ত্রাতা: শেষ মুহূর্তে গোল করে দলকে জিতিয়ে আমনা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
পাঠচক্র এফসি ১ : ইস্টবেঙ্গল ২
রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে নাটকীয় জয়!
কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে টানা ছয় ম্যাচ জিতে খেতাবের আরও কাছে ইস্টবেঙ্গল।
বৃহস্পতিবার পাঠচক্র এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্যালারির দিকে দৌড়লেন মহম্মদ আল আমনা-রা। উদ্দেশ্য ছয় নম্বর ম্যাচে লাল-হলুদ জয়রথ থমকে যাওয়ার আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়া সমর্থকদের উজ্জীবিত করা! মাস ছয়েক আগে দুর্ঘটনায় ডান পা হারিয়েছেন বেলুড়ের রনি দাস। এ দিন তিনিও গ্যালারিতে ছিলেন। ম্যাচের পর বছর পঁচিশের লাল-হলুদ সমর্থককেও জড়িয়ে ধরলেন আমনা।
ইস্টবেঙ্গল কোচ খালিদ জামিল কেন যে প্রতিপক্ষকে নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন, তা ম্যাচ শুরু হওয়ার পরেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। স্নেহাশিস চক্রবর্তী, অরূপ রায় ও জগন্নাথ ওঁরাও— পাঠচক্র ত্রয়ীর দাপটে ইস্টবেঙ্গল রক্ষণে রীতিমতো আতঙ্কের আবহ। ৪২ মিনিটে ম্যাচের সেরা জগন্নাথই গোল করে আরও চাপ বাড়িয়ে দিলেন। চব্বিশ ঘণ্টা আগে মোহনবাগান পয়েন্ট নষ্ট করেছে রেনবো এসসি-র বিরুদ্ধে। এ দিন তাই লাল-হলুদ শিবিরের কাছে জয়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অথচ এই ম্যাচেই কিনা ছন্দপতন।
ভি পি সুহের চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ায় ফরোয়ার্ডে জবি জাস্টিন ও সুরাবুদ্দিনকে রেখে দল সাজিয়েছিলেন খালিদ। পাঠচক্র কোচ পার্থ সেনের স্ট্র্যাটেজি ছিল—এক) ইস্টবেঙ্গলের দুই স্ট্রাইকারকে খেলতে না দেওয়া। জিম্বাবোয়ের জাতীয় দলের ডিফেন্ডার ভিক্টর খামুখাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন জবি ও সুরাবুদ্দিনকে আটকানোর। দুই) আমনাকে বল ধরতে না দেওয়া। সিরিয়ার জাতীয় দলের মিডফিল্ডারই ইস্টবেঙ্গলের প্রাণভোমরা। তিনি ছন্দে না থাকলে মশাল যেন মোমবাতি!
আরও পড়ুন: ‘কোহালির ব্যাটিং যেন অসাধারণ ধ্রুপদী সঙ্গীত’
প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগে পাঠচক্রের চক্রব্যূহ থেকে আমনা বেরিয়ে আসতেই ছন্দ ফিরল লাল-হলুদে। ৪৫ মিনিটে প্রায় পঁচিশ গজ দূর থেকে নেওয়া তাঁর শট পাঠচক্র গোলরক্ষকের হাত থেকে বেরিয়ে আসতেই গোলে ঠেলে দিলেন ব্রেন্ডন ভানলালরেমডিকা। আর ৮৬ মিনিটে পেনাল্টি থেকে নিজেই গোল করলেন। ম্যাচের পরে রেফারি তন্ময় ধরকেই কাঠগড়ায় তুলছে পাঠচক্র শিবির। পার্থ বললেন, ‘‘পেনাল্টি ছিল না। রেফারির জন্যই হারলাম।’’
কলকাতা লিগে জয়ের ডাবল হ্যাটট্রিক সেরেও অবশ্য উচ্ছ্বসিত নন লাল-হলুদ কোচ। ম্যাচের পর খালিদ বলছিলেন, ‘‘অন্যতম কঠিন ম্যাচ ছিল। শুরুতেই গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ায় সমস্যা হয়েছিল। তবে দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছি। প্রধান লক্ষ্য ছিল জিতে মাঠ ছাড়া। সেটা আমরা করতে পেরেছি।’’ কেন চেনা ছন্দে এ দিন পাওয়া যায়নি ইস্টবেঙ্গলকে? খালিদের ব্যাখ্যা, ‘‘সুহের আমাদের প্রধান স্ট্রাইকার। চোটের জন্য ওকে খেলাতে পারলাম না। উইলিস প্লাজা জাতীয় দলের হয়ে খেলতে গিয়েছে। জবি একা হয়ে যাচ্ছিল বলে গোল পেতে সমস্যা হয়েছে।’’ কোচের সঙ্গে একমত লাল-হলুদের জয়ের নায়ক আমনা-ও। বললেন, ‘‘পাঠচক্র দারুণ দল। আমরা অন্যতম কঠিন ম্যাচ জিতলাম।’’
ছয় ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে লিগ শীর্ষে ইস্টবেঙ্গল। টানা আট বার খেতাব নিশ্চিত ধরে নিয়ে উৎসব শুরু করে দিয়েছেন সমর্থকরা। কিন্তু আমনা সতর্ক। বললেন, ‘‘বাকি তিনটি ম্যাচই আমাদের কাছে ফাইনাল। এই ম্যাচগুলো জেতা ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে চাই না।’’
ইস্টবেঙ্গল: লুইস ব্যারেটো, সামাদ আলি মল্লিক, গুরবিন্দর সিংহ, মেহতাব সিংহ, তন্ময় ঘোষ, লালদানমাওয়াইয়া রালতে (কেভিন লোবো), প্রকাশ সরকার (মহম্মদ রফিক), মহম্মদ আল আমনা, ব্রেন্ডন ভানলালরেমডিকা, জবি জাস্টিন (গ্যাব্রিয়েল ফার্নান্দেজ) ও সুরাবুদ্দিন মল্লিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy