অকপট: বিরাটের ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা দেখছেন না অরুণ। ছবি টুইটার।
অসম্মানজনক ভাবে অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়া বিরাট কোহলিকে আরও তাতিয়েই তুলবে বলে মনে করছেন তিনি। সাত বছর ধরে বিরাট সংসারে বোলিং কোচের দায়িত্ব যিনি সামলেছেন। ভারতীয় ক্রিকেটকে স্পিনের দেশ থেকে পেস ব্যাটারিতে পরিণত করার নেপথ্যে যাঁর সবচেয়ে বড় হাত। এক সময় কপিল দেবের বোলিং পার্টনার বি অরুণ বলছেন, ‘‘এই ধরনের সিদ্ধান্ত এক জন ক্রিকেটারকে দুমড়ে দিতে পারে। কিন্তু বিরাটের মতো শক্তিশালী মন আমি খুব কম দেখেছি। ভেঙে পড়ার কোনও সম্ভাবনা দেখছি না, বরং আমার মনে হয়, আরও তেড়েফুড়ে ওঠা বিরাটকেই দেখা যাবে।’’
গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক আকাশে বিরাটের উল্কার মতো উত্থান কাছ থেকে দেখেছেন অরুণ। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলছেন, ‘‘হার-না-মানা মানসিকতা, পরিশ্রম, অধ্যবসায় দিয়ে এই গ্রহের সেরা ব্যাটসম্যানদের এক জন হয়ে উঠেছে বিরাট। কঠিনতম পরিস্থিতিতে কী ভাবে সফল হতে হয়, তা ও অনেক বার দেখিয়েছে। বিদেশের মাঠে যে সব পারফরম্যান্স রয়েছে ওর, তা নতুন প্রজন্মের কাছে উজ্জ্বল উদাহরণ। বিরাট এক জন চ্যাম্পিয়ন। আর চ্যাম্পিয়নকে কখনও দমিয়ে রাখা যায় না।’’ এর পরেই তাঁর রায়, ‘‘একটা কথা বলে দিতে পারি। বিরাট কোহলির সবচেয়ে সেরা ক্রিকেট এ বার দেখা যাবে। তৈরি থাকুন।’’
এক নিঃশ্বাসে অরুণ অবশ্য এটাও বলছেন, ‘‘দু’ধরনের ক্রিকেটে দুই অধিনায়ক বেছে নেওয়া ভাল সিদ্ধান্ত। এতে দলের উপকারই হবে।’’ বিশেষ করে কোভিডের কঠিন সময়ে যে ভাবে বলয়ের মধ্যে সময় কাটাতে হচ্ছে, বাড়তি ধকল নিতে হচ্ছে, তাতে দায়িত্ব ভাগাভাগিতে উপকারই হবে বলে তাঁর ধারণা। নতুন অধিনায়ক রোহিত শর্মার কাছ থেকে কী প্রত্যাশা? অরুণের জবাব, ‘‘রোহিত অধিনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছে। তাই ওকে নিয়ে আশাবাদী তো বটেই। কোচ হিসেবে রাহুল দ্রাবিড়কেও পাচ্ছে। ভারতীয় ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাহুলের চেয়ে যোগ্য কেউ নেই। সঙ্গে দারুণ সব সহকারী কোচ আছে। আরও সব বড় শৃঙ্গ জয় করবে এই দলটা।’’
বোলিং কোচ হিসেবে তাঁর আমলে সেরা সিদ্ধান্ত যশপ্রীত বুমরাকে টেস্ট ক্রিকেটে নিয়ে আসা। যখন সকলে ধরে নিয়েছিল, সাদা বলের বোলার হিসেবেই থেকে যাবেন বুম বুম বুমরা। সেই কাহিনি শোনালেন অরুণ। ‘‘আমরা কলকাতায় ছিলাম। পুজোর উদ্বোধনে যাচ্ছিলাম। রবির (শাস্ত্রী) মাথায় ভাবনাটা আসে। ও বলার পরে গাড়ি থেকেই আমি বুমরাকে ফোন করি। বুম্স খুব উত্তেজিত হয়ে বলে, ওর জীবনের স্বপ্ন বিশ্বের সেরা ফাস্ট বোলার হওয়া। টেস্ট ক্রিকেটে ভাল করা।’’ যোগ করেন, ‘‘তারপরে আমরা ওকে জাতীয় অ্যাকাডেমিতে তৈরি হওয়ার জন্য পাঠাই। রবি বলে, একেবারে দক্ষিণ আফ্রিকায় ওকে মাঠে ছাড়া হবে। তার আগে গোপন অস্ত্র হিসেবে তৈরি করি আমরা।’’
আগামী দিনের গতির মুখ কারা? অরুণ তিনটি নাম করলেন। ‘‘মহম্মদ সিরাজের দিকে নজর রাখুন। এই ছেলেটা দুনিয়া শাসন করবে। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ রয়েছে। নবদীপ সাইনি রয়েছে। ভারতীয় পেস বোলিংয়ের স্বর্ণযুগ চলবে।’’ তাঁদের মেয়াদে বিতর্কও কম হয়নি। যেমন অশ্বিনকে ক্রমাগত বাইরে রাখা নিয়ে কাজিয়া চলতে থাকা। অরুণের যুক্তি, ‘‘দলের স্বার্থে যে একাদশ খেলানো ঠিক মনে হয়েছে, সেটাই সব সময় বেছে নেওয়া হয়েছে। এবং যখনই কোনও ক্রিকেটারকে বাইরে রাখতে হয়েছে, তাকে সম্পূর্ণ ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, কেন এই সিদ্ধান্ত। বাইরে বসতে হলে কোনও ক্রিকেটার খুশি হয় না। তাই হতাশা থাকবেই, সেগুলোও বুঝতে হবে।’’
ইংল্যান্ডে একের পর এক টেস্টে উপেক্ষা করা হচ্ছিল অশ্বিনকে। কেন? সরাসরি জানতে চাওয়ায় সদ্য প্রাক্তন বোলিং কোচের উত্তর, ‘‘ইংল্যান্ডের পরিবেশে যে কম্বিনেশন আমরা চাইছিলাম, তাতে অশ্বিনকে রাখা যাচ্ছিল না। সেটা ওকে আমরা বুঝিয়ে বলেছিলামও। ব্যক্তি নয়, দলের কথা ভাবা হয়েছিল।’’ চেন্নাই স্পিনারকে বহু দিন ধরে কাছ থেকে দেখা অরুণের মন্তব্য, ‘‘অশ্বিন ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তি। আমার কাছে বিশ্বের সেরা বোলারদের এক জন। বল হাতে যে কোনও দলের বিরুদ্ধে, যে কোনও ব্যাটসম্যানকে শাসন করতে পারে। কারও কাছে কিছু প্রমাণ করার নেই অশ্বিনের। ওর সবচেয়ে যেটা দেখার মতো ব্যাপার হচ্ছে, যখনই রিংয়ে ঠেলে দেবে চ্যালেঞ্জটা নিয়ে ভাল করে দেখিয়ে দেবে। সেই কারণেই বাইরে বসতে হলেও যখনই সুযোগ পেয়েছে, সফল হয়ে দেখিয়েছে ও।’’ অশ্বিনের প্রতি কি অন্যায় হয়েছে? তাঁর জবাব, ‘‘ঠিক-বেঠিক, ন্যায়-অন্যায় নিয়ে মন্তব্য করার আমি কেউ নই। শুধু বলতে পারি, আমরা দলের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’’
২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হারের পরেই অশ্বিনদের পিছিয়ে পড়া শুরু। সেই ম্যাচে অশ্বিন-জাডেজা মিলে প্রায় ১৭০ রান দিয়েছিলেন। এর পরেই ভারতীয় ক্রিকেটে কুল-চা জুটির আবির্ভাব। শাস্ত্রী, অরুণরা দ্বিতীয় ইনিংসের জন্য ফেরত এসে নিয়ে আসেন কুলদীপ যাদব এবং যুজ়বেন্দ্র চহালকে। তার পরে কী করে কুলচা হারিয়ে গেল? অরুণ বললেন, ‘‘ক্রিকেটে এ রকম হয়ই। সেই সময়ে ফিঙ্গার স্পিনারদের (যারা আঙুলের সাহায্যে স্পিন করান) খারাপ সময় যাচ্ছিল। রিস্টস্পিনারদের (যারা কব্জির ব্যবহারে স্পিন করান) প্রভাব দেখা গিয়েছিল। এখন ফিঙ্গার স্পিনারেরা ফিরছে।’’ যোগ করেন, ‘‘চহাল দারুণ ভাবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। মানসিক ভাবে খুব শক্তিশালী থেকে ঝড়-ঝাপ্টার মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসেছে। আইপিএলেও ভাল বল করেছে। ও খুব চিন্তাশীল বোলার। আত্মবিশ্বাস হারায়নি। আর কুলদীপ অসামান্য এক প্রতিভা। ও ফিরে আসবে। ভবিষ্যতে কুলদীপের থেকে দারুণ সব ম্যাচ জেতানো স্পেল দেখতে পাব আমরা।’’ কুলদীপের কোথায় সমস্যা হল? কেন এ ভাবে হারিয়ে গেলেন তিনি? অরুণের পর্যবেক্ষণ, ‘‘ফর্ম হারিয়ে আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি দেখা দেয় কুলদীপের। তবে আবার বলছি, কুলদীপ দেশে-বিদেশে ইতিমধ্যেই নিজেকে প্রমাণ করেছে। ওকে মানসিক ভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠতে হবে। আমি নিশ্চিত, দারুণ ভাবে ফিরে আসবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy