Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Rohit Sharma and Virat Kohli

বার বার অনুরোধেও রোহিত, কোহলি ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে দূরে, নিজের ফাঁদেই পা বোর্ডের

ভারতীয় ক্রিকেটে গত কয়েক বছর ধরে নতুন একটি শব্দবন্ধের আমদানি হয়েছে, ‘ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট’। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা এর ফয়দা তুললেও, সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়েরা তা করেননি।

cricket

রোহিত শর্মা (বাঁ দিকে) এবং বিরাট কোহলি। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:০১
Share: Save:

ভারতীয় ক্রিকেটে গত কয়েক বছর ধরে নতুন একটি শব্দবন্ধের আমদানি হয়েছে, ‘ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট’। সাধারণ ভাষায়, কাজের চাপ সঠিক ভাবে পরিচালিত করা। অর্থাৎ কোনও ক্রিকেটার যদি একটানা ম্যাচ খেলতে থাকেন তাঁকে ঐচ্ছিক বা অনৈচ্ছিক বিশ্রাম দেওয়ার প্রথা চালু হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, এই প্রথারই ফয়দা তুলছেন বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মার মতো ক্রিকেটার। কারণে-অকারণে তাঁরা ‘ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট’-এর দোহাই দেখিয়ে ম্যাচ খেলা থেকে বিরত থাকছেন। তার প্রভাব পড়ছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁদের পারফরম্যান্সে।

বাংলাদেশ এবং নিউ জ়িল্যান্ড সিরিজ়‌ের আগে বোর্ড সিনিয়র ক্রিকেটারদের বার বার অনুরোধ করেছিল দলীপ ট্রফিতে খেলতে। অনেকে নিমরাজি হয়েছিলেন। ম্যাচের আগে জানিয়ে দেন, দলীপে খেলার ‘অনুপ্রেরণা’ পাচ্ছেন না। নিউ জ়‌িল্যান্ড সিরিজ়ে দেখা গিয়েছে, যাঁরা খেলেননি তাঁরাই ব্যর্থ হয়েছেন। দলীপে খেলা ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স তুলনায় ভাল। দেশের মাটিতে ঘূর্ণি পিচ করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এ দিকে ঘরোয়া ক্রিকেটে না খেলায় সেই পিচ চেনেনই না রোহিত, কোহলিরা। ফলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ল্যাজেগোবরে হচ্ছেন সাধারণ মানের বোলারের কাছেও।

সচিন, সৌরভেরা কী করতেন

২০০৭ সালের জানুয়ারির কথা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কঠিন সিরিজ় খেলে দেশে ফিরেছিল ভারত। তার কয়েক দিনের মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়‌ের বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজ়‌ ছিল। কিছু দিন বাদে শুরু হতে চলা বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ছিল এই সিরিজ়ে। ভারত ১০ দিনের ব্যবধানে চারটি ম্যাচ খেলেছিল নাগপুর, চেন্নাই, কটক এবং বরোদায়। ৩১ জানুয়ারি ছিল শেষ ম্যাচ। পরদিন ভারতীয় দলের চার সদস্য সচিন, সৌরভ, জাহির খান এবং অজিত আগরকর বরোদা থেকে মুম্বইয়ের বিমানে চেপে বসেছিলেন।

কারণ? ২ ফেব্রুয়ারি থেকে রঞ্জি ফাইনালে মুম্বই খেলতে নামছিল বাংলার বিরুদ্ধে। কেউই সেই সম্মানের লড়াই থেকে দূরে থাকতে চাননি। ফলে ৩১ জানুয়ারি সাদা বলের ক্রিকেটে ম্যাচ খেলার দু’দিনের মধ্যে লাল বলের ক্রিকেটে নেমে পড়েছিলেন। সচিন শতরান করেছিলেন, সৌরভ ৯০ করেছিলেন এবং জাহির বেশ কয়েকটা উইকেট নিয়েছিলেন। রঞ্জি ফাইনাল শেষ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সচিন, সৌরভ এবং জাহিরকে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এক দিনের ম্যাচে নামতে হয়েছিল। তখনও ভারতীয় ক্রিকেটে ‘ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট’ শব্দটি আসেনি।

রোহিত, কোহলিরা কী করেন

নিউ জ়িল্যান্ড দলে এমন কিছু ক্রিকেটার ছিলেন যাঁরা ‘জোর’ করে দলীপে খেলা থেকে বিরতি নিয়েছিলেন। তারকাদের সুবিধার জন্য বোর্ড অনন্তপুর থেকে ম্যাচ বেঙ্গালুরুতে সরিয়ে আনা সত্ত্বেও খেলতে চাননি। অনুপ্রেরণার অভাব যদি প্রথম কারণ হয়, দ্বিতীয় কারণ অবশ্যই সদিচ্ছার অভাব, যা কেউই প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি। ভেবেছিলেন মঞ্চে মাত করে দেবেন। ফলাফল চুনকাম। যশপ্রীত বুমরার শারীরিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে তাঁকে বিরতি দেওয়া যেতেই পারত। কিন্তু কোহলি, রোহিত, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাডেজারা ছাড় পেলেন কী ভাবে?

ভারতের প্রাক্তন ওপেনার দেবাং গান্ধী বেশ ক্ষুব্ধ। বলেছেন, “২০০০ সালে এপ্রিলের কাঠফাটা গরমের মধ্যেও সচিন মুম্বইয়ের হয়ে তামিলনাড়ুর বিরুদ্ধে রঞ্জি সেমিফাইনাল খেলেছিল এবং দ্বিশতরান করেছিল। তার তিন দিন পরে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ফাইনাল খেলতে নেমেছিল। সেই হায়দরাবাদ দলে ছিল মহম্মদ আজহারউদ্দিন, ভিভিএস লক্ষ্মণের মতো তারকারা। সেখানেও পঞ্চাশ এবং শতরান করেছিল। মার্চের শেষ পর্যন্ত এক দিনের ম্যাচ খেলার পরেও সচিন রঞ্জিতে পর পর দুটো ম্যাচ খেলেছিল। এটাই হল সচিন।”

ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে রোহিতদের নাক সিঁটকানোর মানসিকতা

২০১৩ সালে উত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধে শেষ বার দিল্লির হয়ে রঞ্জি খেলেছিলেন কোহলি। সেই দিল্লি দলে বীরেন্দ্র সহবাগ, গৌতম গম্ভীর, আশিস নেহরা, ইশান্ত শর্মা এবং উত্তরপ্রদেশ দলে সুরেশ রায়না, মহম্মদ কাইফ এবং ভুবনেশ্বর কুমারেরা ছিলেন। রোহিত শেষ বার রঞ্জি খেলেছিলেন ২০১৫ সালে। তার পরে দুই ক্রিকেটার মাত্র একটি করে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন। কোহলি খেলেছিলেন শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ভারত ‘এ’ দলের হয়ে ২০১৭ সালে। রোহিতও ভারত ‘এ’ দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলেছিলেন।

অপর পক্ষে, সচিন ৩১০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছিলেন। ২০০টি টেস্ট বাদ দিলেও ১১০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। একটানা ২৪ বছর ধরে ক্রিকেট খেলেছেন। সেখানে কোহলি মোটে ৩২টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন। রোহিত একটু ভাল, ৬১টি ম্যাচ। সবে ১৮ বছর ক্রিকেট খেলেছেন দু’জনে। এর মধ্যেই কেরিয়ারের সায়াহ্নে।

সত্যিই কি রোহিত, কোহলিদের বাড়তি চাপ পড়ে

অস্বীকার করার উপায় নেই। রোহিত, কোহলিদের মতো টানা দু’মাস আইপিএল এবং গাদা গাদা টি-টোয়েন্টি খেলতে হয়নি সচিন, সৌরভদের। রোহিত ৪৪৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। কোহলি ৩৯৯টি। দেবাংয়ের মতে, “বিশ্রাম অবশ্যই দরকার। তবে ব্যাটারদের বলি, যদি সে মনে করে ফর্মে নেই তা হলে অবশ্যই ঘরোয়া ক্রিকেটে ফেরা উচিত। অন্তত একটা দলীপ ম্যাচ খেলা উচিত ছিল ওদের।”

প্রাক্তন ক্রিকেটার তথা নির্বাচক এমএসকে প্রসাদ আবার কোহলিদেরই পাশে। বলেছেন, “কপিল পাজি এবং সানি স্যরদের তুলনায় এখন ম্যাচের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। ফলে খেলোয়াড়দের শক্তি নিংড়ে নেওয়া হচ্ছে। আমার মনে হয় টেস্ট শুরুর আগে ইরানি কাপের একটা ম্যাচ খেলানো উচিত ছিল।” প্রসাদের মতে, সূচি এমন ভাবেই রাখা উচিত যাতে বড় টেস্ট সিরিজ়ের আগে তারকা ক্রিকেটারদের বিশ্রাম দেওয়া যায়।

বোর্ডের কী করা উচিত

কয়েক মাস আগে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার নির্দেশ দিয়েছিল বোর্ড। তারাই আবার বিশ্রাম নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। প্রাক্তন নির্বাচক যতীন পরাঞ্জপে বলছেন, “তারকা ক্রিকেটারেরা নিজেদের নিয়ে সচেতন। মাঝেমাঝে ওদের একটা ধাক্কা দেওয়া দরকার। তবে খেয়াল রাখতে হবে, যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি না তৈরি হয়।”

আগামী দিনে বোর্ড হয়তো টেস্ট সিরিজ় শুরুর আগে ক্রিকেটারদের বাধ্যতামূলক ভাবে একটি বা দু’টি ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচ খেলার নির্দেশ দিতে পারে। ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের মরসুম অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত থাকে। অস্ট্রেলিয়া, নিউ জ়িল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলা না থাকলে আগে রঞ্জিতে খেলানো যেতেই পারে। প্রসাদের মতে, “টেস্ট সিরিজ়‌ এবং ঘরোয়া ক্রিকেটের সূচি এমন ভাবেই করা উচিত যাতে দুটো একই সময়ে না হয় এবং ক্রিকেটারেরা টেস্ট সিরিজ়‌ে যাওয়ার আগে একটি-দু’টি রঞ্জি ম্যাচ খেলতে পারে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy