ছবি: সংগৃহীত।
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভিতরেই ছোটখাটো জঙ্গল। তার ঠিক সামনে ঝা চকচকে অতিথি নিবাস।
বৃহস্পতিবার থেকে দল নিয়ে সেখানেই আস্তানা গেড়েছেন ইস্টবেঙ্গল কোচ খালিদ জামিল। শুধু তাই নয়। কল্যাণীতে পা দিয়েই অলিখিত ভাবে ১৪৪ ধারা জারি করেছেন। কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে মিনি ডার্বির আগে লাল-হলুদ শিবিরে যেন যুদ্ধের আবহ!
রেলওয়ে এফসি-র বিরুদ্ধে আগের ম্যাচে দিপান্দা ডিকা হ্যাটট্রিক-সহ চার গোল করেছেন। মহমেডান স্ট্রাইকারের এই বিধ্বংসী ফর্মই ইস্টবেঙ্গল কোচের উদ্বেগের প্রধান কারণ। শুক্রবার সকালে কল্যাণী স্টেডিয়ামের মাঠে ঘণ্টাখানেকের অনুশীলনে অধিকাংশ সময় খালিদ ব্যয় করলেন ডিকা-কে আটকানোর মহড়ায়।
বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সের সামনে মহমেডান স্ট্রাইকার ভয়ঙ্কর। গোল করা ছাড়াও ঘনঘন জায়গা পরিবর্তন করে ডিফেন্ডারদের সমস্যায় ফেলেন। শনিবার মহমেডান স্ট্রাইকারকে ন্যূনতম সুযোগ দিতেও রাজি নন খালিদ। এ দিন অনুশীলনে কখনও মহম্মদ আল আমনা, কখনও আবার উইলিস প্লাজাকে ব্যবহার করলেন ডিকার ভূমিকায়। আর তাঁদের আটকানোর দায়িত্ব কখনও দিলেন অর্ণব মণ্ডল ও কার্লাইল ডি’অন মিচেলকে। কখনও আবার মহম্মদ রফিক-কে। বিকেলে মহমেডান ম্যাচের ভিডিও রেকর্ডিং দেখিয়ে ক্লাসও নিলেন। খালিদ বলছেন, ‘‘এই মুহূর্তে ডিকা যে রকম ফর্মে আছে, তা চিন্তিত হওয়ার মতোই।’’
আরও পড়ুন: বার্সেলোনাতেই থাকছেন মেসি, দাবি ক্লাব প্রধানের
অর্ণব-মিচেল যে শনিবার প্রথম দলে ফিরছেন, তা অনুশীলনেই স্পষ্ট। পাশাপাশি, আরও কয়েকটা পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দিয়েছেন আই লিগজয়ী কোচ।
প্লাজার পারফরম্যান্সে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা হতাশ। কিন্তু মহমেডানের বিরুদ্ধে ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগো জাতীয় দলের স্ট্রাইকারের উপরেই আস্থা রাখছেন খালিদ। তিনি বললেন, ‘‘প্লাজার যোগ্যতা নিয়ে আমার কোনও সন্দেহ নেই। মনে হয় না ও হতাশ করবে।’’
কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ
ইস্টবেঙ্গল বনাম মহমেডান (কল্যাণী, দুপুর ২.৩০)।
ইস্টবেঙ্গলে অভিষেক ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করে চমকে দিয়েছিলেন ভি পি সুহের। কিন্তু চোটের জন্য মহমেডানের বিরুদ্ধেও তাঁর খেলার সম্ভাবনা নেই। প্লাজার সঙ্গে শুরু করতে পারেন জবি জাস্টিন। আর লড়াকু মানসিকতার জন্য প্রথম একাদশে ফেরার সম্ভাবনা উজ্জ্বল মিডফিল্ডার মহম্মদ রফিকের।
শুধু ডিকা-কে আটকালেই তো হবে না। মোহনবাগানের চেয়ে এগিয়ে থাকতে হলে শনিবার জিততেই হবে ইস্টবেঙ্গলকে। এই মুহূর্তে সাত ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট মোহনবাগানের। এক ম্যাচ কম খেলে লাল-হলুদের পয়েন্ট ১৮। কিন্তু লক্ষ্যে পৌঁছনোর ক্ষেত্রে একা ডিকা নন, ওগবা কালু-ও কাঁটা মশালবাহিনীর।
মহমেডান মিডফিল্ডার দুই স্টপারের সামনে দাঁড়িয়ে বিপক্ষের আক্রমণ থামান। ইউসুফ ইয়াকুবু, হোসে রামিরেজ ব্যারেটো, র্যান্টি মার্টিন্সের মতো স্ট্রাইকাররা বারবার হোঁচট খেয়েছেন কালুর কাছে। মহমেডান কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টচার্য যে শনিবার তাঁকে ব্যবহার করবেন আমনা-কে আটকাতে, তা খালিদ খুব ভালই জানেন।
তা হলে? মহমেডানের রক্ষণ ভাঙতে অভিনব অনুশীলন করালেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। রক্ষণের চার ফুটবলার একে অপরের হাত ধরে মানবপ্রাচীর তৈরি করেছেন। প্রাচীরের দুই প্রান্তে দুই ফরোয়ার্ড। তাঁদের পরীক্ষা হচ্ছে, চার ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে নিজেদের মধ্যে পাস খেলা। অর্থাৎ, শনিবার কালুর নেতৃত্বে মহমেডান ফুটবলাররা চক্রব্যূহ তৈরি করলেও তা ভেঙে গোল করতে যেন আমনা, প্লাজা-দের সমস্যা না হয়। চিন্তিত খালিদ বলছিলেন, ‘‘মহমেডান শক্তিশালী দল। ওদের ভারসাম্যও দুর্দান্ত। তাই সব সময় আমাদের সতর্ক হয়ে খেলতে হবে। সামান্য ভুলও বিপদ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।’’ মহমেডানকে হারলেই তো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যাবে। সেটাই কি উৎকণ্ঠার কারণ? খালিদ বলে দিলেন, ‘‘চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নিয়ে ভাবছি না। এই মুহূর্তে প্রধান লক্ষ্য মহমেডানকে হারানো।’’ কোচের সুরই শোনা গেল ফুটবলারদের গলায়। গত মরসুমে আইজল এফসি-র আই লিগ জয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন ব্রেন্ডন ভানলালরেমডিকা। বছর তেইশের লাল-হলুদ মিডফিল্ডার বললেন, ‘‘আমরা ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে চাই। আগে মহমেডানকে হারাই, তার পর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা ভাবব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy