অভিনন্দন: সেঞ্চুরির পরে আউট হয়ে ফিরছেন অভিষেক। পিঠ চাপড়ে দিচ্ছেন ঋদ্ধিমান সাহা। বুধবার ইডেনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
দিল্লির ক্ষতি, বাংলার লাভ!
ভাগ্যিস সে দিন দিল্লির এক পাড়ার টুর্নামেন্ট থেকে ১২ বছরের ছেলেটিকে নিজের ক্রিকেটার তৈরির কারখানায় তুলে এনেছিলেন বনগাঁর নির্মাল্য সেনগুপ্ত। না হলে বুধবার অভিষেক রামনের ১৭৬ রানের ইনিংসটাই বোধহয় দেখা হত না ইডেনের। ফিরোজ শাহ কোটলার হোম টিমের ড্রেসিংরুমে বসে তাঁর সতীর্থরা হয়তো দেখতেন।
নির্মাল্য সেনগুপ্ত, যিনি ‘অপুদা’ নামেই বিখ্যাত বনগাঁয়, তাঁর ক্রিকেট অ্যাকাডেমি বাংলাকে আগেই দিয়েছে অভিমন্যু ঈশ্বরনের মতো ওপেনার। এ বার এই অভিষেক রামন। বাংলার ওপেনার সমস্যার সমাধান যে কলকাতা থেকে আশি কিলোমিটার দূরে রয়েছে, তা জানাই যেত না, যদি না অভিষেক, অভিমন্যুরা কামাল দেখাতেন।
বারো বছর আগে দিল্লির পিতমপুরা থেকে যাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন তাকে বড় ক্রিকেটার গড়ে তোলার স্বপ্ন চোখে নিয়ে, যাকে সন্তানস্নেহে বড় করেও তোলেন তাঁর স্ত্রী, সেই অভিষেকের ডাবল সেঞ্চুরি হাতছাড়া হওয়া দেখে বুধবার বেশ ভেঙে পড়েন ইডেন ক্লাব হাউসে থাকা সেই ‘অপুদা’। বিকেলে ক্লাব হাউসের সামনে দাঁড়িয়ে আফসোস করছিলেন, ‘‘ইশ, ওই শটটা না খেললেই ভাল করত অভিষেক। এত দূর এসেও ডাবল সেঞ্চুরিটা হল না!’’
গুরুর মতো ছাত্রের অবশ্য দু’শো হাতছাড়া হওয়ার আফসোস নেই। মানসিকতায় তিনি যে বেশ কঠিন। ভিভিএস লক্ষ্মণের পজিটিভ থাকার মন্ত্র যে মাথায় গেঁথে নিয়েছেন, তা বুঝিয়ে দিয়ে ২৪ বছর বয়সি ওপেনার বলে দিলেন, ‘‘দুশো হাতছাড়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ইডেনের বুকে যে একটা ভাল ইনিংস খেলতে পেরেছি, জীবনের প্রথম ফার্স্ট ক্লাস সেঞ্চুরিটা ঘরের মাঠেই করতে পেরেছি, এটাই আমার কাছে বড় ব্যাপার।’’
জীবনের পাঁচ নম্বর প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। অভিজ্ঞতার ঝুলি তেমন বড় নয়। তবে অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারির জোগানো সাহসই যে এই স্মরণীয় ইনিংসের অন্যতম প্রধান উপাদান, তা নিজেই জানালেন অভিষেক। লাঞ্চের পরে তিনি যখন ৬৩ রানে, তখন ক্রিজে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন মনোজ। দু’জনে মিলে ১৬৩ রানের পার্টনারশিপ খেলার সময় প্রায়ই মনোজকে তরুণ তূর্কির দিকে এগিয়ে গিয়ে কথা বলতে দেখা যাচ্ছিল। দলনেতা কী ভাবে সাহায্য করেন তাঁকে, তা জিজ্ঞেস করায় সচিন তেন্ডুলকরের ভক্ত বলে দেন, ‘‘মনোজদা সমানে আমাকে বলে দিচ্ছিল, কী ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে ইনিংসটাকে। এর আগে ৯০-এর ঘরে আউট হয়েছি। তাই সেঞ্চুরির মুখে বারবার আমাকে ফোকাসটা ঠিক রাখতে বলছিল মনোজদা। ক্যাপ্টেন এত সাহায্য করল বলেই লম্বা ইনিংসটা খেলতে পারলাম।’’
মনোজও মু্গ্ধ তরুণ ওপেনারের এই পারফরম্যান্সে। সন্ধ্যায় বললেন, ‘‘খুব ভাল ভাল শট খেলেছে। ওকে ফোকাসড রাখার চেষ্টা করছিলাম সব সময়। যেমন বলে দিচ্ছিলাম, তেমনই খেলছিল। বিশেষ করে ওর ৯০-এর ঘরে আমিও একটু নার্ভাস হয়ে পড়ি। ও পারবে কি না একশো ছুঁতে, এই ভেবে।’’ কিন্তু অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে নতুন তারকা আউট হওয়ায় হতাশ অধিনায়ক। বলেন, ‘‘বাইরের বলগুলো নিখুঁত ভাবে ছাড়ছিল ও। কী করে যে ওই বলটা খেলতে গেল। আসলে ম্যাচিওরিটির অভাবেই এই ভুলটা করল ও। দু’-তিন বছর পরে বোধহয় আর এই ভুল হবে না ওর।’’
ইডেনে এ দিন খেলা দেখতে আসা প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার ও নির্বাচক প্রণব রায়ও বাংলার নতুন ওপেনার নিয়ে উচ্ছ্বসিত। তাঁর মন্তব্য, ‘‘ভাল শট আছে ছেলেটার ব্যাটে। মানসিক শক্তিও যথেষ্ট। তবে দেখলাম খুচরো রান বেশি নিল না। এটা আমাকে একটু অবাক করেছে। যদিও বাংলা যে একজন ভাল ওপেনার পেয়ে গিয়েছে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ঠিক ভাবে ওকে তৈরি করা হলে লম্বা রেসের ঘোড়া হয়ে উঠবে অভিষেক।’’
এই সাফল্যের দিনেও অবশ্য অভিষেক ভুললেন না ‘অপুদা’-র কথা বলতে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের ক্রিকেটার-পুত্র বললেন, ‘‘ওঁর জন্যই তো আজ আমার এই জায়গায় আসা। উনি যদি সে দিন আমাকে দিল্লি থেকে না নিয়ে আসতেন, তা হলে আমার এই জায়গায় আসা হত কি না, জানি না। এই সেঞ্চুরি দলের সবার সঙ্গে তাই অপুদাকেও উৎসর্গ করতে চাই।’’
শিষ্যের সাফল্যে এর চেয়ে বড় পুরস্কার আর কী-ই বা হতে পারে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy