জিকো
দিয়েগো মারাদোনা নিয়ে বিশ্বব্যাপী শোকপালনের মধ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করলেন জিকো। প্রয়াত আর্জেন্টিনীয় কিংবদন্তিকে নিয়ে ব্রাজিলীয় কিংবদন্তি বলছেন, মারাদোনা না কি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগেও হাত দিয়ে গোল করেছেন।
ইটালির এক সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জিকো ফাঁস করেছেন, মারাদোনার প্রথম ‘হ্যান্ড অব গড’ গোল ছিল ইটালীয় লিগে। ১৯৮৬-তে মেক্সিকো বিশ্বকাপের সেই ইংল্যান্ড ম্যাচের দু’বছর আগে নাপোলির হয়ে উদিনিসের বিরুদ্ধে সেই গোল করেছিলেন তিনি। জিকো বলছেন, ‘‘সালটা ১৯৮৩। আমি সবে উদিনিসে এসেছি। আমরা ২-১ এগিয়ে ছিলাম কিন্তু দিয়েগো গোল শোধ করে দেয়। আর গোলটা করেছিল হাত দিয়ে।’’ যোগ করেন, ‘‘আমি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠি। রেফারিকে গিয়ে বলি, অভিনন্দন। এ ভাবেই চালিয়ে যান।’’ রেফারির সঙ্গে এমন আচরণের জন্য জিকোকে লাল কার্ড দেখতে হয়। চার ম্যাচের জন্য নির্বাসিতও হন। জিকো বলছেন, ‘‘আমি প্রায়ই দিয়েগোকে মজা করে বলতাম, তুমি হ্যান্ড অব গড গোলের ট্রেনিংটা ইটালীয় লিগে আমাদের সঙ্গে করে নিয়েছিলে।’’ হাত দিয়ে গোল করার পুরনো সেই ঘটনার কথা ফাঁস করার পাশাপাশি মারাদোনাকে সর্বকালের সেরাদের আসনে বসাচ্ছেন জিকো। তাঁর কথায়, ‘‘মারাদোনা আমার দেখা সর্বকালের সেরা পাঁচ ফুটবলারের মধ্যে থাকবে। আমার দেখা সেরা পাঁচ হল— গ্যারিঞ্চা, পেলে, দিয়েগো, ক্রুয়েফ এবং বেকেনবাউয়ার।’’
এ দিকে, মারাদোনার মৃত্যু নিয়ে আর্জেন্টিনায় শুরু হয়েছে বিচারবিভাগীয় তদন্ত। নজরে রয়েছেন প্রয়াত কিংবদন্তির ব্যক্তিগত চিকিৎসক লিয়োপোল্দো লুকে। পুলিশের জেরার মুখে লুকে জানিয়েছেন, তাঁর পরম বন্ধু মারাদোনা সংক্রান্ত কোনও তথ্য গোপন করার মতো প্রবৃত্তি তাঁর নেই। এবং প্রয়াত দিয়েগোকে সুস্থ রাখার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। তাঁর বাড়ি এবং ক্লিনিকে তল্লাশি চালায় পুলিশ। আর্জেন্টিনার এক সংবাদপত্র দাবি করেছে, লুকের আর্থিক লেনদেনের হিসাবপত্তরও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের পরে লুকে বলেছেন, “আমরা সকলেই দিয়েগোর ভাল চেয়েছি। চিকিৎসক, আমি, ওর পরিবার, সকলেরই লক্ষ্য ছিল দিয়েগোকে সুস্থ করে তোলা। ও নিজে যে ওষুধ খেত, তার সঙ্গে মদ্যপানকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলাম।” মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের পরে মারাদোনাকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তা নিয়ে লুকের বক্তব্য, “ওকে হাসপাতালে রেখে দিতেই হবে, এমন কোনও নির্দেশ ছিল না। আমরা ওকে কোনও রিহ্যাব সেন্টারেও হয়তো নিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু মনে হয়েছিল, ও ভাল আছে। আর বাড়িতে ফেরার সিদ্ধান্তটা ছিল মারাদোনারই।” ব্যক্তিগত চিকিৎসক যোগ করেছেন, “দিয়েগোর হৃদযন্ত্র সংক্রান্ত সমস্যা ছিল, সেটাকে নিয়ন্ত্রণে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছিল। আমরা কিন্তু ওকে কোনও রিহ্যাব সেন্টারে রাখিনি, রেখেছিলাম ক্লিনিকে। জেরার সময়েও আমি একটা কথা বলেছি, দিয়েগোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। লুকনোর কিছু নেই আমার।”
মারাদোনার মৃত্যু নিয়ে আচমকা এই তদন্তের পাশাপাশি ফুটবল বিশ্বে শোকপালন এখনও চলছে। রবিবার আর্জেন্টাইন লিগ কাপে (যে ট্রফির নাম পাল্টে রাখা হয়েছে কোপা দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা) মুখোমুখি হয়েছিল বোকা জুনিয়র্স এবং নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজ দল। দুটি ক্লাবের হয়েই অতীতে খেলেছেন মারাদোনা। বোম্বোনেরা স্টেডিয়ামের বিশেষ বক্সে সেই ম্যাচ দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় মারাদোনার মেয়ে দালমাকে। দুই দলের ফুটবলাররাই মারাদোনা লেখা জার্সি পরে খেলতে নামেন। এমনকি রেফারির শার্টের পিছনেও লেখা ছিল ‘ধন্যবাদ দিয়েগো।’ ম্যাচে ২-০ গোলে জিতেছে বোকা জুনিয়র্স। প্রথম গোলের পরেই ফুটবলাররা বিশেষ বক্সের দিকে ছুটে গিয়ে দালমার দিকে তাকিয়ে করতালি দিয়ে তাঁকে অভিবাদন জানান। আবেগে দালমা হাউহাউ করে কেঁদে ফেলেন। সেই ভিডিয়োও নিমেষে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। রবিবার লা লিগায় গোল করে লিয়োনেল মেসিও অভিনব শ্রদ্ধা জানান তাঁর প্রাক্তন গুরুকে। নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজ দলের ১০ নম্বর জার্সি পরে তিনি আকাশের দিকে দুহাত তুলে সম্মান জানান মারাদোনাকে। সেরি আ-তেও দেখা গিয়েছে এক ছবি। রবিবার মারাদোনোর পুরনো ক্লাব নাপোলি ৪-০ গোলে হারায় এ এস রোমাকে। ম্যাচের আগে গ্যালারির একপাশে রাখা মারাদোনার বিশাল ছবির সামনে গিয়ে পুষ্পস্তবক দিয়ে আসেন অধিনায়ক লোরেঞ্জো ইনসিনিয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy