জোড়া-ফলা: উইলিয়ামস-কৃষ্ণ জুটিই অস্ত্র কোচ হাবাসের। ফাইল চিত্র
আন্তোনিয়ো হাবাসের দলের পাঁচ গোলের দু’টিই তাঁর। যুবভারতীতে খেলতে নেমে প্রথম দিনেই তাঁর গতি, ডান বা বাঁ দিকে ছিটকে বেরিয়ে গিয়ে প্রতিপক্ষকে ছিন্নভিন্ন করে দেওয়ার ক্ষমতা চোখ টেনেছে ফুটবলপ্রেমীদের। এটিকের আর এক স্ট্রাইকার রয় কৃষ্ণর সঙ্গে যাঁর বোঝাপড়া শুক্রবার মসৃণ জয় এনে দিয়েছে দলকে। সেই অস্ট্রেলীয় ডেভিড উইলিয়ামস বলে দিচ্ছেন, ‘‘আমরা গোল করলেই তো দল জিতবে। আমার বা কৃষ্ণর লক্ষ্য তাই গোল করা এবং দলকে জেতানো। সেটাই করে যেতে চাই। আমাদের দু’জনের তো বহুদিনের বন্ধুত্ব। সেটা কাজে লাগাতে চাই।’’
কৃষ্ণ এবং উইলিয়ামসের বন্ধুত্ব অনেকটা কৃশানু দে-বিকাশ পাঁজি জুটিকে মনে পড়াতে পারে। কেন? অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ লিগের দল ওয়েলিংটন ফিনিক্সে গত বছর খেলেছেন দু’জনে। তখন থেকেই বন্ধুত্বের শুরু। মাঠের মধ্যের ঘটনাটা প্রথমে বলা যাক। উইলিয়ামস যা হিসাব দিচ্ছেন, তাতে ওয়েলিংটনের হয়ে তিনি গোল করেছেন ১১টি। কৃষ্ণ করেছেন ১৮টি। একে অপরকে গোলের পাস বাড়িয়েছেন ছয়টি করে। মাঠের বাইরে দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক দাদা-ভাইয়ের মতো। অস্ট্রেলিয়া থেকেই এক ঘরে থাকেন, কলকাতায় এসেও তা বদলাননি। হোটেলে খেতে বসেন একসঙ্গে। অনুশীলনেও যান এক সঙ্গে। সাঁতার থেকে জিম—সব জায়গাতেই দু’জনকে দেখা যায় পাশাপাশি।
উইলিয়ামস বলছিলেন, ‘‘কৃষ্ণ আমার দাদার মতো। ও-র পরামর্শ সবসময় শুনি। একসঙ্গে থাকলে তো একাত্মতা গড়ে ওঠে। সেটা মাঠে কাজে লাগে।’’ মজার ব্যাপার হল, সবকিছু লুকিয়ে রাখা হাবাসও বলেছেন, ‘‘ওদের একসঙ্গে নেওয়ার কারণ বোঝাপড়া ভাল বলে। আশা করছি, এই জুটি দলের পক্ষে দারুণ উপযোগী হয়ে উঠবে।’’
হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে কৃষ্ণ এবং উইলিয়ামস, দু’জনেই বিরতির আগে করে ফেলেছিলেন তিনটি গোল। উইলিয়ামস জোড়া গোল করেছিলেন, কৃষ্ণ একটি। ইন্দো-ফিজির নামী মডেল নাজিয়া আলির স্বামী কৃষ্ণ আরও একটি গোল পেতে পারতেন। উইলিয়ামসের পাস থেকে পাওয়া বল পেয়ে কৃষ্ণ দূর থেকে জোরাল শট মারেন। তা পোস্টে লেগে ফেরে। আবার কৃষ্ণর পাস থেকে পাওয়া বল পেয়ে গোল করতে পারলে আইএসএলে প্রথম হ্যাটট্রিক করতে পারতেন উইলিয়ামসও। তাতে অবশ্য কোনও দুঃখ নেই কুইন্সল্যান্ডের স্ট্রাইকারের। বলছিলেন, ‘‘হ্যাটট্রিক না পেয়ে খারাপ লাগছে। তবে দল তো পাঁচ গোলে জিতে ইতিহাস তৈরি করেছে। যদি আমরা এ বার চ্যাম্পিয়ন হতে পারি, তা হলে এই প্রতিযোগিতাতেও তিন বার জেতার গৌরব অর্জন করবে আমাদের দল। আমি আর কৃষ্ণ সময় পেলেই সেই স্বপ্নের কথা নিয়ে আলোচনা করি।’’
সন্ধ্যার অনুশীলন, স্পেনীয় কোচের বেঁধে দেওয়া নিয়মকানুনের জন্য সব দলের খেলা দেখার সুযোগ পাননি মেলবোর্ন সিটি-তে খেলে আসা অস্ট্রেলীয় ফুটবলার। বলছিলেন, ‘‘আমাদের অন্য দলের খেলা দেখার সুযোগ কম। কারণ সন্ধ্যায় অনুশীলন করে এসে ডিনার করে যখন ম্যাচ দেখতে বসি, তখন অর্ধেক খেলা হয়ে যায়। তবে যতটুকু দেখেছি তাতে বল ধরে খেললে সাফল্য পাওয়া যেতে পারে। আমরা সেই চেষ্টা করছি।’’ পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, ‘‘হাভিয়ার হার্নান্ডেজ, সোসাইরাজ, প্রবীর দাশ—সব মিলিয়ে ভাল খেলেছে। সে জন্যই জয়টা সহজ হয়েছে।’’
গত পাঁচ বছরে এই প্রথম পাঁচ গোলে জয়। তবুও উচ্ছ্বাসে ভাসতে নারাজ এটিকে কোচ অন্তোনিয়ো লোপেজ় হাবাস। চেন্নাইয়িন এফসি-র সঙ্গে এটিকের পরের ম্যাচ চেন্নাইয়ে। সোমবার সেখানে যাবেন প্রীতম কোটাল-প্রণয় হালদাররা। শনিবার পুরো দলকে বল পায়ে মাঠে অনুশীলনে নামাননি স্পেনীয় কোচ। বলে দিলেন, ‘‘পাঁচ গোলে জয়ের চেয়েও আমার কাছে কেরলের হারটা এখনও আমাকে এখনও যন্ত্রণা দিচ্ছে। সে দিনও এ রকমই খেলেছিলাম। তবে এ সব নিয়ে ভেবে লাভ নেই। সামনের দিকে তাকাতে চাই। লম্বা লিগ। অনেক ম্যাচ আছে। এক নম্বর হতে পারলে এশীয় পর্যায়ের সেরা টুনার্মেন্টে খেলা যাবে। সেই চেষ্টা অন্য সমস্ত দলই করবে। আমরাও করব।’’
হাবাসের গলায় তৃপ্তি এবং আফসোসের মিশেল। তবে এ বার তাঁর হাতে কৃষ্ণ আর উইলিয়ামসের মতো স্ট্রাইকার আছেন। আছেন এদু গার্সিয়ার মতো অস্ত্র। যিনি শুক্রবার পরে নেমেও জোড়া গোল করেছেন। হাবাস ট্রফির স্বপ্ন দেখতেই পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy