অভিযুক্ত তিন। গগন-অয়নিকা-জিতু।
রেয়াত করা হয়নি কাউকেই। শ্যুটার, শ্যুটিং কোচ, জাতীয় শ্যুটিং ফেডারেশন— কাউকে না। রিও অলিম্পিক্সে শ্যুটারদের ব্যর্থতার পর অভিনব বিন্দ্রার নেতৃত্বে তৈরি হওয়া রিভিউ কমিটির কড়া রিপোর্টে। যা জমা পড়েছে জাতীয় শ্যুটিং ফেডারেশনে।
খোদ বিন্দ্রাই তাঁর প্রাক্তন সতীর্থদের ছেড়ে কথা বলেননি রিপোর্টে। যিনি নিজেও রিওতে পদক জেতার ল়ড়াইয়ে নেমেছিলেন। কিন্তু কেন এমন বলছে বিন্দ্রার কমিটি?
বলা হচ্ছে, গগন নারঙ্গ, হিনা সিধুর মতো সিনিয়রদের থেকে শুরু করে অয়নিকা পালের মতো তরুণ প্রতিভারও রিও-তে ব্যর্থতার দায় কম নয়। অয়নিকা যেমন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ক্রীড়ামন্ত্রকের থেকে বেশি অর্থ আদায়ের জন্য অয়নিকা ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। ‘‘অয়নিকার দু’জন কোচ। টমাস ফার্নিক আর সুমা শিরুর। কমিটির এটা মনে হয়েছে অ্যাথলিটদের, বিশেষ করে যাঁদের বয়স কম, তাঁদের ট্রেনিংয়ের পথ বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার খারাপ দিকটাও অয়নিকার অলিম্পিক্সের পারফরম্যান্সে বোঝা গিয়েছে। এটা পরিষ্কার যে দায়িত্বটা কাঁধে নেওয়ার মতো ক্ষমতা বা মানসিক প্রস্তুতি কোনওটাই ছিল না,’’ রিপোর্টে বলেছেন বিন্দ্রারা।
কী ভাবে বিভ্রান্ত করেছেন অয়নিকা? বলা হয়েছে, ‘‘টমাস ফার্নিককে কোচ আর সুমা শিরুরকে মেন্টর হিসেবে দেখানো হয়েছে আর্থিক সুবিধা পাওয়ার জন্য। কমিটির কাছে যে রেকর্ড আর কাগজপত্র আছে তাতে এটা প্রমাণ হয় যে সুমা ফুল টাইম কোচ অয়নিকার। অলিম্পিক্সের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় একটা সার্বিক সততা থাকা দরকার।’’
রিওতে ভারতের পদক জয়ের সবচেয়ে বড় আশা হিসেবে যাঁকে ধরা হয়েছিল সেই জিতু রাই কেন মুখ থুবড়ে পড়লেন? কমিটি বলেছে, জিতু রাইকে অলিম্পিক্সে পদক জিততে সাহায্য করার মতো বিদেশি কোচ পাভেল স্মিরনভের (পিস্তলে ভারতের প্রধান কোচ) দক্ষতা ছিল না। ‘‘জিতুর অসাধারণ প্রতিভা দেখে ধরেই নেওয়া হয়েছিল ও পদক জিতবে। কিন্তু যে কোনও পর্যায়ে প্রতিভা থাকাই পদক জেতার জন্য যথেষ্ট নয়, যদি তার সঙ্গে অলিম্পিক্সের জন্য সঠিক প্রস্তুতি না থাকে,’’ রিপোর্টে বলেছে কমিটি।
আর গগন নারঙ্গ? লন্ডন অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জজয়ী শ্যুটার কেন পারলেন না এ বার পদক জিততে? বিন্দ্রার কমিটি বলছে, ‘‘কোচ স্ট্যানিসলাস লাপিডাস পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর ট্রেনিং শিডিউল নারঙ্গ মেনে চলছেন না। জাতীয় শ্যুটিং সংস্থাকেও তা জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফিটনেসের ব্যাপারটাও অবহেলা করা হয়েছিল। অলিম্পিক্সে নারঙ্গ যে গোড়ালির চোট নিয়ে খেলছেন সে ব্যাপারেও অন্ধকারে রাখা হয়েছিল এনআরএআইকে।’’
চার সদস্যের কমিটিতে বিন্দ্রা ছাড়াও ছিলেন প্রাক্তন এশিয়ান গেমসে পদকজয়ী টেনিস তারকা মনীষা মলহোত্র। ৩৬ পাতার রিপোর্টে বলা হয়েছে, যা অবস্থা তাতে এটা বলাই যায় রিও অলিম্পিক্সে ভারতীয় শ্যুটিংয়ের যা পাওয়ার কথা ছিল তার চেয়ে ‘বেশি পেয়েছে’। গত কয়েক বছরে পারফরম্যান্সের চেয়ে বেশি ভরসা করা হয়েছে ভাগ্যের উপর।
রিওয় বারো জন ভারতীয় শ্যুটার কোয়ালিফাই করেছিলেন। অলিম্পিক্সের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় ভারতীয় শ্যুটিং দল। তাই মনে করা হয়েছিল পদক যুদ্ধে মারকাটারি ফল করবেন শ্যুটাররা। কিন্তু তার ধারেকাছেও যেতে পারেননি গগন নারঙ্গরা। পদক পাওয়া তো দূরের কথা, রিওয় সবচেয়ে ভাল ফল ছিল বিন্দ্রার চতুর্থ স্থান পাওয়া।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে ‘‘কমিটির সদস্যরা এ ব্যাপারে এক মত যে ভারতীয় শ্যুটিংয়ে বদল দরকার। শ্যুটিং নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি, নীতি, তার ব্যবহার সব বদলাতে হবে। যাতে ক্রমশ উঠে আসা প্রতিভাবান শ্যুটাররা সুস্থ একটা পরিবেশে আরও ফুটে উঠতে পারেন। আর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ বা অলিম্পিক্সে পদক জিততে পারেন।’’ সঙ্গে আরও যোগ করা হয়, ‘‘ভারতীয় খেলাধুলোয় এই যে ‘চলতা হ্যায়’ মানসিকতা সেটা বন্ধ হওয়া দরকার। জাতীয় শ্যুটিং সংস্থাকেও অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে ফেলে ছিপছিপে ফাইটিং মেশিন হয়ে উঠতে হবে। যাতে এমন একটা পদ্ধতি চালু করা যায় যেখান থেকে চ্যাম্পিয়নরা উঠে আসতে পারে। এখন যেটা দেখা যাচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy