বার বার চোট পেয়েছেন হিটম্যান ফাইল চিত্র।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ভারতীয় দল রওনা হওয়ার ঠিক আগে চোট পেয়ে গোটা টেস্ট সিরিজ থেকেই ছিটকে গেলেন রোহিত শর্মা। নিছকই দুর্ঘটনা। সোমবার মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন করছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। ছিলেন রোহিতও। থ্রো ডাউন বিশেষজ্ঞ রঘুর একটি বল আচমকা লাফিয়ে উঠে রোহিতের গ্লাভসে লাগে। যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন তিনি। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে সুস্থ মনে হলেও পরে ব্যথা বাড়ে। শেষ পর্যন্ত সিরিজ থেকেই ছিটকে যান তিনি।
এই প্রথম নয়, আগেও বার বার চোট পেয়ে ভারতীয় দল থেকে ছিটকে গিয়েছেন রোহিত। এমনকী ২০১৫ সালে তাঁর বিশ্বকাপে খেলাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। কখনও দুর্ঘটনা, কখনও ফিটনেসের সমস্যা তাঁকে ভুগিয়েছে। গত সাত বছর ধরে নিয়ম করে চোট পেয়েছেন। নিজে ভুগেছেন। ভুগেছে ভারতীয় দলও।
রোহিতের প্রথম বড় চোট ২০১৪ সালে। সাত বছর আগের ইংল্যান্ড সফরে ভারত টেস্ট সিরিজে পর্যুদস্ত হয়েছিল। একদিনের সিরিজে প্রথম ম্যাচে খেলার পর রোহিত ডান হাতের আঙুলে চোট পান। হাড় ভেঙে যায়। বাকি সিরিজ থেকে বাদ হয়ে যান। দু’ মাস লাগে চোট সেরে সুস্থ হতে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজে প্রথম তিনটি ম্যাচ খেলতে পারেননি। ইডেনে চতুর্থ ম্যাচে দলে ফিরে ১৭৩ বলে ২৬৪ রানের বিশ্বরেকর্ড করা ইনিংস খেলেন।
পরের বছর ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শতরান করে শুরুটা দুর্দান্ত করলেও ফের চোট পান তিনি। হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পান। সামনেই বিশ্বকাপ ছিল। তার জন্য ঝুঁকি না নিয়ে সিরিজের বাকি তিনটি ম্যাচে রোহিতকে খেলানো হয়নি। ত্রিদেশীয় সিরিজে একটিও ম্যাচ জিততে পারেনি ভারত। বিশ্বকাপে দলে ফিরে ৩৩০ রান করেন রোহিত। তিনি ছিলেন ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
২০১৬ সালও ব্যতিক্রম নয়। ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে এশিয়া কাপে পকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে বাঁ পায়ের আঙুলে চোট পান। স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে নির্বাসিত থাকা মহম্মদ আমিরের সেটিই ছিল প্রত্যাবর্তন সিরিজ। তাঁর ইয়র্কার সামলাতে পারেননি রোহিত। এক্স-রে করে দেখা যায় হাড় ভাঙেনি। প্রতিযোগিতার বাকি ম্যাচেও খেলেন রোহিত।
সেই বছরই অক্টোবরে রোহিত এখনও পর্যন্ত তাঁর জীবনের সব থেকে বড় চোটটি পান। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে একদিনের ম্যাচে রান নিতে গিয়ে ডান উরুতে চোট পান রোহিত। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ থেকে ছিটকে যান। নভেম্বরে লন্ডনে অস্ত্রোপচার হয়। তিন মাস বিশ্রামে থাকতে হয়।
২০১৭ সালের মার্চে দেওধর ট্রফিতে খেলার সিদ্ধান্ত নেন রোহিত। কিন্তু হাঁটুতে চোট পেয়ে শুরুতেই ছিটকে যান। উরুর পরে হাঁটুর চোট রোহিতের ক্রিকেট জীবন প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়।
কিন্তু চোট সারিয়ে জুন মাসে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তিনি দলে ফেরেন। পাঁচ ম্যাচে ৩০৪ রান করে শিখর ধবনের পরে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন।
২০২০ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে শুরুতেই চোট পান রোহিত। পঞ্চম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে রান নিতে গিয়ে কাফ মাসলে চোট পান তিনি। এ বারের মতোই তখনও প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছিল, রোহিতের চোট গুরুতর নয়। কিন্তু তা বাড়তে থাকে। টেস্ট এবং একদিনের সিরিজ থেকে ছিটকে যান।
২০২০ সালে আইপিএল-এ ফের একবার চোট পান রোহিত। হ্যামস্ট্রিংয়ে চোটের জন্য গোটা অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে বাদ পড়েন। কিন্তু আইপিএল-এ বেশ কয়েকটি ম্যাচে না খেলার পরে চোট নিয়েই ফাইনালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে মাঠে নামেন। এই নিয়ে কম প্রশ্ন ওঠেনি। দুবাইতে আইপিএল শেষ হওয়ার পর দেশে ফিরে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে যান। শেষ পর্যন্ত তাঁকে টেস্ট দলে রাখা হয়।
অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে রোহিতের এই চোট নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন খোদ অধিনায়ক বিরাট কোহলীও। বলেন, তিনি বা দল রোহিতের চোট নিয়ে কিছুই জানেন না। তাঁদের কিছুই জানানো হয়নি।
এই বছরও রোহিত চোটমুক্ত থাকতে পারেননি। মার্চে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম একদিনের ম্যাচে কনুইতে চোট পান। গুরুতর ছিল না সেই চোট। সেই সিরিজেই ওভাল টেস্টে পঞ্চম দিন মাঠে নামেননি রোহিত। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করার সময় বাঁ হাঁটুতে চোট পান। সেই সফর অবশ্য ওই দিনই শেষ হয়ে যায়। কারণ, কোভিডের জন্য ভারত পঞ্চম টেস্ট না খেলেই আইপিএল খেলতে দুবাই চলে যায়। রোহিত আইপিএল খেলেন।
এ বারের চোট নিয়ে এখনও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। ফলে রোহিতকে কত দিন বাইরে থাকতে হবে, সীমিত ওভারের সিরিজে তিনি দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন কিনা, জানা নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy