Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Sikandar Raza

নারাইনের হাত ধরে বোলিং ভঙ্গি বদল, পাক সেনায় যোগ দিতে চাওয়া রাজাই সিকন্দর, হারিয়ে দিলেন শুভমনদের

ক্রিকেট কোনও দিনই পছন্দ ছিল না। যুদ্ধবিমানের চালক হতে চেয়েছিলেন। চোখের সমস্যায় বাদ পড়েন। ক্রিকেটে আসা নেহাতই আকস্মিক। সেই সিকন্দর রাজাই স্বপ্ন দেখিয়ে চলেছেন জ়িম্বাবোয়েকে।

cricket

সিকন্দর রাজা। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪ ২২:৫৫
Share: Save:

তিনি দলের নেতা। তিনি দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। শনিবার জ়িম্বাবোয়ের অধিনায়ক সিকন্দর দেখালেন, তিনি দলের রাজাও বটে।

দীর্ঘ দিন বাদে জ়িম্বাবোয়ে হারিয়েছে ভারতকে। দেশের মাটিতে ভারতের বিরুদ্ধে জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন রাজা। ম্যাচের সেরা ক্রিকেটারও তিনিই। অতীতে বার বার জ়িম্বাবোয়ের বিপদের দিনে দেশের ত্রাতা হয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি। আফ্রিকার এই দেশ এক সময় ক্রিকেটবিশ্বে শক্তিশালী ছিল। মাঝের কিছুটা সময় পর আবার জ়িম্বাবোয়ের গরিমা ফেরানোর চেষ্টা করছেন রাজা। তাঁর ক্রিকেটজীবনও বর্ণময়।

জীবন যদি রুটিন মেনে চলত তা হলে হয়তো যুদ্ধক্ষেত্রে বিমান নিয়ে উড়ে বেড়াতে দেখা যেত রাজাকে। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন তিনি কোনও দিনই দেখেননি। চোখে ছিল পাকিস্তানের বিমানবাহিনীতে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধবিমানের চালক হওয়ার। কিন্তু সেই স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনাশ হয়ে যায়। জীবন রাজাকে নিয়ে যায় অন্য পথে। নীল দিগন্তের বদলে তাঁর বিচরণক্ষেত্র এখন সবুজ ঘাস আর ২২ গজ।

পাকিস্তানের শিয়ালকোটে জন্ম রাজার। বড় হওয়া সেখানেই। পাকিস্তানের লোয়ার টোপায় তিন বছর বিমানবাহিনীর বোর্ডিং স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। শেষ ধাপে গিয়ে ব্যর্থ হন চোখের সমস্যার জন্য। রাজার ‘বাইলেনট্রিকাল ওপাসিটি’ রয়েছে। অর্থাৎ বেশি উচ্চতায় বিমান ওড়ানোর সময় সামনে কোনও বস্তু চলে এলে রাজা সেটি দেখতে পাবেন না। প্রশিক্ষকরা সে সময় তাঁকে অনেক সান্ত্বনা দেন। বিমানবাহিনীতে অন্য কাজ করতে বলেন। রাজার জবাব ছিল, “আমি এখানে যুদ্ধবিমানের পাইলট হতে এসেছি। সেটা হতে না পারলে থাকার দরকার নেই।”

এর পর রাজা ঠিক করেন তিনি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হবেন। স্কটল্যান্ডের একটি কলেজে ভর্তি হন। সেই সময়েই রাজার গোটা পরিবার জ়িম্বাবোয়েতে চলে যায়। স্থানীয় কলেজ এবং ক্লাবে সেই সময় থেকেই ক্রিকেট খেলা শুরু রাজার। কখনওই পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখেননি। জ়িম্বাবোয়েতে ফিরে সেখানেও ক্রিকেট খেলতে থাকেন।

এর পরেই আসে চমক। এক দিন ক্লাবের সতীর্থদের সঙ্গে থ্রো ডাউন সেশন করার মাঝে সে দেশের টি-টোয়েন্টি লিগের ক্লাব সাদার্ন রক্‌সের চেয়ারম্যান রাজাকে দেখে ফেলেন। তিনি তাঁর ক্লাবের নেটে রাজাকে অনুশীলনে আসতে বলেন। পর দিন সকালে তিন ঘণ্টার সড়কপথে অনুশীলনে যান রাজা।

কয়েক সপ্তাহ পরেই তিনি ব্রায়ান লারার সঙ্গে ক্লাবের হয়ে ওপেন করা শুরু করেন। প্রথম ম্যাচেই ৪০ বলে ৯৩ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন। সেই শুরু। ধীরে ধীরে সুযোগ খুলে যায় জ়িম্বাবোয়ের জাতীয় দলে খেলার। ওপেনার হিসাবে শুরু করলেও ধীরে ধীরে মাঝের সারিতে ব্যাটিং করতে থাকেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি টেস্টে শতরান করেন। পাশাপাশি শান দিতে থাকেন অফ স্পিন বোলিংয়ে।

অনেকেই রাজার বোলিংয়ের সঙ্গে সুনীল নারাইনের মিল খুঁজে পান। রাজা নিজেও নারাইনের ভক্ত। ক্যারিবিয়ান বোলারের মতোই বল ধরা হাতটাকে পিছনে লুকিয়ে রেখে দুলকি চালে এগিয়ে আসেন। শেষ মুহূর্তে হাত থেকে বল বেরোয়, যাতে ব্যাটার বুঝতে না পারেন কী ধরনের বল আসতে চলেছে। বছর চারেক আাগে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার ধরা পড়েছিল রাজার। সুস্থ হওয়ার পর বোলিং অ্যাকশন বদলাতে হত। তখনই নারাইনের সাহায্য নিয়ে নিজের বোলিং অ্যাকশন বদলে ফেলেন রাজা। সেই দিয়েই পাকিস্তান ম্যাচে এসেছে সাফল্য।

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বিশ্বরেকর্ড রয়েছে রাজার। পর পর পাঁচটি অর্ধশতরান করেছেন তিনি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আফ্রিকার আঞ্চলীয় কোয়ালিফায়ারে রোয়ান্ডার বিরুদ্ধে প্রথম অর্ধশতরানটি করেছিলেন রাজা। ৩৬ বলে ৫৮ রানের পাশাপাশি ৩ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন। পরের ম্যাচে নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭ বলে ৬৫ রান এবং ১৩ রানে ২ উইকেট নিয়েছিলেন। তৃতীয় ম্যাচে কেনিয়ার বিরুদ্ধে ৪৮ বলে ৮২ রান করেছিলেন এবং ২১ রানে ২ উইকেট নিয়েছিলেন। চতুর্থ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৪২ বলে ৬৫ রান এবং ২৮ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন। শেষে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৪২ বলে ৬২ রান এবং ১৩ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Sikandar Raza India vs Zimbabwe
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE