তিতাসের ক্রিকেটে আসা নেহাতই দুর্ঘটনা। ক্রিকেট কোনও দিনই তাঁর প্রথম পছন্দ ছিল না। ফাইল ছবি
রবিবার ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ মহিলা বিশ্বকাপ জেতার পর থেকেই শহরে উচ্ছ্বাস তিন বাঙালি কন্যাকে নিয়ে। তিতাস সাধু, রিচা ঘোষ এবং হৃষিতা বসুর কৃতিত্বে গর্বিত গোটা রাজ্য। একটু বেশি উন্মাদনা তিতাসকে নিয়ে, যে হেতু তিনি ফাইনালের সেরা ক্রিকেটার হয়েছেন। অথচ তিতাসের ক্রিকেটে আসা নেহাতই দুর্ঘটনা। ক্রিকেট কোনও দিনই তাঁর প্রথম পছন্দ ছিল না।
তিতাসের খেলোয়াড়ি জীবন শুরু দৌড়ের মাধ্যমে। রাজ্যস্তরের স্প্রিন্টার ছিলেন তিনি। দৌড়তে দৌড়তেই শুরু করেন সাঁতার। বেশ কিছু দিন জলে কাটানোর পর তিতাসের মনে ধরে টেবিল টেনিস। মন দিয়ে টেবিল টেনিস খেলা শুরু করেন তিনি। তবে রাজেন্দ্র স্মৃতি সঙ্ঘে গিয়ে ক্রিকেটের প্রেমে পড়ে যান তিতাস। তবে শুরুর দিকে ব্যাটিংই ছিল তাঁর পছন্দ। রানও ভালই করতেন। তা হলে বোলিংয়ের শুরু কী ভাবে?
এক দিন তাঁর ক্লাবে নেট বোলারের অভাব ছিল। তারা ডেকে নেয় তিতাসকে। সেই শুরু। আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তিতাসকে। পড়াশোনাতে ভাল ছিলেন। মাধ্যমিকে ৯৩ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন। কিন্তু ক্রিকেটপ্রেমে পড়াশোনাও অনিয়মিত হয়ে পড়ে।
বাংলা দলের বোলিং কোচ শিবশঙ্কর পালের হাতে পড়ে পাল্টে যান তিতাস। ২০১৬-১৭ মরসুমে বাংলার মহিলা দলের কোচ ছিলেন শিবশঙ্কর। সে সময়ই তিতাসকে তাঁর কাছে নিয়ে আসেন ছোটবেলার কোচ প্রিয়ঙ্কর মুখোপাধ্যায়। শিবশঙ্কর বলেছেন, “ওর ছোটবেলার কোচ আমাকে জানান যে তিতাস কতটা প্রতিভাবান। আমি পরে দেখলাম, সত্যিই তাই। পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি উচ্চতা ওর। শারীরিক ভাবেও শক্তিশালী। তাই জোরে বল করতে পারে। তবে সবচেয়ে ভাল লেগেছিল ওর সুইং এবং বাউন্সার দেওয়ার ক্ষমতা দেখে।” রবিবার পোচেস্ট্রুমেও তিতাসের বোলিংয়ের ঝলক দেখা গিয়েছে।
বাংলার শিবিরে যোগ দেন তিতাস। সিনিয়র দলেও সুযোগ পান। তার পরে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের দলে ডাক আসে। শিবশঙ্কর স্পষ্ট জানালেন, তিতাসের যা প্রতিভা তাতে ভবিষ্যতে দারুণ বোলিং অলরাউন্ডার হতে পারেন। বলেছেন, “তিতাস বিগ হিটার। বড় ছয় অবলীলায় মারতে পারে।”
ছোটবেলার কোচ প্রিয়ঙ্কর ছাত্রীর সাফল্যের আনন্দে প্রথমে কথাই বলতে পারছিলেন না। তবু বলেছেন, “খুব বুদ্ধিমান এবং শক্তিশালী। এটাই ওকে বাকিদের থেকে আলাদা করেছে। কঠোর পরিশ্রম করতে পারে। ক্রিকেট এবং পড়াশোনা দুটোই একসঙ্গে চালাতে পারে। স্প্রিন্টার হওয়ায় শারীরিক শক্তিও অনেকের থেকে ভাল।”
স্বচ্ছল পরিবার থেকে আসায় অর্থ কখনওই সমস্যা হয়নি তিতাসের কাছে। সঙ্গে পেয়েছেন বাবার সমর্থন। বাবা রণদীপ বলেছেন, “আমার মেয়েই সব পরিশ্রম করেছে। আমি শুধু ওকে পরামর্শ দিয়েছি। ভাবুন, আবহাওয়া যেমনই হোক, প্রতি সপ্তাহে ২২ কিলোমিটার দৌড়েছে। বাংলার হয়ে অনেক ভাল ভাল পারফরম্যান্স রয়েছে। গত মরসুমে সবচেয়ে বেশি উইকেট পেয়েছিল। জানতাম একদিন ও সাফল্য পাবেই।”
তিতাসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সিএবি সভাপতি অভিষেক ডালমিয়াও। বলেছেন, “আমরা যার পাশে দাঁড়িয়েছি এমন একজন ক্রিকেটার বিশ্বমঞ্চে সাফল্য পেয়েছে দেখে খুবই ভাল লাগছে। তৃণমূল স্তরের ক্রিকেট খেলে উঠে এসেছে এবং প্রত্যাশার দাম রেখে। আমি নিশ্চিত ওর ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। রিচা এবং তিতাস জাতীয় দলে থাকায়, বাংলার তরফে ক্রিকেটারদের জোগান স্বাভাবিকই রয়েছে। মহিলাদের আইপিএলের নিলামের আগে এটা ভাল খবর।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy