৫০ ওভারের বিশ্বকাপের পরে এ বার কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপও ইংল্যান্ডের। রবিবার মেলবোর্নে ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে ট্রফি জিতে উল্লাস জস বাটলারদের। ছবি: রয়টার্স।
২০১৬ সালে বিশ্বকাপ ফাইনালের শেষ ওভার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জিততে বাকি ১৯ রান। অইন মর্গ্যান বল তুলে দিয়েছিল বেন স্টোকসের হাতে। ইডেনে সে দিন শেষ ওভারের আগেই ইংল্যান্ড সমর্থকেরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার উৎসব শুরু করেছিল। কার্লোস ব্রেথওয়েট পরপর চারটি ছয় মেরে বিপক্ষ শিবিরের সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেয়। মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে বসে পড়ে স্টোকস। সান্ত্বনা দিতে আসেন কোচ ট্রেভর বেলিস।
সেই রাতটাই হয়তো ওকে পুনর্জন্ম দিয়ে গেল। ২০১৯-এ লর্ডসে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের ফাইনালে একাই ব্যাট হাতে দলকে লড়াই করার লক্ষ্য দিয়েছিল। হেডিংলেতে অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শেষ উইকেটে সেঞ্চুরি করে ইংল্যান্ডকে অবিশ্বাস্য ম্যাচ জিতিয়েছিল। রবিবার মেলবোর্নে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত পিচ কামড়ে পড়ে থেকে ইংল্যান্ডকে আরও একটি বিশ্বকাপ জেতাল এই তারকা অলরাউন্ডার। স্টোকসের স্মৃতিতে নিশ্চয়ই ফিরে আসবে সেই রাতের ভয়াবহ দৃশ্য। গণমাধ্যমে এতটাই স্টোকসকে আক্রমণ করা হয়েছিল যে, বেশ কয়েক দিন নিজেকে গৃহবন্দি করতে বাধ্য হয়েছিল সে। কিন্তু মেলবোর্নে ৪৯ বলে অপরাজিত ৫২ রানের ইনিংস আরও এক বার প্রমাণ করে দিল, ইংল্যান্ডের সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারের নাম বেন স্টোকস। ওর ইনিংস শেখাল, টি-টোয়েন্টি শুধুমাত্র বিগহিটারদের খেলাই নয়। ধৈর্যের সঙ্গে ব্যাট করার ফল এখনও পাওয়া যায়।
সেমিফাইনাল ও ফাইনাল যে ভাবে ইংল্যান্ড খেলেছে, তাতে নির্দ্বিধায় বলে দেওয়া যায়, তারাই এ বারের যোগ্য চ্যাম্পিয়ন। জস বাটলার ইংল্যান্ডকে দল হিসেবে ঐক্যবদ্ধ করেছে। অথচ অধিনায়ক হিসেবে শুরুর দিকে বেশ কয়েকটি ম্যাচ হেরে আসন খোয়াতে বসেছিলেন বাটলার। তার মুকুটে এ বার যোগ হল বিশ্বকাপের পালক।
মেলবোর্নের পিচে সব সময়ই বোলাররা বেশি প্রাধান্য পায়। টস জিতে তাই ব্যাট করার ঝুঁকি নেয়নি ইংল্যান্ড অধিনায়ক। মহম্মদ রিজ়ওয়ান ১৪ বলে ১৫ রান করে আউট হতেই পাওয়ার প্লেতে পিছিয়ে পড়ে পাকিস্তান। দ্রুত রান করার সাহস দেখাতে পারেনি বাবর আজ়ম। স্যাম কারেন, ক্রিস ওকস ও বেন স্টোকসের সুইং বোঝার আগেই ছয় ওভার চলে যায়। এক উইকেট হারিয়ে মাত্র ৩৯ রান ওঠায় চাপ বাড়তে থাকে বাবরের উপরে। তাতেই মনঃসংযোগ নষ্ট হয় অধিনায়কের। আদিল রশিদের গুগলির নাগাল না পেয়ে কাট করতে গিয়ে বিপদে পড়ল পাক অধিনায়ক। ২৮ বলে ৩২ রানের ইনিংস খেলে ফিরে যেতে হয় তাকে। ঠিক যে মুহূর্তে অধিনায়কের ব্যাট থেকে দ্রুত রান আশা করছিল পাকিস্তান, তখনই বাবরকে ফিরিয়ে দেয় রশিদ।
অধিনায়কের উইকেট বড় ধাক্কা দিয়ে যায় পাক শিবিরে। শান মাসুদ ও শাদাব খানের জুটি দলকে কিছুটা ম্যাচে ফেরানোর চেষ্টা করলেও শেষমেশ ব্যর্থ হয়েছে। বাটলারের অসাধারণ ফিল্ড প্লেসিংয়ে প্রত্যেকটি ক্যাচ জমা হয় হাতে। মেলবোর্ন বড় মাঠ। তাই বাউন্ডারি লাইনের তিন-চার গজ আগে ফিল্ডারদের দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। তাদের হাতেই একের পর এক ক্যাচ এসে পড়ে। মাত্র ১৩৭-৮ স্কোরে আটকে যায় পাকিস্তান। তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা স্যাম কারেন। দু’টি করে উইকেট নেন ক্রিস জর্ডান ও আদিল রশিদ। যা মাত্র এক ওভার বাকি থাকতে তোলে ইংল্যান্ড।
প্রতিযোগিতা জুড়ে বাটলার যে ভাবে রশিদকে ব্যবহার করেছে, তা দেখে অনেকেরই শেখা উচিত। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই যে টেনে টেনে বল করতে হবে, তার অর্থ নেই। স্বাভাবিক ফ্লাইট দিয়ে বল করেছে রশিদ। ব্যাটারকে মারার আহ্বান জানিয়েছে। সেই ফাঁদেই পা দিয়েছে বাবর, মহম্মদ হ্যারিসরা।
১৩৮ রানের লক্ষ্য হলেও ইংল্যান্ড যে সহজে এই ম্যাচ জিতবে না, জানতাম। পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণ এই বিশ্বকাপের সেরা। অ্যালেক্স হেলস কাঁটা আমরা তো উপড়ে ফেলতে পারিনি। ভিতরের দিকে আসা বলেই যে ও পরাস্ত হয়, সেই আন্দাজ ছিল শাহিনের। পাকিস্তান সুপার লিগে এ ভাবেই হেলস বিপদে পড়ত। সেই ভিতরের দিকে আসা বলেই বোল্ড হয়ে ফিরল হেলস। পাওয়ার প্লের মধ্যেই বাটলার, সল্টকেও হারায় ইংল্যান্ড। ১৩ নম্বর ওভারে ফিরে যায় হ্যারি ব্রুক। স্টোকস শুধুই ক্রিজ়ে দাঁড়িয়ে ছিল। চাপের মুহূর্তে বড় শট নেওয়ার ঝুঁকি নেয়নি। শেষ পাঁচ ওভারে যখন বাকি ৪১ রান, শাহিনের হাতে বল তুলে দেয় বাবর। ব্রুকের ক্যাচ নিতে গিয়েই হাঁটুতে চোট পেয়েছিল শাহিন। ১৬তম ওভারের প্রথম বল করার পরে সে বুঝতে পারে, তার পক্ষে আর বাকি ওভার করা সম্ভব নয়।
শাহিন ডাগ-আউটে ফিরে যেতেই স্টোকসের বিধ্বংসী রূপ ফুটে উঠল। ইফতিখার আহমেদের শেষ দুই বলে চার ও ছয় হাঁকিয়ে দলের চাপ হাল্কা করে দেয় স্টোকস। পরের ওভারে তিনটি চার মেরে মইন আলি লড়াই থেকেই বার করে দেয় পাকিস্তানকে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া শুধুই ছিল সময়ের অপেক্ষা। ১৯তম ওভারের শেষ বলে এক রান নিয়ে ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ তুলে দিল স্টোকস। মাত্র তিন বছরের মধ্যে দেশকে দু’টি বিশ্বকাপ জেতানো অলরাউন্ডারকে কেন সর্বকালের সেরা বলা যাবে না?
অস্ট্রেলিয়ায় এ বারের বিশ্বকাপ কিন্তু শুধুমাত্র ব্যাটারদের গেম ছিল না। টি-টোয়েন্টিতে বোলাররাও যে বড় ভূমিকা পালন করে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল মেলবোর্ন, অ্যাডিলেড, ব্রিসবেনের মতো মাঠগুলো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy