Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Rinku Singh

বিশ্বকাপে রিঙ্কুর না থাকার নেপথ্যে কেকেআর? শাহরুখের পছন্দের ক্রিকেটারকে ডোবাল বাদশারই দল?

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে কেন সুযোগ পেলেন না রিঙ্কু সিংহ? পারফরম্যান্স, না অন্য কোনও কারণ? খুঁজে দেখল আনন্দবাজার অনলাইন।

cricket

রিঙ্কু সিংহ। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মে ২০২৪ ১০:১৫
Share: Save:

মঙ্গলবার দুপুরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যখন ভারতীয় দল ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন সবারই চোখ আটকে গিয়েছিল একটি নামে। রিঙ্কু সিংহ। বিশ্বকাপের ১৫ জনের দলে ছিল না তাঁর নাম। রিজার্ভে থাকা চার জন ক্রিকেটারের তালিকায় অবশ্য তাঁর নাম ছিল। কিন্তু যে ক্রিকেটার গত এক বছরে ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সব থেকে ধারাবাহিক রান করেছেন, তাঁকেই দলে রাখা হবে না? কেন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নির্বাচকেরা? শুধু কি এ বারের আইপিএলের পারফরম্যান্স বিচার করা হয়েছে? না কি নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ রয়েছে? রিঙ্কুর সুযোগ না পাওয়ার নেপথ্যে কি কলকাতা নাইট রাইডার্সও দায়ী? এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজল আনন্দবাজার অনলাইন।

ভারতের বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করার কয়েক দিন আগে থেকে বিশেষজ্ঞেরা নিজেদের মতো করে দল নির্বাচন করছিলেন। এমন এক জনকেও চোখে পড়েনি, যিনি নিজের দল থেকে রিঙ্কুকে বাদ দিয়েছেন। সবাই ধরেই নিয়েছিলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ও আমেরিকায় আয়োজিত বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে ফিনিশারের ভূমিকায় দেখা যাবে আলিগড়ের ছেলেকে। কিন্তু তা হল না। শিবম দুবের কাছে হেরে গেলেন রিঙ্কু। জায়গা পেলেন না।

আইপিএল শুরু হওয়ার আগে ভারতের নির্বাচক প্রধান অজিত আগরকর স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, যে হেতু বিশ্বকাপের আগে ভারত আর কোনও সিরিজ় খেলবে না, তাই আইপিএলের পারফরম্যান্স দেখেই দল তৈরি হবে। রিঙ্কুর আইপিএলের পারফরম্যান্স এ বার রিঙ্কুচিত হয়নি। এ বার রিঙ্কু আটটি ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন। ১২৩ রান করেছেন তিনি। কিন্তু শুধু এই পরিসংখ্যান দেখলে হবে কি? এ বার রিঙ্কু বেশির ভাগ ম্যাচেই শেষ দিকে কয়েকটি বল খেলার সুযোগ পেয়েছেন। গত বার অনেক বেশি ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। এ বার তা কিন্তু পাননি।

রিঙ্কুর সব থেকে বড় প্রতিযোগিতা যাঁর সঙ্গে ছিল, সেই শিবমের সঙ্গে তাঁর পরিসংখ্যানের তুলনা করলে চেন্নাই সুপার কিংসের ক্রিকেটার এগিয়ে। রিঙ্কুর ১২৩ রানের জবাবে শিবম করেছেন ৩৫০ রান। কিন্তু শুধুই কি রান বিচার করলে হবে? আরও কয়েকটি বিষয় রয়েছে। এ বার রিঙ্কু আটটি ম্যাচে মাত্র ৮২ বল খেলেছেন। অর্থাৎ, প্রতি ইনিংসে ১০টি বল। অন্য দিকে শিবম এ বার ১০টি ম্যাচে ২০৩টি বল খেলেছেন। অর্থাৎ, প্রতি ইনিংসে ২৩টি বল। প্রতি ম্যাচে রিঙ্কুর থেকে ১৩টি বল বেশি খেলেছেন শিবম। তিনি মেরেছেন ২৬টি ছক্কা ও ২৪টি চার। রিঙ্কু সেই তুলনায় অনেক কম (ছ’টি ছক্কা ও ন’টি চার)। শুধু তা-ই নয়, শিবম চেন্নাইয়ের হয়ে বেশির ভাগ ম্যাচে তিন বা চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছেন। তখন চাপ অনেকটা কম থাকে। সে ক্ষেত্রে রিঙ্কু খেলতে নেমেছেন সাত বা আট নম্বরে। সেই সময় প্রথম বল থেকেই বড় শট মারার চেষ্টা করতে হয়। সেই চেষ্টায় আউট হওয়ারও সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাতেই সমস্যা হয়েছে রিঙ্কুর।

তা হলে কি রিঙ্কুর সুযোগ না পাওয়ার নেপথ্যে কিছুটা হলেও কেকেআর দায়ী নয়? গত বার আইপিএলে গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে পাঁচ বলে পাঁচ ছক্কা মেরে দলকে জিতিয়ে নায়ক হয়ে উঠেছিলেন রিঙ্কু। গত বার কেকেআরের হয়ে সর্বাধিক রান করেছিলেন তিনি। তার পর থেকেই ফিনিশারের তকমা পেয়েছেন এই বাঁ হাতি ব্যাটার। কিন্তু এ বার ছবিটা আলাদা। কেকেআরের ওপেনিং জুটি রান করছে। তিন, চার ও পাঁচ নম্বর জায়গা অঙ্গকৃশ রঘুবংশী, শ্রেয়স আয়ার ও বেঙ্কটেশ আয়ার দখল করে রেখেছেন। তাঁদের কেউই বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পাওয়ার দৌড়ে ছিলেন না। দুই ওপেনার-সহ এই পাঁচ ব্যাটারই ইনিংসের সিংহভাগ বল খেলছেন। সেখানে রিঙ্কু অনেক কম সুযোগ পাচ্ছেন। তা হলে কি কেকেআর চাইলে রিঙ্কুকে টপ অর্ডারে সুযোগ দিতে পারত না? তা হলে আরও বেশি বল খেলার সুযোগ পেতেন তিনি। আরও বেশি রান করতে পারতেন। সে ক্ষেত্রে রিঙ্কুর সম্ভাবনাও বেড়ে যেত।

প্রাক্তন ক্রিকেটার আকাশ চোপড়ার মতে, রিঙ্কুর সুযোগ না পাওয়ার জন্য কেকেআরের দায় রয়েছে। তিনি বলেন, “রিঙ্কুকে দলে না দেখে অবাক হয়েছি। আমার মনে হয়েছিল ওকে বাদ দেওয়া অসম্ভব। আমার মনে হয় সাম্প্রতিক ফর্ম বিচার করে রিঙ্কুকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কেকেআরের একটা দায় থেকে যায়।”

আকাশেরও মনে হয়েছে শিবমের কাছে হেরে গিয়েই বাদ পড়তে হয়েছে রিঙ্কুকে। তিনি বলেন, “রিঙ্কু ও শিবমের মধ্যে এক জন সুযোগ পেত। ওদের মধ্যে যে ভাল খেলছে তাকেই নেওয়া হয়েছে। সেই যুক্তিতে শিবম সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু রিঙ্কু তো এ বার ব্যাট করারই সুযোগ পায়নি। সেটা কি ওর দোষ? আমার মনে হয় না। দেশের হয়ে পারফরম্যান্সের থেকে কি আইপিএলে পারফরম্যান্সকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হল? নির্বাচকেরা এটা করলে ভুল করেছেন।”

আরও একটি কারণ উঠে আসছে। রিঙ্কু কি আইপিএলের ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার নিয়মের ধাক্কা খেলেন না? কেকেআর ও ভারতীয় দলে তিনি ফিনিশারের ভূমিকায় খেলেছেন। এ বারও কেকেআর তাঁকে সেই দায়িত্বই দিয়েছে। সেই কারণে তিনি অনেক কম বল খেলার সুযোগ পেয়েছেন। অন্য দিকে শিবম খেলেছেন ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার নিয়মে। চেন্নাইয়ের হয়ে ফিল্ডিং করেননি তিনি। শুধু ব্যাট করেছেন। মন্থর উইকেটে বড় শট মারার দায়িত্ব দিয়ে তাঁকে আগে ব্যাট করতে নামানো হয়েছে। শিবম সেটা করেছেন। তিনি কিন্তু ভারতীয় দলে অলরাউন্ডার হিসাবে জায়গা পাননি। কারণ, এ বার আইপিএলে বল হাতে দেখা যায়নি তাঁকে। শিবমের বোলিংয়ের উপর ভরসা দেখায়নি ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু যদি ইমপ্যাক্ট প্লেয়ারের নিয়ম না থাকত তা হলে কি চেন্নাইয়ের একাদশে জায়গা হত শিবমের? সে ক্ষেত্রে এক জন বোলার বা অলরাউন্ডার সুযোগ পেতেন। তা হলে তো আর বড় বড় শট খেলে ভারতীয় দলের দরজা খোলাতে পারতেন না এই বাঁ হাতি ব্যাটার। ভাল ব্যাট করার পাশাপাশি রিঙ্কু ফিল্ডিংটাও দুর্দান্ত করেন। টি-টোয়েন্টিতে সেটাও বড় ফ্যাক্টর। সেটা কি ভুলে গেলেন নির্বাচকেরা? যে শিবম গোটা আইপিএলে ব্যাটিং ছাড়া কিছু করেননি তাঁকে জায়গা দিলেন রিঙ্কুর বদলে। এই সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়েও ফিরতে পারে।

গত বারের আইপিএলের পর থেকে ভারতের টি-টোয়েন্টি দলে নিয়মিত ছিলেন রিঙ্কু। ১৫টি ম্যাচে ৩৫৬ রান করেছেন তিনি। গড় ৮৯। স্ট্রাইক রেট ১৭৬.২৪। দু’টি অর্ধশতরান করেছেন তিনি। এত ধারাবাহিক এক জন ক্রিকেটারকে বিশ্বকাপের দলে সুযোগ দেয়নি অজিত আগরকরের নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটি। হতে পারে, চলতি আইপিএলের পারফরম্যান্স দেখে বিশ্বকাপের দল বেছেছেন নির্বাচকেরা। তা হলে তো সেই বিচারে হার্দিক পাণ্ড্যেরও সুযোগ পাওয়া অত সহজ ছিল না। তিনি তো পেলেন। তার পরেই উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, হার্দিককে নিয়ে অনেক বিরোধিতা হয়েছিল। আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সুযোগ পেয়েছেন হার্দিক। নির্বাচকেরা মনে করেছেন, আইপিএলে ভাল খেলতে না পারলেও এখনও ভারতে হার্দিকের থেকে ভাল পেসার-অলরাউন্ডার নেই। তাই নেওয়া হয়েছে তাঁকে। ওই আধিকারিক আরও জানিয়েছেন, রিঙ্কুর বাদ পড়া দুর্ভাগ্যজনক। অভিজ্ঞতা না থাকায় বাদ পড়তে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু ভারতীয় দলের হয়ে গত এক বছরে রিঙ্কু যে ধারাবাহিকতা দেখিয়েছেন সেটা কি নির্বাচকেরা খেয়ালই করেননি?

কোনও রাখঢাক না করে সরাসরি নির্বাচকদের একহাত নিয়েছেন ভারতের বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত। তাঁর মতে, রিঙ্কুকে ‘বলির পাঁঠা’ করা হয়েছে। শ্রীকান্ত বলেন, “আমি একটুও খুশি হইনি। রিঙ্কুকে এখন গোটা দুনিয়া চেনে। যে কয়েকটা সুযোগ ও পেয়েছে প্রত্যেকটা কাজে লাগিয়েছে। সব পরিস্থিতিতে ভাল খেলেছে। কী ভাবে এ রকম এক জন ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়া যায়? অন্য যে কাউকে বাদ দেওয়া যেত। যশস্বী জয়সওয়ালকে বাদ দিয়েও রিঙ্কুকে রাখতে হত। ওকে বলির পাঁঠা করা হল।”

গোটা দল নির্বাচনেরই সমালোচনা করেছেন শ্রীকান্ত। তিনি বলেন, “দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছিল রিঙ্কু। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ২২ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরে ২১২ রান করেছিল ভারত। রোহিত শতরান করেছিল। ওকে গোটা ইনিংস জুড়ে সঙ্গ দিয়েছিল রিঙ্কু। সেগুলো কি নির্বাচকদের চোখে পড়েনি? খুব খারাপ একটা দল হয়েছে। চার জন স্পিনারের কী দরকার? চার জনকেই তো খেলানো যাবে না। কয়েক জনকে খুশি করার জন্য এই দল নির্বাচন করা হয়েছে। জঘন্য।”

রিঙ্কুর বিশ্বকাপ খেলার আশা অবশ্য এখনও পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি। ২৩ মে-র মধ্যে যে কোনও দিন ১৫ জনের দলে বদল করতে পারেন নির্বাচকেরা। সে ক্ষেত্রে রিজ়ার্ভে থাকা ক্রিকেটারেরাই সুযোগ পাবেন। তার পরেও কোনও ক্রিকেটার চোট পেলে দলে বদল করা যেতে পারে। কিন্তু সে সব তো সম্ভাবনার কথা। বিশ্বকাপের দলে তো দেশের সেরা ক্রিকেটারদের সুযোগ দেওয়া উচিত। সেখানে আইপিএলের পাশাপাশি দেশের হয়ে খেলা ইনিংসও মাথায় রাখা উচিত। সেটা কি রেখেছিলেন নির্বাচকেরা? তেমনটা হলে তো রিঙ্কুর সরাসরি ১৫ জনের দলে থাকা উচিত ছিল। সেটা তো হল না। তা হলে কি আরও এক বার একটি আইসিসি প্রতিযোগিতার গোড়াতেই গোলমাল করে ফেললেন নির্বাচকেরা? প্রশ্ন উঠছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Rinku Singh T20 World Cup 2024 Team India KKR
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy