সচিন তেন্ডুলকর।
ইডেনে দিনরাতের টেস্ট সফল হওয়া, না-হওয়া নির্ভর করবে শিশিরের উপর বলে মনে করছেন সচিন তেন্ডুলকর। হিরো কাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বল হাতে শেষ ওভারে জাদু দেখানো, জীবনের ১৯৯তম টেস্ট-সহ ইডেনে নানা রোমাঞ্চকর স্মৃতি রয়েছে সচিনের। সেখানেই এ বার লেখা হবে নতুন ইতিহাস। দেশের প্রথম দিনরাতের টেস্ট হবে ২২ নভেম্বর থেকে। সচিন তাঁর প্রাক্তন সতীর্থ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন। পাশাপাশি, বলে দিচ্ছেন, টেস্টকে সফল করতে গেলে শিশিরের মোকাবিলা করতে হবে।
সৌরভের দিনরাতের টেস্ট আয়োজনের উদ্যোগের প্রশংসা করে সচিন বলেছেন, ‘‘দর্শকদের দিক থেকে দেখতে গেলে নিশ্চয়ই এটা খুব ভাল উদ্যোগ। দিনের কাজ সেরেও মানুষ মাঠে এসে খেলা দেখতে পারবেন। মাঠে লোক ফেরানোর ব্যাপারে যা সাহায্য করতে পারে। সন্ধেবেলায় মাঠে এসেও খেলা দেখা যাবে।’’ ক্রিকেটারদের দিক থেকেও একটা নতুন অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে বলে উৎসাহিত হয়ে পড়ছেন সচিন। বলছেন, ‘‘এত দিন টেস্ট ম্যাচ লাল বলেই খেলছিল আমাদের ক্রিকেটারেরা। এ বার ওরাও বোঝার সুযোগ পাচ্ছে, গোলাপি বল লাল বলের চেয়ে কতটা অন্য রকম আচরণ করতে পারে।’’
দেশের প্রথম দিনরাতের টেস্ট ম্যাচ নিয়ে এক দিকে উত্তেজনা বাড়ছে। কৌতূহলী হয়ে পড়েছেন ক্রিকেট ভক্তরা। পাশাপাশি, বিশেষজ্ঞদের মতামত শুরু হয়ে গিয়েছে, গোলাপি বল এবং শিশির নিয়ে। যে-হেতু ২২ নভেম্বরে হচ্ছে টেস্ট, ভাল মতোই শিশির পড়ার সম্ভাবনা। এমনিতেই গোলাপি বলে তাড়াতাড়ি ময়লা জমতে থাকে বলে মত রয়েছে। যে কারণে বলটিকে দেখতে অসুবিধা হতে পারে। তার উপর শিশিরের জন্য যদি বল ভিজে যেতে থাকে, তা হলে আরওই সমস্যা তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে বোলারদের জন্য পরিস্থিতি সামলানো খুবই কঠিন হয়ে উঠতে পারে। সচিন মনে করছেন, ‘‘শিশিরের প্রভাব না থাকলেই দিনরাতের টেস্ট খুব সফল হবে। কিন্তু যদি শিশিরের প্রভাব যদি বেশি থাকে তা হলে বোলারদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। আর বোলার মানে পেসার, স্পিনার সকলেরই অসুবিধা হবে।’’ সংবাদসংস্থাকে তিনি আরও বলেছেন, ‘‘বল ভিজে গেলে পেসার বা স্পিনার কেউ খুব একটা কিছু করতে পারে না। তখন বোলারদের বড়সড় পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে। কিন্তু শিশিরের প্রভাবকে দূর করা গেলে, দিনরাতের টেস্ট দারুণ একটা উদ্যোগ হতে যাচ্ছে।’’
তাঁর খেলার দিনের অভিজ্ঞতা থেকে সচিন বলে দিতে পারছেন, বছরের এই সময়ে ইডেনে শিশির পড়ে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে অনেক দিনরাতের একদিনের ম্যাচই তিনি এখানে খেলে গিয়েছেন। নৈশালোকের ইডেনে শিশির যে বড় ভূমিকা নেয়, তা তিনি জানেন। বলে ফেলছেন, ‘‘আমার মনে হয়, শিশির খুব বড় ভূমিকা নিতে পারে ইডেনের দিনরাতের টেস্টে। দেখতে হবে, কতটা শিশির থাকতে পারে, কতটা প্রভাব ফেলতে পারে। কেউ চায় না, পরিবেশ খুব বেশি করে ম্যাচের গতিপ্রকৃতিকে
নিয়ন্ত্রণ করুক।’’
নিজের ক্রিকেটজীবনে কোনও ম্যাচের জন্য নিজেকে তৈরি করাটা তাঁর কাছে ছিল সাধনার মতো। শোয়েব আখতার থেকে শেন ওয়ার্ন, গ্লেন ম্যাকগ্রা— প্রস্তুতিতে নিমগ্ন থেকেই সাফল্য পেতেন তিনি। গোলাপি বলে সফল হতে গেলে ব্যাটসম্যানদের কী ভাবে তৈরি হওয়া উচিত? অভিনব ফর্মুলা বাতলে দিচ্ছেন সচিন, ‘‘নেটে নানা ধরনের বলে প্র্যাক্টিস করতে হবে ব্যাটসম্যানদের। নতুন গোলাপি বলে তো প্র্যাক্টিস করতেই হবে, সঙ্গে দরকার ২০ ওভারের পুরনো গোলাপি বলে খেলে নেওয়া, ৫০ ওভারের এবং ৮০ ওভারের পুরনো গোলাপি বলে খেলে নেওয়া। দেখে নিতে হবে, নতুন গোলাপি বল এবং আধা-পুরনো বা পুরনো গোলাপি বলের আচরণে কতটা তফাত হতে পারে। সেই মতো স্ট্র্যাটেজি ঠিক করতে হবে।’’
এখানেই শেষ নয়। বিরাট কোহালিদের জন্য সচিনের আরও পরামর্শ, ঘরোয়া ক্রিকেটে যাঁরা গোলাপি বলে খেলেছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া যেতে পারে। গত তিন বছর ধরে দলীপ ট্রফি হয়েছে দিনরাতে গোলাপি বলে। সেই সব ম্যাচে যাঁরা খেলেছেন, তাঁদের থেকে মূল্যবান সব পরামর্শ পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একমাত্র একশো সেঞ্চুরির মালিক। ‘‘দলীপ ট্রফিতে যারা খেলেছে, তাদের কাছে মূল্যবান পরামর্শ থাকবে,’’ বলছেন তিনি।
১৯৯১-’৯২ অস্ট্রেলিয়া সফরে অভিনব ঘটনার সাক্ষী তিনি। একদিনের ত্রিদেশীয় সিরিজ হয়েছিল টেস্টের মাঝে। ‘‘আমার মনে আছে, শুরু করেছিলাম লাল বলে। তার পরে খেললাম সাদা বলে। তার পর আবার লাল বলে। এর আগে, এ রকম কোনও পরিস্থিতির মুখে কখনও পড়িনি। আমার কাছে সেটা ছিল একদম নতুন অভিজ্ঞতা। আমার মনে হয়, গোলাপি বলে খেলাটাও এখনকার ব্যাটসম্যানদের কাছে নতুন একটা অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে।’’
গোলাপি বলের রং ধরে রাখার জন্য পিচে অন্তত ৮ মিলিমিটার ঘাস ছেড়ে রাখা দরকার বলেও মত রয়েছে। তাতে সুবিধা পেতে পারেন পেসাররা। সচিন যদিও বলছেন, ‘‘পেসাররা বেশি সাহায্য পেতেই পারে। কিন্তু ভাল স্পিনার হলে সে-ও জানবে, কী ভাবে এই পিচে বল করতে হবে। পিচে কতটা বাউন্স আছে, কতটা বল পিছলে যাচ্ছে, থমকে যাচ্ছে কি না, সে সব বুঝে নেওয়া হবে স্পিনারের প্রথম কাজ।’’ গোলাপি বলের খেলায় ঋদ্ধিমান সাহার ভূমিকা খুব বড় হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সচিন। ‘‘বল কী রকম আচরণ করছে, সে ব্যাপারে উইকেটকিপারের দেওয়া তথ্য খুব কাজে লাগবে টিমের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy