাখা হচ্ছে না। এটাই প্রমাণ করে দেয়, এক একজনের জন্য নিয়মটা আলাদা।

প্রশ্ন: আপনার উত্তরে ক্ষোভ ফুটে উঠছে। কোনও বিশেষ ইঙ্গিত করছেন?

মনোজ: ছোট্ট উদাহরণ দিয়ে বলি। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ওয়ান ডে-তে শ্রীকর ভরতকে ব্যাক আপ কিপার হিসেবে রাখা হয়েছিল। আমার প্রশ্ন, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ভরতের কী পারফরম্যান্স? তা হলে বুঝে নিতে হবে ওকে দলে রাখার জন্য কারও প্রভাব রয়েছে। বাকিটা যে যেভাবে নেবেন। মরসুমে হাজার, দেড় হাজার রান করে দলে সুযোগ পাওয়ার নিয়ম আমার মাথায় আসে না। কোন পরিস্থিতিতে একজন রান করছে, সেটা বোঝা উচিত। আজ তিনশো করেছি ঠিকই। কিন্তু ইডেনে অন্ধ্র প্রদেশের বিরুদ্ধে যে পিচে ৪৭ রান করেছিলাম, সেই ইনিংসকে কি করে কম নম্বর দেব? সেখানে টেস্ট ক্রিকেটার হনুমা বিহারীও রান পায়নি। অথচ আমি রান পেয়েছি। হিসেব মতো, আমার চেয়ে বেশি রান করা উচিত ছিল ওর।

প্রশ্ন: মরসুমের শুরু থেকেই দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অশোক ডিন্ডা, সুদীপ দলের বাইরে। এটা কতটা চাপ তৈরি করেছিল?

মনোজ: কোচ যে ভাবে দল চালাতে চান, সেটাকে সম্মান দিতেই হয়। না হলে ক্রিকেটারদেরই ক্ষতি। মরসুমের শুরুতে ফিটনেস টেস্ট হয়েছিল। আমি আর ডিন্ডা দিয়েছিলাম। পাশও করেছিলাম। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে সবার দল চালানোর পদ্ধতি এক নয়। টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনা অনুযায়ী চলা উচিত।

প্রশ্ন: ব্যর্থতার সময় কী ভাবে নিজেকে অনুপ্রাণিত করেন?

মনোজ: ছোটবেলার কোচ মানব (মানবেন্দ্র ঘোষ) স্যরের সঙ্গে আলোচনা করি। আমাকে এখনও উৎসাহ দেন স্যর। ব্যর্থতার দিনে এখনও বকা খাই। কিন্তু ওঁর থেকেই আমার সব কিছু শেখা। তা ছাড়া বিভিন্ন খেলোয়াড়দের জীবনী পড়ি। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবিদ্বেষের সঙ্গে লড়াই করে উঠে আসেন কত তারকা। কেউ ছোটবেলা থেকে মাকে পাননি। কেউ বাবাকে চোখে দেখেননি। কারও মা, বাবা তাঁদের সন্তানকে রাস্তায় রেখে গিয়েছেন। তাঁদের জীবনী পড়ে উপলব্ধি করি, আমার লড়াই ওদের কাছে একেবারেই ফিকে। এ ভাবেই সাহস সংগ্রহ করি।

প্রশ্ন: ১৫৬ রানে প্রথম দিন শেষ করেছিলেন। কাল রাতেই কি ট্রিপল সেঞ্চুরি করার পরিকল্পনা করে ফেলেছিলেন?

মনোজ: সে রকম না। ষাট রানে তিন উইকেট হারানোর পরে প্রতিআক্রমণ ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। ওদের মূল স্পিনার মেহদি হাসানকে শুরু থেকেই আক্রমণ করে বিপক্ষের মেরুদণ্ড ভাঙতে চেয়েছি। সেই পরিকল্পনায় আমি সফল।

প্রশ্ন: ট্রিপল সেঞ্চুরি করার পরে আপনার মধ্যে সে রকম কোনও উচ্ছ্বাস কেন দেখা গেল না?

মনোজ: কী করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আগে ভেবে নিতাম কী উৎসব করব। কিন্তু এ দিন কিছুই ঠিক করে উঠতে পারিনি। কী জানি, হয়তো অভিজ্ঞতা ও বয়সের প্রভাব (হাসি)।

প্রশ্ন: দিনের শেষে পাঁচ উইকেট পড়ে যাওয়ায় এই ম্যাচ থেকে কী আশা করছেন?

মনোজ: সাত পয়েন্টের জন্যই ঝাঁপাব। পেসাররা যে ভাবে বল করেছে, আশা করি সকালের মধ্যেই ওদের অলআউট করে দেওয়া যাবে। পরের দশ উইকেট ফেলার জন্য দেড় দিন যথেষ্ট।

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Bengal Manoj Tiwary Hyderabad Ranji Trophy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy