সেরা: জাতীয় শুটিংয়ে সোনা জয়ের পরে মেহুলি ঘোষ এবং দশ বছরের অভিনব। তিরুঅনন্তপুরমে। নিজস্ব চিত্র
যে বছর অলিম্পিক্সে ইতিহাস তৈরি করেছিল ভারত, সে বছরই বাচ্চাটার জন্ম। ২০০৮ সালে। ওই বছরেই বেজিং অলিম্পিক্সে ভারতের হয়ে প্রথম ব্যক্তিগত ইভেন্টে সোনা জিতেছিলেন শুটার অভিনব বিন্দ্রা। তাই বাবা-মা ছেলের নাম রেখেছিলেন অভিনব।
দশ বছরের এই অভিনব সাউ-ই অভিনব কীর্তি গড়ে ফেলল জাতীয় শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপে। রেকর্ড করে আর জোড়া সোনা জিতে। সব চেয়ে কম বয়সে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে সোনা জিতে ফেলল সে। মঙ্গলবার তিরুঅনন্তপুরমে মেহুলি ঘোষের সঙ্গে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের মিক্সড টিম ইভেন্টে নেমে জুনিয়র এবং যুব পর্যায়ে সোনা জিতল আসানসোলের অভিনব। দশ বছর বয়সে জাতীয় পর্যায়ের শুটিংয়ে সোনা জেতার কৃতিত্ব এর আগে ভারতে কেউই দেখাতে পারেনি।
বাবা রূপেশ সাউ নিজে চেয়েছিলেন খেলাধুলোয় আসতে। কিন্তু আর্থিক সচ্ছলতা সে ভাবে না থাকায় তাঁর স্বপ্ন পূরণ হয়নি। ছেলে জন্মানোর পরে ঠিক করে ফেলেন, শুটিংয়েই ঠেলে দেবেন। বাড়ির কাছাকাছিই আসানসোল শুটিং ক্লাব। সেখানেই প্রথমে নিয়ে গিয়েছিলেন ছেলে অভিনবকে। কিন্তু আট বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত বাচ্চাদের রাইফেল চালানোর অনুমতি নেই বলে তখনই ভর্তি করানো যায়নি ক্লাবে। ‘‘তখন আমি ঠিক করি, ছেলেকে তা হলে অন্য কোনও খেলার সঙ্গে সাময়িক ভাবে যুক্ত করব,’’ তিরুঅনন্তপুরম থেকে ফোনে বলছিলেন রূপেশ। কী করেছিলেন তখন? রূপেশ বলেন, ‘‘আমি ছেলেকে ক্যারাটে আর সাঁতারে ভর্তি করে দিই।’’ খুদে অভিনব সেখানেও নিজের ছাপ রেখে এসেছে। জাতীয় ক্যারাটেতে দু’বার সোনা জিতে।
আসানসোলে শুটিংয়ে হাতেখড়ি হওয়ার পরে অলিম্পিয়ান জয়দীপ কর্মকারের চোখে পড়ে যায় অভিনব। কলকাতায় এলে জয়দীপের অ্যাকাডেমিতেই প্রশিক্ষণ চলে তার। আবার জয়দীপরাও আসানসোলে গেলে ট্রেনিং চলে সেখানে। ছাত্রের সাফল্য দেখে উঠে আপ্লুত জয়দীপ ফোনে বলছিলেন, ‘‘প্রথমে যখন অভিনবকে দেখি, ওর চেয়েও রাইফেলটা সম্ভবত বড় ছিল। ৪ কেজির রাইফেলটা ভাল করে ধরতে পারছিল না। কিন্তু ওই অবস্থায় দারুণ শুট করছিল। তখনই কিন্তু বোঝা গিয়েছিল, এই ছেলেটা সত্যিই প্রতিভাবান।’’ সে সম্পর্কে অবশ্য সন্দেহ থাকারই কথা নয় আর। জেলাস্তরে সাফল্য আসার পরে কয়েক মাস আগে রাজ্য চ্যাম্পিয়নশিপে সব চেয়ে কমবয়সি শুটার হিসেবে সিনিয়র পর্যায়ে সোনা। আর এ বার তো একেবারে জাতীয় পর্যায়ে। যা নিয়ে জয়দীপের মন্তব্য, ‘‘যুব ফাইনালে তো মাঝে মাঝে মেহুলির চেয়েও ভাল শুট করল অভিনব। এখানে ওকে নিয়ে রীতিমতো হইচই পড়ে গিয়েছে।’’
এত কম বয়স থেকেই হাতে রাইফেল আর সামনে ‘টার্গেট’ ছাড়া আর কিছু নেই। অন্য কিছু করতে ভাল লাগে না? আর পাঁচটা সাধারণ বাচ্চার মতো? বাবার ফোনে সোনাজয়ী অভিনবের চটজলদি জবাব, ‘‘হ্যাঁ, কেন লাগবে না। আমি কার্টুন দেখতে ভালবাসি। আর ডব্লিউ় ডব্লিউ ই তো দারুণ পছন্দের।’’ পাশাপাশি ভাল লাগে ফুটবলও। প্রিয় ফুটবলার কে? রিনরিনে গলায় জবাব এল, ‘‘রোনাল্ডো।’’ তোমার নাম তো একজন বিখ্যাত শুটারের নামে? তাকে কি ‘আইডল’ হিসেবে দ্যাখো? দশ বছরের এই বাচ্চা অত কিছু বোঝে না। তার শুধু একটাই লক্ষ্য, সামনের টার্গেটে গুলিটা লাগিয়ে পুরো পয়েন্ট তোলা।
রাইফেল হাতে তোলার পরে অভিনবের সাফল্যের রেখচিত্র উপরে উঠতে থাকলেও তাঁর বাবার লড়াইটা এখনও সহজ হয়নি। যে অলিম্পিক্স পর্যায়ের রাইফেলটা অভিনব ব্যবহার করে, তার দাম চার লাখ। পোশাকের দাম ৬০ হাজার, জুতো ৩৩ হাজার। প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকার গুলি লাগে অনুশীলনের জন্য। রূপেশ বলছিলেন, ‘‘আসানসোলের অনেক রাজনৈতিক নেতা, স্পনসরের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। কিন্তু কিছু লাভ হয়নি। আমাকে ঋণ নিয়ে সব খরচ করতে হয়েছে। প্রায় লাখ ছয়েক টাকার ধাক্কা।’’
লড়াইয়ের ব্যাটনটা এখন বাবার হাত থেকে ছেলের হাতে। অভিনব শুধু জানে, লড়াইটা জেতা যাবে ‘বুলস আই’-তে একের পর এক গুলি লাগাতে পারলেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy