Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
কলকাতা লিগের দেড়শোতম ডার্বি

জার্মানির বিরুদ্ধে আলজিরীয় ছক অনুকরণে জিতল ইস্টবেঙ্গল

জুন মাসের নয় তারিখে মোহনবাগানের অনুশীলন শুরু করেছিলেন সুভাষ ভৌমিক। কিন্তু তার একুশ দিনের মাথায় ৩০ জুন বিশ্বকাপে জার্মানি-আলজিরিয়া ম্যাচের দিকে কি বাড়তি মনযোগ দিয়েছিলেন সবুজ-মেরুন টিডি? নিউ আলিপুরের বাসিন্দা কি জানতেন, লিগে মোহনবাগানের দুটো ম্যাচের কয়েকটা স্পেশ্যাল মুভ ক্লাবের নতুন প্রজন্মের এক কর্তাকে নিয়ে ইস্টবেঙ্গল অধিনায়ক হরমনজ্যোৎ সিংহ খাবরা গোপনে ক্যামেরায় তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন?

স্ত্রী-র টিকিট না পাওয়ার গোঁসা ভাঙল ডার্বি জয়ে। ছবি: দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

স্ত্রী-র টিকিট না পাওয়ার গোঁসা ভাঙল ডার্বি জয়ে। ছবি: দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৪:০৭
Share: Save:

জুন মাসের নয় তারিখে মোহনবাগানের অনুশীলন শুরু করেছিলেন সুভাষ ভৌমিক।

কিন্তু তার একুশ দিনের মাথায় ৩০ জুন বিশ্বকাপে জার্মানি-আলজিরিয়া ম্যাচের দিকে কি বাড়তি মনযোগ দিয়েছিলেন সবুজ-মেরুন টিডি?

নিউ আলিপুরের বাসিন্দা কি জানতেন, লিগে মোহনবাগানের দুটো ম্যাচের কয়েকটা স্পেশ্যাল মুভ ক্লাবের নতুন প্রজন্মের এক কর্তাকে নিয়ে ইস্টবেঙ্গল অধিনায়ক হরমনজ্যোৎ সিংহ খাবরা গোপনে ক্যামেরায় তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন?

কলকাতা লিগের দেড়শোতম ডার্বিতে বাগান-ছারখারের চিত্রনাট্যে এই দু’টো ফ্যাক্টরই কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের কাছে ঐতিহাসিক ভাবে মহারসদ হয়ে থাকল!

৬১ দিন আগের সেই বিশ্বকাপ ম্যাচে জার্মানির কাছে ১-২ হারলেও, দ্বিতীয়ার্ধের পুরোটা আলজিরিয়ার ৪-২-৪ ছকে ভয়ঙ্কর আক্রমণাত্মক ফুটবল বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের শিরদাঁড়া দিয়ে হিমস্রোত বইয়ে দিয়েছিল। রবিবার কিছুটা সময় সেই ছক দিয়েই সুভাষের বাগান ধ্বংস করে গেল কোলাসোর ইস্টবেঙ্গল।

৩-১ জিতে ফিরে ইস্টবেঙ্গল ড্রেসিংরুমে যখন ‘নিতুদা জিন্দাবাদ’ স্লোগানে মহাসেলিব্রেশন চলছে, সেই সময়ই পাওয়া গেল লাল-হলুদের ডার্বি জয়ের নেপথ্যকাহিনি। যার তিন নায়ক তিন। কোচ আর্মান্দো, বিদেশি বার্তোস এবং ক্যাপ্টেন খাবরা।

সাংবাদিক সম্মেলন সেরে ড্রেসিংরুমে ফিরে আর্মান্দো হাসতে হাসতে বলছিলেন, “কী, বলেছিলাম তো, নিজেদের ছন্দে খেলতে পারলে আমার দলকে নিয়ে অন্যরা ভাববে। আজ দ্বিতীয়ার্ধের জন্য সেই ছন্দটা তুলে রেখেছিলাম। সেটা বার করতেই ম্যাচটা আমাদের পকেটে চলে এল।”

ছন্দ বোঝা গেল। সবাই দেখেছে। কিন্তু সেটা ডার্বির মহাযুদ্ধে আমদানি হল কোথা থেকে? কী ভাবে?

খাবরা বলতে চাইলেন না। প্রথমে কোচকে দেখালেন। তার পর বার্তোসকে। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর কাছে ডার্বি জয়ের-উপহার নিয়ে ফেরার পথে বার্তোস যা বললেন তার নির্যাস এ রকম: ‘অপারেশন মোহনবাগান’-এর ব্লু-প্রিন্ট তৈরি হয়েছিল সাত দিন আগে। মোহনবাগানের লিগ ম্যাচের বিশেষ কিছু মুভের ছবি আর জার্মানি ম্যাচে আলজিরিয়ার ৪-২-৪ ছকটা আর্মান্দোকে বলে দেন বার্তোস-সহ লাল-হলুদের সিনিয়ররা। তখনই ঠিক হয়ে যায়, ডার্বিতে ৪-৪-১-১ ছকে প্রথমার্ধটা খেললেও দ্বিতীয়ার্ধে টিম শুরু করবে ৪-১-৩-২-এ। কিন্তু পরের মিনিট থেকেই মেহতাবের পাশে খাবরা নেমে আসবেন। ইস্টবেঙ্গল তখন বাগান রক্ষণে ঝড় তুলবে আলজিরিয়ানদের সেই ৪-২-৪ ছকে। সেই মতো অনুশীলনও হয় শুক্রবার সকালে।

ঠিক হয়, পুরো দ্বিতীয়ার্ধ এমন আক্রমণাত্মক ছকে খেলার মতো ফিটনেস যখন টিমের নেই, তখন হাফটাইমের পর প্রথম পনেরো মিনিট ওই স্ট্র্যাটেজিতে যাওয়া হোক। বাগান বক্সে তখন পালা করে ঢুকবেন র‌্যান্টি, বার্তোস, জোয়াকিম, লোবোরা। ক্রস যাবে ক্রমাগত। দুই সাইড ব্যাকের কেউ ওভারল্যাপে গেলে, সেই জায়গা নেমে এসে কভার করবেন খাবরা। আর বিপক্ষের কর্নারের সময় ফার্স্ট পোস্ট নেওয়ার ভান করে এগিয়ে গিয়েও পিছিয়ে এসে সেকেন্ড পোস্টে আসল পজিশন নেবেন খাবরা আর অর্ণব মণ্ডল। উদ্দেশ্য, বল লাল-হলুদ রক্ষণ থেকে ক্লিয়ারের পর তীব্র প্রতি-আক্রমণ শুরু। যেটা করবেন খাবরা। এ দিন ম্যাচে সেটা একবার করতেই কালঘাম ছুটে গেল মোহনবাগানের।

তবে মাঠের বাইরে মগজাস্ত্র প্রয়োগ করে চিরশত্রুকে হারালেও লাল-হলুদ অধিনায়ক এ দিন সন্ধেয় তাঁর রাজারহাটের ফ্ল্যাটে কিন্তু ঢুকলেন ভয়ে-ভয়ে! স্ত্রী রমনিক মাঠে যেতে চেয়েছিলেন স্বামীর অধিনায়কত্বে ডার্বি জয় দেখবেন বলে। কিন্তু খাবরা স্ত্রীর জন্য ভিআইপি টিকিট জোগাড় করতে পারেননি। ‘নিরাপত্তার কারণে’ সাধারণ গ্যালারিতে স্ত্রীকে বসাতে চাননি। তাই স্বামীর উপর রেগে ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের ফার্স্ট লেডি। বললেন, “এক তো এ রকম একটা দিনে মাঠে যেতে পারলাম না। তার উপর ইস্টবেঙ্গল প্রথম গোল করার পর বাড়ির কারেন্ট-অফ হয়ে গেল। এত রাগ হচ্ছিল ওর উপর! কারেন্ট এল দ্বিতীয় গোলের সময়।”

স্ত্রীর ‘রাগ’ কমাতে ঘরে ঢুকেই রমনিক আর কন্যা শাহিনকে ভালবাসার চুম্বন দিয়েই লাল-হলুদ অধিনায়ক স্নান সেরে ছুটলেন সিটি সেন্টারে ভাপা ইলিশ সহযোগে ডিনার সারতে। যাওয়ার আগে বলে গেলেন, “অধিনায়ক হওয়ার দিন থেকেই প্রথম প্ল্যান ছিল মরসুমের প্রথম ডার্বি জিতব। প্রচুর ঝড় গিয়েছে। কিন্তু তার পরেও প্ল্যানটা আজ সাকসেসফুল। কাল থেকে লিগের ট্রফিটা আমাদের তাঁবুতে আনার প্ল্যান শুরু করে দেব কোচ, টেকনিক্যাল ম্যানেজার আর টিমের সঙ্গে।”

হরমনজ্যোৎ খাবরা যেন একটা যুদ্ধ শেষ হতে না হতে আর একটা শুরু করে দিলেন!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE