রাজসিক: অপরাজিত ৩৩৫ রান করে মাঠ ছাড়ছেন ডেভিড ওয়ার্নার। শনিবার অ্যাডিলেডে। ছবি: এএফপি।
অ্যাশেজ সিরিজের ব্যর্থতার গ্লানি অ্যাডিলেডের গোলাপি আলোয় মুছে দিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। দিনরাতের টেস্টে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন অস্ট্রেলিয়ার এই বাঁ-হাতি ওপেনার। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ওয়ার্নারের ব্যাট থেকে পাওয়া গেল অপরাজিত ৩৩৫ রান। তিনি টপকে গেলেন ডন ব্র্যাডম্যানকে। ভেঙে দিলেন পাকিস্তানের আজহার আলির (অপরাজিত ৩০২ রান বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ) দিনরাতের টেস্টের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
নির্বাসনের অন্ধকারে যখন তিনি হারিয়ে গিয়েছিলেন, কেউ কি ভেবেছিল এমন অলৌকিক প্রত্যাবর্তন ঘটাতে পারবেন ওয়ার্নার। কেউ কি ভেবেছিল, ধিক্কৃত এক চরিত্র থেকে তিনি হয়ে উঠবেন এক নায়ক?
কিন্তু তার পরেও প্রশ্ন উঠছে। টেস্ট ক্রিকেটে ব্রায়ান লারার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের থেকে যখন ৬৫ রান দূরে ওয়ার্নার, তখনই ইনিংস ডিক্লেয়ার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক টিম পেন। যা নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। প্রশ্ন উঠছে, দ্বিতীয় দিনে আরও সময় হাতে থাকা সত্ত্বেও কেন ডিক্লেয়ার দেওয়া হল? লারার অপরাজিত ৪০০ রানের রেকর্ড ভেঙে দেওয়ার দিকে নিশ্চিত ভাবে এগোচ্ছিলেন এই বাঁ-হাতি ওপেনার। তাঁকে কেন সেই সুযোগটা দেওয়া হল না? অনেকেই টুইটারে টিম পেনের অপসারণ দাবি করেছেন।
ওয়ার্নার নিজে অবশ্য জানাচ্ছেন, তাঁর মাথায় কখনও লারার রেকর্ড ভাঙার চিন্তাটা আসেনি। কারণ, বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইনিংস ডিক্লেয়ার করতে চেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ওয়ার্নার এও জানিয়েছেন, ডন ব্র্যাডম্যান এবং মার্ক টেলরের রেকর্ড ভাঙার জন্য তাঁকে অতিরিক্ত তিন মিনিট সময় দিয়েছিলেন পেন।
শনিবার দ্বিতীয় দিনের শেষে ওয়ার্নার বলেছেন, ‘‘লারার রেকর্ড ভাঙার চিন্তা কখনওই আমার মাথায় ছিল না। আমরা আগামিকালের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখেছি। সেটা মোটেই ভাল নয়। তাই এ দিন কিছু ওভার পাকিস্তানকে ব্যাট করতে দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। আমাদের সেই কৌশল খেটে গিয়েছে। ওদের ছয় উইকেট ফেলে দিতে পেরেছি।’’ অ্যাডিলেডে দিনরাতের টেস্টে প্রথম ব্যাট করে ওয়ার্নারের দুরন্ত ট্রিপল সেঞ্চুরির সুবাদে অস্ট্রেলিয়া তোলে ৫৮৯-৩। এর পরে ব্যাট করতে নেমে দিনের শেষে পাকিস্তানের রান ছয় উইকেটে ৯৬।
আরও পড়ুন: ট্রিপল সেঞ্চুরি করে খুদে ভক্তকে হেলমেট উপহার দিলেন ওয়ার্নার, তার পরে যা হল…
ওয়ার্নারই জানিয়েছেন, বিরতিতে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়, স্থানীয় সময় বিকেল ৫.৪০ মিনিটে ইনিংস ডিক্লেয়ার দেওয়া হবে। ওয়ার্নার বলেছেন, ‘‘ব্যাট করার সময় ব্যাপারটা মাথায় ছিল। বারবার দেখে নিচ্ছিলাম, ডিক্লেয়ার দেওয়ার সময়টা ওটাই আছে কি না। তার পরে একটা সময় দেখলাম ঘড়ির কাটা ৫.৪০ মিনিট পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু তার পরেও পেন আমাকে সময় দিয়েছিল ব্র্যাডম্যানের ৩৩৪ রান টপকে যাওয়ার জন্য।’’
৪১৮ বলে অপরাজিত ৩৩৫। মেরেছেন ৩৯টি চার, একটি ছয়। নিজের ইনিংস সম্পর্কে ওয়ার্নার বলেছেন, অ্যাশেজে খারাপ সময়ের পরে তাঁর ঘুরে দাঁড়ানোটা খুবই প্রয়োজন ছিল। ওয়ার্নারের কথায়, ‘‘কোনও সন্দেহ নেই, এ রকম একটা ট্রিপল সেঞ্চুরি করা দারুণ কৃতিত্বের ব্যাপার। তবে আমার লক্ষ্য ছিল একটা বার্তা দেওয়া।’’ কী সেই বার্তা? ওয়ার্নারের মন্তব্য, ‘‘ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আমি মোটেও ভাল খেলতে পারিনি। তাই ভাল কিছু করে দেখানোর একটা বাড়তি তাগিদ ছিল। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এ রকম ধারাবাহিক ভাবে খেলা, দলকে ভাল জায়গায় নিয়ে যাওয়া— এ সব করতে পেরে আমি রীতিমতো গর্বিত।’’
আপনি ব্র্যাডম্যানের ৩৩৪ রান টপকে গেলেন। ব্যাপারটা কি মাথায় ছিল? ওয়ার্নার বলছেন, ‘‘অবশ্যই ছিল। ছোটবেলা থেকেই এই কীর্তির কথা শুনে এসেছি। আমার মনে আছে, সিডনিতে মাইকেল ক্লার্ক অপরাজিত ৩২৯ রানে ইনিংস ডিক্লেয়ার করেছিল।’’ ওয়ার্নার এও বলেন, ‘‘আমরা এ সব ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় দেখেছি। তখন মনে হত, এই রান ওরা করল কী করে? কতটা সময় ব্যাট করতে হয়েছে! আজ আমিও সেই কাজটা করলাম। তবে আমাকে অসম্ভব ধৈর্য দেখাতে হয়েছে। সত্যি বলতে আমি নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।’’
ওয়ার্নারের এই মানসিক শক্তির পিছনে কি মহাত্মা গাঁধী? ওয়ার্নারের স্ত্রী ক্যান্ডিসের করা এক টুইটের পরে এই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। এ দিন গ্যালারিতে ছিলেন ক্যান্ডিস। ওয়ার্নারের ট্রিপল সেঞ্চুরির পরে তাঁকে কাঁদতেও দেখা যায়। পরে মহাত্মা গাঁধীকে উদ্ধৃত করে ক্যান্ডিস টুইট করেন, ‘‘শারীরিক সক্ষমতাই শক্তির কারণ নয়। অদম্য ইচ্ছাশক্তিই শরীরে বল এনে দেয়।’’
আরও একটা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ১৯৯৮ সালে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৩৩৪ রানে থাকা অবস্থায় ডিক্লেয়ার দিয়েছিলেন মার্ক টেলর। সেই উদাহরণ টেনে অনেকে বলছেন, ওয়ার্নারেরও কি উচিত ছিল ডনের প্রতি শ্রদ্ধায় ওই ৩৩৪ রানে থেমে যাওয়া? যে প্রশ্নের জবাবে টেলর বলেছেন, ‘‘ওয়ার্নার ঠিক কাজ করেছে। আমিও চেষ্টা করেছিলাম, ডনের ৩৩৪ রান টপকে যাওয়া। দিনের খেলা শেষ হতে দু’বল বাকি ছিল। আমি দু’টো বলেই স্ট্রোক খেলি। কিন্তু ফিল্ডারদের হাতে বল চলে যায়। ওদের হাত থেকে বল বেরিয়ে গেলে আমি রান নিয়ে নিতাম।’’ পরের দিন কেন আর ব্যাট করেননি? টেলরের ব্যাখ্যা, ‘‘পরের দিন সকালে হয়তো মিনিট কুড়ির জন্য ব্যাট করতাম। কিন্তু মনে হল, ওইটুকু সময় ব্যাট করলে পরে লোকে বলবে, ডনের রেকর্ড ভাঙার জন্যই নেমেছি।’’
স্কোরকার্ড
অস্ট্রেলিয়া ৫৮৯-৩ ডি. (১২৭)
পাকিস্তান ৯৬-৬ (৩৫)
অস্ট্রেলিয়া (প্রথম ইনিংস)
(শুক্রবার ৩০২-১ এর পরে)
ওয়ার্নার ন. আ. ৩৩৫ • ৪১৮
লাবুশানে বো শাহিন ১৬২ • ২৩৮
স্মিথ ক রিজ়ওয়ান বো শাহিন ৩৬ • ৬৪
ওয়েড ন. আ. ৩৮ • ৪০
অতিরিক্ত ১৪
মোট ৫৮৯-৩ ডি. (১২৭)
পতন: ২-৩৬৯ (লাবুশানে, ৮৩.২), ৩-৪৯০ (স্মিথ, ১১১.১)।
বোলিং: মহম্মদ আব্বাস ২৯-৭-১০০-০, শাহিন শা আফ্রিদি ৩০-৫-৮৮-৩, মহম্মদ মুসা ২০-১-১১৪-০, ইয়াসির শা ৩২-১-১৯৭-০, ইফতিকার আহমেদ ১৫-০-৭৫-০, আজহার আলি ১-০-৯-০।
পাকিস্তান (প্রথম ইনিংস)
মাসুদ ক পেন বো হেজলউড ১৯ • ৫০
ইমাম ক ওয়ার্নার বো স্টার্ক ২ • ১৬
আজহার ক স্মিথ বো কামিন্স ৯ • ২৩
বাবর ন. আ. ৪৩ • ৬৭
আসাদ ক পেন বো স্টার্ক ৯ • ১৪
ইফতিকার ক পেন বো স্টার্ক ১০ • ২৬
রিজ়ওয়ান ক পেন বো স্টার্ক ০ • ৩
ইয়াসির ন. আ. ৪ • ১১
অতিরিক্ত ০
মোট ৯৬-৬ (৩৫)
পতন: ১-৩ (ইমাম, ৪.৩), ২-২২ (আজহার, ১১.৬), ৩-৩৮ (মাসুদ, ১৬.৬), ৪-৬৯ (আসাদ, ২৩.৩), ৫-৮৯ (ইফতিকার, ৩১.২), ৬-৮৯ (রিজ়ওয়ান, ৩১.৫)।
বোলিং: মিচেল স্টার্ক ১৩-৫-২২-৪, প্যাট কামিন্স ১৪-১-৪৫-১, জস হেজলউড ৮-২-২৯-১।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy