নায়ক: গোলের পরে বিদ্যাসাগরের উল্লাস। বুধবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ইস্টবেঙ্গল ২ • বেঙ্গালুরু ১
রেফারির শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে বেঙ্গালুরু এফসি ‘বি’ দলের কোচ নৌশাদ মুসার সঙ্গে হাত মিলিয়েই টানেল দিয়ে নেমে গেলেন আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস গার্সিয়া। শতবর্ষে ডুরান্ড কাপে জয়ের হ্যাটট্রিক করে সেমিফাইনালে ওঠার আনন্দে ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারেরা গ্যালারির সামনে গিয়ে সমর্থকদের অভিবাদন গ্রহণ করছেন। কিন্তু কোচ আশ্চর্যজনক ভাবে নির্লিপ্ত। ৭৪ মিনিট পর্যন্ত পিছিয়ে থাকার উদ্বেগের ছাপ তখনও স্পষ্ট চোখে-মুখে।
বুধবার সন্ধ্যায় যুবভারতীতে ১৮ মিনিটেই লাল-হলুদ শিবিরে অন্ধকার নামিয়ে দেন বেঙ্গালুরুর অজয় ছেত্রী। বোরখা গোমেস পেরেস দলে ফেরা সত্ত্বেও ফের রক্ষণের ভুলে পিছিয়ে পড়ে ইস্টেবেঙ্গল। রিয়াল মাদ্রিদ ‘বি’ দলের প্রাক্তন কোচ আলেসান্দ্রোর দর্শন, গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়লেও হাল ছেড়ে দেওয়া চলবে না। ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে মরিয়া হয়ে ঝাঁপাতে হবে। বুধবারের যুবভারতীতে প্রথমার্ধে এই মরিয়া ভাবটাই হারিয়ে গিয়েছিল খাইমে সান্তোস কোলাদো, বইথাং হাওকিপদের খেলায়। এর জন্য যাবতীয় কৃতিত্ব এডমুন্ড লালরিনডিকা, পরাগ শ্রীবাসদের। ডুরান্ড সেমিফাইনালে উঠতে হলে এ দিন জিততেই হত বেঙ্গালুরুকে। আর তাই ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারেরা বল ধরলেই হা...রে...রে...রে করে ঝাঁপিয়ে পড়ে বল কেড়ে নিয়েছেন তাঁরা। ঠিক সুনীল ছেত্রী, উদান্ত সিংহ, হরমনজ্যোৎ সিংহ খাবরাদের হার না মানা মানসিকতার প্রতিফলন।
হবে না-ই বা কেন। বেঙ্গালুরুর সিনিয়র দলের ফুটবলারদের সঙ্গে একই আবাসনে রাখা হয় পরাগদের। কোচ কার্লেস কুদ্রাত সুনীলদের সঙ্গে অনুশীলনেও ডেকে নেন ‘বি’ দলের ফুটবলারদেরও। সিনিয়র দলের মতোই একই ঘরানার ফুটবল খেলেন অজয়েরা। এ দিন সেই রণকৌশলকে অস্ত্র করেই ইস্টবেঙ্গলের জয়ের পথে প্রায় কাঁটা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বেঙ্গালুরু ফুটবলারেরা। কিন্তু বিদ্যাসাগর সিংহের দাপটে ডুরান্ড কাপের শেষ চারে ওঠার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল আদিত্য পাত্রদের।
বেঙ্গালুরুর প্রাক্তন ফুটবলার বইথাং হাওকিপকে দ্বিতীয়ার্ধে আর মাঠে রাখার ঝুঁকি নেননি আলেসান্দ্রো। তাঁর পরিবর্তে নামান বিদ্যাসাগরকে। তিনি নামতেই ধীরে ধীরে ছবিটা বদলাতে শুরু করে। বেঙ্গালুরুর চক্রব্যূহ থেকে বেরিয়ে এলেন কোলাদো ও ব্রেন্ডন ভানলালরেমডিকা। ৫৯ মিনিটে ব্রেন্ডনের সঙ্গে যুগলবন্দিতেই গোল করে দলকে ম্যাচে ফেরালেন বিদ্যাসাগর। ৭৪ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের সময় বোঝালেন, কেন তাঁর নাম টর্পেডো দিয়েছেন অ্যাকাডেমির কোচ রঞ্জন চৌধুরী। প্রায় মাঝমাঠ থেকে বল ধরে ঝড়ের গতিতে বেঙ্গালুরু রক্ষণকে চূর্ণ করে বল জালে জড়িয়ে দেন লাল-হলুদের নতুন তারা।
মাঠের বাইরে অবশ্য বিদ্যাসাগর অদ্ভুত ভাবে নিজেকে গুটিয়ে রাখেন। তিন ম্যাচে পাঁচ গোল করা নায়ক সাংবাদিক বৈঠকে মৃদু স্বরে বললেন, ‘‘কোচের জন্যই আমার এই সাফল্য। আমার কাজ ছিল গোল করে দলকে সেমিফাইনালে তোলা। সেটা করতে পেরে ভাল লাগছে। কোচ ও সতীর্থদের গোল উৎসর্গ করছি।’’
বিদ্যাসাগরের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন আলেসান্দ্রোও। বললেন, ‘‘বিদ্যাই ম্যাচের রং বদলে দিয়েছে। ওর গতি দুর্ধর্ষ।’’ রক্ষণের ব্যর্থতাই যে ১৮ মিনিটে ইস্টবেঙ্গলকে পিছিয়ে দিয়েছিল, তা মানতে চাইলেন না স্প্যানিশ কোচ। সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ সম্ভবত শক্তিশালী গোকুলম এফসি। আলেসান্দ্রো বলে দিলেন, ‘‘ডিফেন্ডারেরা খুব ভাল খেলেছে। ওরা একটা সুযোগ পেয়েছে, তা থেকেই গোল করেছে।’’
ইস্টবেঙ্গল: লালথাউমাওয়াইয়া, কমলপ্রীত সিংহ (সামাদ আলি মল্লিক), বোরখা গোমেস পেরেস, অভিষেক আম্বেকর, আশির আখতার, পিন্টু মাহাতো, কাশিম আইদারা, লালরিনডিকা রালতে (তোনদোম্বো সিংহ), ব্রেন্ডন ভানলালরেমডিকা, খাইমে সান্তোস কোলাদো ও বইথাং হাউকিপ (বিদ্যাসাগর সিংহ)।
বেঙ্গালুরু: আদিত্য পাত্র, নামগিয়াল ভুটিয়া, সাইরুয়াতকিমা (রাকেশ মিতেই), গুরসিমরাত সিংহ গিল, পরাগ শ্রীবাস, এডমুন্ড লালরিনডিকা (অদ্বিত সিন্ধে), বিশ্ব দোরজি (আকাশদীপ সিংহ), অজয় ছেত্রী, সুরেশ সিংহ, লিয়ন অগাস্টিন ও রোশন সিংহ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy